শ্যামনগরে পাল্টা হামলায় আ’লীগের সাবেক এমপি দোলনের বাড়িতে হামলা-ভাংচুর
স্টাফ রিপোর্টার: শ্যামনগরে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মারপিটের সুত্র ধরে আ’লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এস.এম আতাউল হক দোলনের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ১টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার গুমানতলী গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্রশিবিরের ১৫/১৬ জন নেতাকর্মী দাওয়াতী কাজের জন্য আতাউল দোলনের বাড়ির সন্নিকটস্থ গুমানতলী ফাযিল মাদ্রাসায় যায়। এখবর জানতে পেরে স্থানীয় গ্রামবাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে লোহার রড, হকিস্টিক ও লাঠিশোটা নিয়ে শিবিরের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়।
একপর্যায়ে গ্রামবাসীদের চতুর্মুখী হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে শিবিরের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সহায়তায় গ্রামবাসীদের হামলায় মারাত্বকভাবে আহত শিবিরের শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম শাখার সাহিত্য সম্পাদক আসাদুল্লাহ সাঈদী (১৯), মহসীন কলেজ শাখার সেক্রেটারী আল শাহরিয়ার রোকন (১৭), পৌরসভার সেক্রেটারী আব্দুল্লাহ আল সিয়াম (১৬)সহ শিবির কর্মী মিরাজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তোভোগী পরিবারসহ স্থানীয় সুত্র মতে, নেতাকর্মীদের উপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিবিরের প্রায় তিনশ নেতাকর্মী উপজেলা সদরে জড়ো হয়।
একপর্যায়ে মিছিল সহকারে তারা গুমানতলী গ্রামে যেয়ে আতাউল হক দোলন ও তার পিতা সাবেক এমপি এ.কে ফজলুল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় লাঠিশোটা ও প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তারা বাড়ি দু’টিতে ব্যাপক ভাংচুর চালানোর পাশাপাশি ফজলুল হকের কক্ষগুলোর জিনিসপত্র তছনছ করে।
এসময় বাইরে থেকে ছুঁড়ে মারা ইটের আঘাতে আতাউল হক দোলনের পুত্রবধু জুলি মুখে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সাবেক এমপি ফজলুল হক সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনায় সময় আতাউল হক দোলন ও তার পিতা ফজলুল হক বাড়িতে ছিলেন না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বলেন, সংগঠনের দাওয়াতি কাজে যাওয়ার পর বিনা উস্কানীতে আ’লীগের সাবেক এমপির ছেলে ফাহিম রাব্বির নির্দেশে আমাদের নেতৃবৃন্দের উপর হামলা করা হয়। এসময় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে থাকা যাবতীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়ার পাশাপাশি লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নেতৃবৃন্দকে মারাত্বকভাবে আহত করা হয়।
এসময় সংগঠনের ১৬ নেতাকর্মী আহত হওয়ার দাবি করে তিনি আরও বলেন নেতৃবৃন্দের উপর হামলার খবরে কিছু উত্তেজিত কর্মী সমর্থক বিকালের দিকে হামলার নেতৃত্বদানকারী ফাহিম রাব্বির বাবা ও দাদার বাড়িতে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এঘটনায় তারা সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেবেন।
এসব বিষয়ে জানতে বার বার চেষ্টা করেও আ’লীগ দলীয় সাবেক এমপি আতাউল হক দোলনের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তার ছেলে আতাহার শিহাব রাহুল জানান, তাদের গ্রামে শিবিরের নেতাকর্মীদের আসার বিষয়ে তারা কেউ অবগত ছিলেন না। বরং গ্রামবাসীদের সঙ্গে শিবির নেতাকর্মীদের বাদানুবাদের জেরে হাতাহাতির সময় তার ছোট ভাই রাব্বি ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। অথচ প্রায় দুই ঘন্টা পর দুই/তিনশ শিবির কর্মী-সমর্থক মিছিল সহকারে তাদের বাড়িতে ঢুকে হামলা ও ভাংচুর করেছে। এসময় তিনটি মটর সাইকেল ও একটি ব্যক্তিগত গাড়িসহ বাড়ির আসবাবপত্র পর্যন্ত ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয় বলেও তিনি জানান।
এঘটনায় শ্যামনগর থানার ওসি (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, দুপুরের আগে হামলার ঘটনায় আহত শিবির কর্মীদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেসময় পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও হঠাৎ বিকেলের দিকে উত্তেজিত কিছু তরুন আ’লীগের সাবেক এমপির বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে দ্রুত সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করা হয়। এঘটনায় কোন পক্ষ রাত সাতে সাতটা পর্যন্ত থানায় লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি বলেও তিনি জানান।