সাতক্ষীরায় ৩৩ কিমি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ, আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরায় ৬৭৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩৩ কিমি বাঁধ ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলের মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতাধীন সাতক্ষীরা জেলায় ৬৭৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ২১টি পয়েন্ট বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১-এর অধীনে ছয়টি পয়েন্টে তিন কিলোমিটার ও বিভাগ-২-এর অধীনে ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী সাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি সেটি হয়, সেই ঘূর্ণিঝড় ৩০ মে নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় যদি সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত নাও হানে, তবুও এর প্রভাবে নদনদীতে পানির চাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আর পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে। তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নদীভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে রবিবার ভোর থেকে সাতক্ষীরায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে।
উপকূলের বাসিন্দা আশাশুনির বিছট গ্রামের আব্দুল হাকিম মোড়ল জানান, পাউবো বিভাগ-২-এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে বিছট খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খুই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন সকালে স্কুলের কিছুটা দূরে বেড়িবাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্তমানে বিছট গাজীবাড়ি, সরদারবাড়ি ও মোড়লবাড়ির সামনের বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই তিনটি পয়েন্টে মেরামতের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ফলে এই তিনটি পয়েন্টে বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। তিনি বলেন, খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ারের সঙ্গে একটু জোরে বাতাস হলেই এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাবে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানোর পরও তারা এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি দ্রুত এই বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করার দাবি জানান।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, যে কোনো আপত্কালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। অমাদের ৭৫টি জিও টিউবের পাশাপাশি ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টেগুলো আমাদের স্পেশাল কেয়ারে আছে। এছাড়া আমরা জিও ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুত করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য আমাদের বিভাগে ২০ হাজার জিও ব্যাগের পাশাপাশি ১৫টি জিও রোল মজুত রয়েছে। কোনো স্থানে সমস্যা হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর নজর রাখা হবে বলে জানান তিনি।