অনলাইনঅপরাধআইন আদালতদেবহাটারাজনীতিলিডসাতক্ষীরা জেলা

দেবহাটায় নেতাদের ছবি ঝুলিয়ে সাংবাদিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, রাতারাতি হয়ে গেল বিএনপি অফিস!

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা প্রেসক্লাবের বারবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার দেবহাটা ব্যুরো প্রধান সংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওনের আইটি ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজ ভাংচুর, লুটপাট ও জবরদখলের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও জবরদখলকারী যুবদল-ছাত্রদল নেতা ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা চিহ্নিত অস্ত্রধারী দুষ্কৃতিকারীদের কবল থেকে অদ্যবধি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির দখল ফিরে পায়নি ভুক্তভোগী সাংবাদিক পরিবার।

গত ৫ আগষ্ট দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরপরই মদ্যপান, নারী কেলেঙ্কারী, শালিসে ষাঠোর্দ্ধ বৃদ্ধকে লাঠিপেটা, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার জামায়াতপন্থী দুই ভাই সহ পরিবারের সদস্যদের পিটিয়ে জখম, অসহায় পরিবারের জমি জবরদখল করে স্বেচ্ছাচারিভাবে খেলার মাঠ নির্মাণ, নিষিদ্ধ মৌসুমে অবৈধভাবে সুন্দরবনের কাঁকড়া বিদেশে পাঁচার সহ নানা অপকর্মের কারনে বিতর্কিত এবং জামায়াতের নারী নেত্রীর মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করে সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা থেকে ভোল পাল্টে জামায়াতের জামাতা হয়ে ওঠা এক ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে তার পোষ্য সাঙ্গপাঙ্গ ও ছাত্রদল-যুবদলের অর্ধশত সশস্ত্র নেতাকর্মী নিয়ে পারুলিয়া ব্রীজ সংলগ্ন কাঁকড়া সমিতির সামনে থেকে মিছিল বের করেন চাঁদাবাদি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অন্যতম হোতা উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ইমরান ফরহাদ (৩৫) ও মাদক চোরাচালান এবং হুন্ডি ব্যবসার অন্যতম গডফাদার উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কামরুজ্জামান কামরুল (৩৮)। স্লোগান সহকারে মিছিলটি সখিপুর বাজারস্থ সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওনের আইটি ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজে এসে ব্যপক ভাংচুর, লুটপাট চালায়।

পরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা লাগিয়ে জবরদখল করে নেয় তারা। সেসময় হামলাকারীরা সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওই আইটি ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা এয়ারকান্ডিশনার, থাইগ্লাস ডোর, ৪ টি ডেক্সটপ কম্পিউটার ও ২টি ল্যাপটপ, ২টি ভিডিও ক্যামেরা, ডিএসএলআর ক্যামেরা, স্মার্ট এলইডি টিভি, ইন্টারনেট সরঞ্জামাদি, বেশ কয়েকটি টেবিল ও চেয়ার, একাধিক পোর্টেবল হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, বৈদ্যুতিক সংযোগের মিটার ভাংচুর ও লুটপাট করে নুন্যতম ৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা সংবাদকর্মী শাওনের ব্যক্তিগত পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ড, ব্যাংকের চেকবই সহ অন্যান্য মুল্যবান কাগজপত্র অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।

এঘটনার দু’দিন পর সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন ডিসিআরকৃত জমিতে অবস্থিত তার ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এক আত্মীয়ের মাধ্যমে যুবদল নেতা কমরুজ্জামান কামরুল ও ছাত্রদল নেতা ইমরান ফরহাদ কে প্রস্তাব দিলে তারা ওই আত্মীয়ের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ফেরত দিতে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

এনিয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে অভিযুক্ত দুই যুবদল ও ছাত্রদল নেতার ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীরা ওই সাংবাদিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে তড়িঘড়ি করে সাবেক রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ঝুলিয়ে রাতারাতি সেটিকে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ের রূপ দিয়ে গত দেড় মাস সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জবরদখলে রেখেছেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন বলেন, ‘আগে থেকেই তাদের নানা অপকর্ম নিয়ে আমার প্রকাশিত একাধিক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের কারনে আওয়ামীপন্থী ওই ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কামরুজ্জামান কামরুল ও ছাত্রদলের আহবায়ক ইমরান ফরহাদ আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তারা আমার ক্ষতিসাধন, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দিয়ে আসছিলেন। তবে সেসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় তারা আমার ক্ষতিসাধণের সুযোগ পাননি। গত ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরপরই বিতর্কিত ওই আওয়ামীপন্থী ইউপি চেয়ারম্যানের ইন্ধনে যুবদল নেতা কামরুজ্জামান কামরুল ও ছাত্রদল নেতা ইমরান ফরহাদ ৩০/৪০ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে নিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যপক ভাংচুর ও লুটপাট করে তালা ঝুলিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি তাদের দখলে নেয়। পরে তারা আমার কাছে মোটা অংকের চাঁদাও দাবি করেন। কিন্তু আমি তাদের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আইনী সহায়তার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর এবং বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ দিলে তারা রাতারাতি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের ছবি ঝুলিয়ে তা পুরোপুরিভাবে জবরদখল করে নেয় এবং অদ্যবধি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি জবরদখলে রেখে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশ ও হয়রানিমুলোক মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

জবরদখলকারীদের মুর্হুমুহু হুমকিতে বর্তমানে বাড়ি ছাড়া উল্লেখ করে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন আরও বলেন, একজন সংবাদকর্মী হওয়া স্বত্তে¡ও জবরদখলকারীদের হুমকিতে প্রাণভয়ে গত দেড় মাস স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে বাইরে অবস্থান করছি। তবুও আমি ও আমার পরিবার নিরাপদ নই। যাতে আমি ও আমার পরিবার এলাকায় না ফিরতে পারি সেজন্য তারা প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি ধামকি দেয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে উষ্কানীমুলোক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ভাংচুর ও লুটপাট করে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন, এমনকি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমি জবরদখল করেও তারা এখনো ক্ষ্যান্ত হয়নি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-ও দুঃচিন্তা ও আতঙ্কে একাকি দিনযাপন করছেন। এনিয়ে আমি দেবহাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ আমার অভিযোগ নেয়নি।

জবরদখলে নিয়ে বিএনপি অফিস বানানো সখিপুর বাজারস্থ আমার ওই আইটি ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমি পেরীফেরীভুক্ত সরকারি সম্পত্তি, যা আমার নিজনামে ডিসিআরকৃত।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ২৪৯/২০২২-২৩ নং কেসের মাধ্যমে ডিসিআর নিয়ে আমি সেখানে বৈধভাবে আইটি ভিত্তিক ব্যবসা করে আসছিলাম। সরকারি বিধি মোতাবেক বিগত বাংলা ১৪২১ সাল থেকে চলতি বাংলা ১৪৩১ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর আমি আমার ডিসিআরকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত রাজস্ব উপজেলা ভুমি অফিসের মাধ্যমে পরিশোধ করেছি এবং আমার ডিসিআরও নবায়ন রয়েছে, তবুও ক্ষমতার দাপটে তারা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি এখনও জবরদখলে রেখেছেন।’

সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন জবরদখলকৃত তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দখল ফিরে পেতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একইসাথে ভাংচুর ও লুটপাটে জড়িত যুবদল ও ছাত্রদল নেতাসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএনপি ও যুবদল-ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুটপাট ও জবরদখলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু জবরদখলকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমিটি সরকারি পেরিফেরীভুক্ত সম্পত্তি এবং সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওন বৈধভাবে ডিসিআর নিয়ে সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। সেজন্য তদন্তপূর্বক ডিসিআর গ্রহীতার অনুকূলে দখল বুঝিয়ে দেয়া সহ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এসিল্যান্ড ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও সে নির্দেশনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

এদিকে দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শাওনের জবরদখল হওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে গিয়ে তদন্তকালে তা ভাংচুর, লুটপাট ও জবরদখলের সত্যতাও পেয়েছেন সখিপুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত ইউনিয়ন সহকারি (ভূমি) কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার। শিগগিরই তিনি বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধত্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন।

এবিষয়ে দেবহাটা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কামরুজ্জামান কামরুলকে একাধিক বার কল করা হলে তার ব্যবহারিত ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

দেবহাটা উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ইমরান ফরহাদকে কল দিলে তার কল রিসিভি করা মাত্র সাংবাদিক পরিচয় শুনলে কল কেটে দেন, পরে আর কল রিসিভ করেননি।

দেবহাটা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি ওই সময় এলাকায় ছিলাম না। তাই ঘটনা টা বলতে পারবো না তবে যাদের নিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে তারা আমাদের দলের লোকজন বলেও স্বীকার করেন তিনি।

দেবহাটা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মহিউদ্দীন সিদ্দিকী সোমবার সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, তাদেরকে দ্রæত সময়ের মধ্যে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিএনপি নেতাদের ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিএনপি কখনও ভাংচুর, লুটপাট ও জবরদখলকারীদের প্রশ্রয় দিবেনা। এরপরও যদি তারা ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি জবরদখল করে রাখে সে দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *