কালিগঞ্জে অপহরণ, ধর্ষণের মামলা তুলতে বাদীকে খুনের হুমকি
স্টাফ রিপোর্টার: প্রবাদে আছে “ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে” তেমনি নিজের পাতানো ফাঁদে নিজে পড়ে স্ত্রী হন্তারক, নারী লিপ্সু যমুনা ক্লিনিক মালিক বগা শরিফুল ইসলাম এখন দ্বারে দ্বারে কেঁদে বেড়াচ্ছে । এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রীর দায়ের করা মামলায় আদালত থেকে অন্তঃবর্তী কালীন জামিনে এসে বাঁদিকে মামলা তুলে নিতে খুন ,জখমের হুমকির ঘটনায় ক্লিনিক মালিক আসামি শরিফুল , আসমা বাহিনীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ।
বাদীর পিতা সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের ছনকা গ্রামের শেখ আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২ জানুয়ারি সাতক্ষীরার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং পিটিশন ৫/২০২৫ ।
দীর্ঘ ২ যুগ ধরে উপজেলার ছনকা গ্রামের শেখ আব্দুর রহমানের পুত্র যমুনা ক্লিনিক মালিক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে তার চাচা শেখ লুৎফর রহমান এবং চাচাতো ভাই শেখ আমিরুল ইসলাম গংয়ের সঙ্গে পারিবারিক ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে ।
এ বিরোধকে পুঁজি করে মামলাবাজ শরিফুল ইসলাম তার চাচা এবং চাচাতো ভাই , ভাইপোর নামে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ প্রচেষ্টা, চাঁদাবাজি , মারামারি সহ একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।
মামলাগুলো থানা, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, জেলা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের তদন্তে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা । তার এই মিথ্যা মামলার হয়রানিতে জর্জরিত হয়ে গ্রামবাসী খুলনা বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের (ডিআইজি) নিকট ২০২১ সালের ১২ জুলাই মামলাবাজ শরিফুল বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে । অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রহমানকে নির্দেশ দেন।
২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্তে শতভাগ প্রমাণিত হওয়ায় জনসমক্ষে উত্তম মাধ্যম দিয়েই রেহাই দেয় । এরপরও থেমে থাকেনি মামলা বাজ শরিফুল। এরপর তার চতুর্থ স্ত্রী আসমা খাতুন ওরফে বিথীকে বাদী করে ২০২১ সালের ১৬ জুন ভাই আমিরুলের চাকরিচ্যুত করার জন্য তাকে আসামি করে সাতক্ষীরার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি ধর্ষণ প্রচেষ্টা মামলা দায়ের করে । মামলা নং এসটি ২৭৮/২১ ।
মামলাটি প্রথমে তদন্তের জন্য কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন । উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সত্যতা না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ।ওই সময় ধুরন্ধর শরিফুল ইসলাম নিজের স্ত্রীকে দিয়ে নারাজি দিয়ে পুনরায় সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ইউনিটে তদন্ত নেয়। সেখানেও সত্যতা না পেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে । এত ক্ষান্ত না হয়ে পুনরায় মামলাটি নারাজি দিয়ে আদালতে চলমান রেখেছে। এরপরও চক্রান্ত করে পুরো পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ের পিছে এলাকার কিছু বখাটে ছেলে লেলিয়ে দেয় এবং নিজে সব কিছুর সহায়তা করে আসছিল । যার ফলশ্রুতিতে ছনকা গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাও সাবেক সেনা সদস্য শেখ আবদুল্লাহর পুত্র যশোর পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী বখাটে ইব্রাহিম খলিলকে কথিত প্রেমিক সাজিয়ে ক্লিনিক মালিক শরিফুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী আসমা খাতুনের সহায়তায় পোষ্য বাহিনীর সদস্য একই গ্রামের জাফর ইকবালের পুত্র হাবিবুল্লাহ, চরদহ গ্রামের শেখ আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র শাহাদাত হোসেনকে সাথে নিয়ে গত ১৬ জুন ২০২৪ ইং তারিখে বিকাল ৩ টার দিকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে জোরপূর্বক তার কন্যাকে অপহরণ করে অস্ত্রের মুখে সাতক্ষীরার বকচরা এলাকার ম্যারেজ রেজিস্টার হোসাইন আলীর মাধ্যমে বিবাহ দিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে গত ২৭/১১/২০২৪ ইং তারিখে সাতক্ষীরার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ৯(১)( ৩২) ধারায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে । পিটিশন ৬১৭/২৪ নং একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি বিজ্ঞ আদালত এজাহার হিসেবে গণ্য করে আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন ।
উক্ত নির্দেশে গত ১৩ ডিসেম্বর কালিগঞ্জ থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়। মামলা নং ৭। এরপর দীর্ঘ পলাতক থাকার পর গত ৩০ ডিসেম্বর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পুলিশ রিপোর্ট না যাওয়া পর্যন্ত মূল হোতা ক্লিনিক মালিক শরিফুল ও তার স্ত্রীকে অন্তবর্তী কালীন জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে বাড়িতে এসে বাঁদি এবং তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত জীবননাশের হুমকি দিয়ে চলেছে । এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কে এই শরিফুল ইসলাম ?
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্র , ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র ও বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায় শরিফুল ইসলাম নাজিমগঞ্জ বাজারে যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেওয়ালে সাতক্ষীরার বহুল প্রচারিত একটি পত্রিকার সাইনবোর্ডের আড়ালে নিজেকে কখনো ডাক্তার, কখনো সাংবাদিক, কখনো আইনজীবী পরিচয় দিয়ে নানান অসামাজিক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে । বর্তমান সে নাজিমগঞ্জ বাজারে যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছে । ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে সেখানে বিভিন্ন যুবতী মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোও জরিমানা দেওয়ার নজির রয়েছে ।
কথিত ডাক্তার শরিফুল ইসলাম প্রথমে উত্তর কালিগঞ্জ সার্জিক্যাল ক্লিনিকে একজন কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে যেয়ে পাইকাড়া গ্রামের সেলিনা নামের ১ সেবিকার সঙ্গে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাকে বিতাড়িত করে কর্তৃপক্ষ ।
পরে সে নিজে কালীগঞ্জ থানা রোডে জনৈক সালাউদ্দিনের বাড়ি ভাড়া নিয়ে যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নাম দিয়ে নিজে ক্লিনিক ব্যবসা শুরু করে ।
সেখানে ব্যবসা শুরুতেই উভাকুড় গ্রামের প্রবাসীর এক সুন্দরী হিন্দু গৃহবধূকে সেবিকা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুন জানতে পেরে ক্লিনিক এসে অনশন ও মারপিট করলে ওই সেবিকাকে তাড়িয়ে দেয় ।
পরে কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে গর্ভপাত ঘটনা কে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর তোপের মুখে স্থান ত্যাগ করে নাজিমগঞ্জ বাজারে সরকারি পেরি পেরি জায়গার উপর স্থায়ীভাবে ক্লিনিক ব্যবসা চালিয়ে আসছে ।
উক্ত ক্লিনিকে তারালি গ্রামের এক সুন্দরী নার্সকে নিয়োগ দিয়ে তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে অন্তঃসত্বার ঘটনায় তার চাচা শেখ লুৎফর রহমানের মধ্যস্থতায় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রেহাই পায় । পরে পানিয়া গ্রামের নুরুন্নেছা নামে এক সেবিকাকে নিয়োগ দিয়ে তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে গোপনে বিয়ে করে ।
বিষয়টি তার স্ত্রী রাজিয়া জানতে পেরে ক্লিনিকে এসে প্রতিবাদ করলে স্ত্রী রাজিয়াকে গত ২০/১০/২০১৬ ইং তারিখে রাতে পিটিয়ে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দেয় । উক্ত ঘটনায় তার শ্বশুর মৌতলা গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন বাদী হয়ে শরিফুল, পরকীয়া প্রেমিকা নুরুন্নেছা সহ ৬ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধনী ৩ এর ১১ (ক )৩০ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে । কালিগঞ্জ থানার মামলা নং ১০ ।
পরে ১৬ লক্ষ টাকায় মামলাটি মীমাংসার নামে দফারফা করে । পরবর্তীতে সাতক্ষীরার মাগুরা গ্রামের রোজিনা খাতুন নামে এক যুবতীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে বিয়ে করে । পরে তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে তালাক দেয় । এর মাস ছয়েক পরে হোগলা গ্রামের আজিবুর রহমানের মেয়ে একই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আইয়ুব আলীর স্ত্রী আসমা খাতুন ওর বিথি কালিগঞ্জ বাজার গ্রামের কাজী আল মামুনের বাসায় ভাড়া থাকতে শরিফুল সেখানে গোপনে পরকীয়ায় জড়িয়ে যত আদ মেলামেশা করতে থাকে । বিষয়টি লোক জানাজানি হয়ে গেলে প্রবাসী স্বামীকে তালাক না দিয়ে শরিফুলের বাড়িতে যেয়ে ওঠে ।
সেখানে শরিফুল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে আসমা ট্রিপল ৯৯৯ ফোন দিলে থানা হতে তৎকালীন ওসি দেলোয়ার হোসেন এবং এস,আই জিয়ারত আলী বাসায় যেয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গ্রেফতার করে। অবস্থা বেগতিক দেখে ওসিকে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে আসমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে যাত্রায় রেহাই পায় ।
পরে আসমাকে বিয়ে করে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বর্তমান ঘর সংসার এবং নিজের মিথ্যা মামলায় ব্যবহার করে আসছে । আর এই চতুর্থ স্ত্রী কে ব্যবহার করে এলাকার সহজ, সরল ,নিরীহ ব্যক্তিদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন ধর্ষণ প্রচেষ্টা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসলেও তার নামে রয়েছে একাধিক সহিংস মামলা।
বর্তমান নিজের তৈরি করা ফাঁদে নিজে পড়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিষয়টি নিয়ে এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।