সদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারীর বিপন্নতা কর্মশালা

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরায় বেইজিং+ ৩০ জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারীর বিপন্নতা বিশ্লেষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরীতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জেলা শাখা আয়োজনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় মহিলা পরিষদের সভাপতি আঞ্জুমানারা বেগমের সভাপতিত্বে অতিথি ছিলেন মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় শাখার লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা, সাতক্ষীরা মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ, মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় শাখার পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার কেয়া রায় প্রমুখ।

মহিলা পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জোৎন্স্যা দত্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবুল, সিডোর নির্বাহী পরিচালক শ্যামল বিশ্বাস, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সদস্য আজমিরা খাতুন প্রমুখ। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ জন নারী অংশগ্রহণ করেন।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কারণে উপকূলীয় এলাকার নারীদের জরায়ু ক্যানসার হচ্ছে। এতে নারীরা পরিবারে গুরুত্ব হারাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে। এতে আমার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কিন্তু আমার কোন ক্ষতিপূর পাচ্ছি না। এর বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে।

বক্তরা আরও বলেন, দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে কিশোরী ও নারীরা নিরাপদ গোসল ও টয়লেটের অভাবে দুর্ভোগে পড়ে এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়, যা প্রায়ই লোকলজ্জার ভয়ে অপ্রকাশিত থাকে। গর্ভবর্তী ও মাতৃদুগ্ধ দানকারী নারীরা বিপদাপন্ন অবস্থায় থাকে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১-১.৫ কোটি মানুষ বড় বড় শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আইলা, নদী ভাঙন ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাতক্ষীরার বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে ঢাকা ও খুলনার মতো শহরে আশ্রয় নিয়েছে। এসব উদ্বাস্তুর মধ্যে নারীরা বস্তিতে বসবাস করে এবং গার্মেন্টস, ইটভাটা ও গৃহকর্মীর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়। তারা কম মজুরি, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়।

বর্তমান বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীরা এই বিপর্যয়ের কারণে সবচাইতে বেশি ক্ষতি এবং দুর্ভোগের শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নারী এবং পুরুষের উপর ভিন্ন ভিন্নভাবে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়, অতিবন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাসসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগকালেও প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নারীকেই পানি সংগ্রহ, জ্বালানি সংগ্রহ, পরিবার-পরিজনের খাদ্য ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব পালন করতে হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ ৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট অঞ্চলকে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচাইতে বেশি ঝুঁকিগ্রস্ত। জলবায়ু উদ্বাস্তু স্বামীরা কাজের সন্ধানে অন্য এলাকায় যেয়ে বিয়ে করে। পরিবারকে নিয়ে সেখানে বাস করে আর উপকূলীয় এলাকায় থাকা পরিবারটি বিপদে পড়ে।

নারীরা বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীরা নানা ধরণের সমস্যায় তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া, যৌন হয়রানি, যৌন সহিংসতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও কন্যাদের প্রাত্যহিক জীবনে সৃষ্টি হয় বহুমাত্রিক বিপন্নতা। এই বিপন্নতা থেকে নারীদের মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা, নীতি নির্ধারকদের স্বদিচ্ছা, পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক পরিকল্পনা গ্রহণ, নীতিমালা প্রণয়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ। পরিবেশ সুরক্ষা এবং পরিবেশ বিপর্যয় রোধে নারীদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে ল্যাগনো জরুরী। দেশের সকল আন্দোলনে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পারছেনা। সাতক্ষীরা ভূমিহীন আন্দোলন নারীরা ভূমিকা পালন করেছে। পরে তাদের আর ভূমিকা থাকে না। নারীরা ক্ষমতায়িত হলে পরিবেশও সুরক্ষিত হবে। এজন্য নারীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *