সাতক্ষীরার বিডিএফ প্রেসক্লাবের বনভোজনে সুধীজনদের মিলন মেলা
আব্দুল হাকিম/মেহেদী হাসান শিমুল: নির্ভিক কলম সৈনিকদের প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার বিডিএফ প্রেসক্লাবের বার্ষিক বনভোজন শুক্রবার বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের কলাগাছিয়ায় সাংবাদিক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সুধীজনদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়ক পথে সুন্দরবন এই স্লোগানকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা সদরের বিডিএফ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এ বছর সুন্দরবনে বনভোজনের আয়োজন করা হয়।পূর্ব নির্ধারিত সময়ানুযায়ী শুক্রবার কাকডাকা ভোর থেকে বিডিএফ প্রেসক্লাব চত্তর সাংবাদিক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। যদিও আগে থেকে নির্ধারণ করা বনভোজনের টিম লিডার বিডিএফ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মো. আরশাদ আলীর হঠাৎ মিনি স্ট্রোকজনিত কারণে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরে যাত্রা শুরু করা হয়। কিন্তু আমাদের সব প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া সফরসঙ্গী অত্যন্ত দক্ষ বাসচালক আব্দুস সালাম যথাসময়ে আমাদের গন্তব্য স্থলে পৌছে দেন।
সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সভাপতি বেলাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এবং উপকূলীয় প্রেসক্লাবের আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে সেখানকার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাগত জানিয়ে সাথে থেকে পুরো প্রোগ্রামকে এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। সুন্দরবন প্রেসক্লাবে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বুড়িগোয়ালিনী থেকে আমরা ট্রলারে সুন্দরবনের কলা গাছিয়ায় পৌঁছালে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে সুন্দর বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সবাই যেন হারিয়ে যায় আপন মহিমায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য সাতক্ষীরা রেঞ্জ পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র এখন পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত। ইট-পাথরের নগর জীবনের ক্লান্তি দূর করে মানসিক প্রশান্তির জন্য এই সাগরপাড়ে প্রকৃতির সবুজ দেয়াল আর পাখ-পাখালির করলবে মুখরিত সুন্দনবনে দলবেঁধে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন পর্যটকরা।
‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়ক পথে সুন্দরবন’Ñএ স্লোগান এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। শুক্রবার কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে গিয়ে দেখা মিলেছে এমনই নান্দনিক সৌন্দর্যের। সড়ক পথে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ হয়ে বুড়িগোয়ালিনী খেয়াঘাট থেকে কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজমে গেলে একঝাঁক বানর ছুটে এসে স্বাগত জানায় পর্যটকদের। এরপর দেখা যায়, কিছু হরিণ আশপাশেই ঘুরাঘুরি করছে। এছাড়া আছে শ্বাসমূলে ভরা গেওয়া, গরান, বাইন, পশুর, গোলপাতা, হোগলা পাতাসহ মোট ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ। রয়েছে কুমির, মদন টাকসহ হাজারো প্রাণবৈচিত্র্য। শিশু-কিশোর যুব বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ এসেছেন প্রকৃতির কোলে প্রশান্তির পরশ পাওয়ার আশায়। অবশেষে প্রকৃতির অপরূপ রূপে মুগ্ধ পর্যটকদের যেন ‘শান্ত হইল ব্যথা।’
সুন্দরবন ভ্রমণ উপভোগ করতে শীতের শুরু থেকে (নভেম্বর-জানুয়ারি) পর্যন্ত পর্যটকের পদচারণায় মুখর সুন্দরবনের এই নয়নাভিরাম ভ্রমণ স্পট কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। সুন্দরবন সংলগ্ন জেলা সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসছেন এখানে। মেতে উঠছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের ওয়াচ টাওয়ারে উঠে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এক কথায় সবুজের সমরোহ। প্রকৃতির হাতছানি। কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার ভ্রমণে এসে পর্যটকরা কেউ বানরের সঙ্গে খেলায় মত্ত, কেউবা ছবি কিংবা সেলফি তুলেই হারিয়ে যেতে চান প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে।
সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো, মায়াবী শিংওয়ালা সব হরিণ আপনার পিছু পিছু ঘুরতে থাকে। যদি হাতে মুড়ি বা চিপস জাতীয় খাবার থাকে সেগুলো খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায় হরিণ ও বানরগুলো। লোকালয় থেকে বেশ দূরে বনের ভেতরে এই ট্রেইলগুলো দিয়েই পর্যটকরা পায়ে হেঁটে যায়। এখানে বনজ বৃক্ষের সারিতে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে থাকে চারপাশ। তবে সব নীরবতা ভেঙে বানরের ডাক আর ভেঙচিকাটা ভয়ের সঞ্চার করে।
ট্রেইলের আশপাশে এত ঘন বৃক্ষ যে, দৃষ্টিসীমা নেমে আসে কয়েক গজের মধ্যে। আর সঙ্গে তো বাঘের ভয় আছেই। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। ভয় জড়ানো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সাংবাদিক কন্যা শিশু পর্যটক আফরোজা হক মিম জানায়, বনের বানরের সঙ্গে খেলা করতে পেরে বেজায় খুশি। বানরকে খাবার খাওয়াতে পেরে আনন্দে আটখানা ও আত্মহারা শিশু কন্যা মিমসহ অসংখ্য শিশু পর্যটক। প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে এসে বানর-হরিণের সাথে খেলতে পেরে বেজায় খুশি তারা।
সাথে থাকা পর্যটক সাব্বির হোসেন ইমন জানান, সাগর কোলে গাছ গাছালীতে ঘেরা সুন্দরবনের নান্দনিক অপরুপ দৃশ্য তাকে বারবার কাছে টানে। আবেগ উজাড় করে সে কবির ভাষায় বলে-‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে, সার্থক জনম মা গো তোমায় ভালোবেসে। ধুলিহরের কোমরপুর গ্রামের সাবেক মেম্বর আল. আবদুল মান্নান বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো। এ বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক আসেন। নদী থেকে কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে উঠার সময় কাঠের তৈরি ভগ্নপ্রায় পাটাতনটি সুন্দর করে পুনঃ নির্মান করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এসময় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক হৃদয় বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক জি এম মোশাররফ হোসেন, দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার বার্তা সম্পাদক এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিবি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমাদুল ইসলাম দুলু, তাকদীর আহসান রুবেল, মো. রাশিদুজ্জামান রানা, সাবেক মেম্বর এম এ মান্নান, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হামিদ বাবু, সুপার মাও. মো. আব্দুল মোমিন, মো. হযরত আলী, আবু হাসান, মো. মামুন হোসেন, মাষ্টার আসাদুল ইসলাম, ব্রহ্মরাজপুর ইউপি সচিব শেখ আমিনুর রহমান, আমিনুল ইসলাম বাবুসহ শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
বিডিএফ প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন বাবুর দিক নির্দেশনায় বার্ষিক বনভোজন-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে জিএম আমিনুল হককে আহবায়ক ও মো. আব্দুল মাজেদকে সদস্য সচিব করে ৫সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এসময় বিডিএফ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. আব্দুল হাকিম, সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাইদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শামীম রেজা, সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক শিক্ষক মো. মুকুল হোসেন, অর্থ সম্পাদক মো. শরীফুল আলম রানা, দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান শিমুল, প্রচার সম্পাদক এমএম জয়নাল, এসএম ইসমাইল হোসেন, রবিউল ইসলাম ও সুজন ঘোষসহ সকল সদস্য।