কালিগঞ্জসাতক্ষীরা জেলাস্বাস্থ্য

কালিগঞ্জে আহাম্মদ আলী স্বপ্নে পাওয়া ক্যান্সারের ঔষধ….

তাপস কুমার ঘোষ, কালিগঞ্জ: বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’ এমন প্রবাদে মিলছে মুক্তি। স্বপ্নে পাওয়া গাছের চিকিৎসায় মিলছে মরণ ব্যাধি ক্যান্সার সহ সব ধরনের কঠিন রোগ থেকে মুক্তি। এমন প্রচারণার বিশ্বাসে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারুলগাছা গ্রামে জমে উঠেছে আহমাদ আলী গাজী নামে এক কথিত কবিরাজের স্বপ্নে পাওয়া পাতার রস দেওয়ার জমজমাট কারবার। পারুল গাছা গ্রামের মৃত ছদর আলী গাজীর পুত্র কথিত কবিরাজ আহমদ আলী গাজীর (৬৪) বাড়িতে সপ্তাহে ৩ দিন ছুটছেন । এক শ্রেণীর সাধারণ ও সহজ সরল প্রকৃতির মানুষের বিশ্বাস ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে চলছে বিনা ফিতে ওই কারবার । বিষয়টিকে সচেতন মহল এক প্রকার প্রতারণা ও ভন্ডামি বলে ভাবলেও কথিত কবিরাজের বিরুদ্ধে কোন টাকা-পয়সা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি । অন্যদিকে এ বিষয়ে এখনো গড়ে ওঠেনি সামাজিক প্রতিরোধ । সেই সাথে কোন পদক্ষেপ নেয়নি উপজেলা প্রশাসন । জানা যায় গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আহাম্মাদ আলী কোন এক রাতে স্বপ্নে দেখে যে একটি গাছের পাতার রস খেলে ক্যান্সার ভালো হয়ে যাবে । সেই থেকে স্বপ্নে পাওয়া গাছের পাতার রস নিতে কথিত কবিরাজ আহমদ আলী গাজীর বাড়িতে বোতল নিয়ে ছুটছে আর তাতেই ভালো হচ্ছে ক্যান্সার সহ সকল রোগ থেকে মুক্তি । এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে জেলা, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় । ফলে বোতল নিয়ে শহর থেকে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ছুটছেন । মানুষ যেভাবে পাচ্ছে সেভাবে ভিড় করছে ওই কবিরাজের বাড়িতে। মানুষের ভিড় ঠেকাতে হিমশিম খাওয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান চৌকিদার ও দফাদার দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এজন্য বাড়ির সামনে দেওয়া হয়েছে বাশের বেড়া । শুধু তাই নয় কবিরাজের নিকট পৌঁছাতে হলে ধরতে হবে দীর্ঘ লাইন । সূর্য ওঠার পর থেকে শুরু হয় গাছের পাতার রস খাওয়ানো চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত । রবিবার বেলা ১১ টায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায় কথিত কবিরাজ আহমদ আলী গাজীর বাড়িতে দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের হাজার হাজার নারী-পুরুষ সাইকেল ,মোটর সাইকেল, ভ্যান, ইঞ্জিন ভ্যান ,ইজিবাইক ,মাইক্রো ,প্রাইভেট সহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে সমস্যা দেখাতে আসা উৎসুক মানুষের ভিড় । সেবা নিতে আসা কৃষ্ণনগরের মরিয়ম বেগম (৫৫) সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় জানান মানুষের মুখে মুখে শুনেছি এখান থেকে ৩ দিন ঔষধ খেলে যে কোন একটি রোগ থেকে মুক্তি পায় এজন্য আমরাও এসেছি। মথুরেশপুর থেকে বুকের ব্যথা নিয়ে আসা লাভলী বেগম ( ৪৫) বলেন, আমার বাড়ির পাশে এক ভাবীর কাছে শুনে আহাম্মদ কবিরাজের বাড়িতে এসেছি। স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম, জাহিদুর ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম সহ অনেকেই বলেন, আমরা এই স্বপ্নে পাওয়া গাছের পাতার রস সেবন করে আমাদের রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি এবং আমাদের আত্মীয়-স্বজন যারা আছে তাদেরকে এ বিষয়টি বলেছি। দেবহাটা আমার বহেরা গ্রামের মাহবুবুর রহমান ও এসেছেন তারা আত্মীয়র জন্য ক্যান্সারের ওষুধ নিতে তবে রোগী ছাড়া ওষুধ খাওয়ানো হয় না জেনে তিনি মন খারাপ করে চলে যান । সাতক্ষীরার মাগুরা গ্রামের তুলসি দাস নামের এক ব্যক্তি ক্যান্সারের ওষুধের জন্য রোগী নিয়ে না আসায় ফেরত যেতে হয়। কবিরাজ আহমদ গাজী বিনা মূল্যে ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ বলছে এই ঔষধ সেবন করে এখন ভালো আছি । বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চাচাই গ্রামের আফসার উদ্দিন বলেন আমার জানামতে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকের কাছে শুনেছি এবং আমি নিজেই একটি রোগের কথা স্মরণ করে এই গাছড়া ঔষধ সেবন করেছিলাম এখন ইনশাল্লাহ আমি সুস্থ। এ ব্যাপারে কথিত কবিরাজ আহাম্মদ গাজীর সাথে কথা বললে তিনি দাবি করেন, আমি একজন দিনমজুর এবং আমি বাড়িতে বসে ঝুড়ি, আটল, পাটা তৈরি করি। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কোন এক রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পাই একটি ছোট লতা গাছের পাতা বেটে রস বের করে খাইলে মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে মুক্তি মিলবে। বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য একজন ক্যান্সার রোগীকে স্বপ্নে পাওয়া ওই গাছের রস খাওয়ালে সে ভালো হয়ে যায়। সেই থেকে আমি বিনামূল্যে স্বপ্নে পাওয়া গাছের রস বিতরণ করে আসছি। তবে আমি না চাইলেও অনেকে খুশি হয়ে আমার এখানে ৫/১০ টাকা ফেলে রেখে যায়। এ খবর এলাকায় জানাজানি হয়ে পড়লে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আমার এখানে সপ্তাহে ৩ দিন গাছের পাতার রস নেওয়ার জন্য ভিড় জমাতে থাকে। প্রতিদিন ঔষধি গাছের পাতা বাটার রস ৬০ লিটার পানির সাথে মিশ্রণ করে বিতরণ করলেও প্রতিদিন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান স্বপ্নে পাওয়া গাছের পাতার রস খাওয়ার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার লোক সমাগম হচ্ছে । বিষয়টি সামাল দিতে আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রাম্য পুলিশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান । উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার( ভূমি) অমিত বিশ্বাসের মুঠো ফোনে রিং দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *