কালিগঞ্জে ৫০ টি মন্ডপে হবে দুর্গোৎসব, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
মাসুদ পারভেজ, কালিগঞ্জ: মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। তবে গত ২১ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এবছর উপজেলার ১২ ইউনিয়নে ৫০ মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ইতি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের। আনন্দমূখর পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্নের লক্ষ্যে উপজেলার সব পূজামন্ডপে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মিলন কুমার ঘোষ জানান, এ বছর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ৫০টি মন্ডপে সার্বজনীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বিগত বছরের ন্যায় এবারও সর্বাধিক ৮টি মন্ডপে পূজা হচ্ছে উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে। এছাড়া কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে ২টি, চাম্পাফুল ইউনিয়নে ৬টি, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে ৩টি, কুশলিয়া ইউনিয়নে ৭টি, নলতা ইউনিয়নে ২টি, তারালী ইউনিয়নে ৪টি, ভাড়াশিমলা ইউনিয়নে ৩টি, মথুরেশপুর ইউনিয়নে ৫ টি, ধলবাড়িয়া ইউনিয়নে ৪টি, রতনপুর ইউনিয়নে ৩টি এবং মৌতলা ইউনিয়নে ৩টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠুভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সভা করে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি ভাবে প্রতিটি মন্ডপের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫শ’ কেজি চাল। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে পূজা মন্ডপসমূহে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ১৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রশাসন সকল পূজা মন্ডপের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আসন্ন দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ শারদীয় দুর্গোৎসব সুন্দর পরিবেশে নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন।
সরেজমিন বিভিন্ন পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি মন্ডপের সম্মুখে গেইট ও মনোরম প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিমার সাজসজ্জাকরণও শেষ পর্যায়ে। এবার নলতা ইউনিয়নের নলতা কালীবাড়ি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজার সর্ববৃহৎ আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সহসভাপতি অসিত কুমার সেন জানান, দুর্গাপূজা পাঁচ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়। মা দুর্গার অর্চনার পাশাপাশি একই মঞ্চে দেবী মা লক্ষী, মা সরস্বতী এবং দেবতা শ্রী গণেশ ও শ্রী কার্তিকেরও পূজা করা হয়। এ সময়টাতে ঢাকের বাদ্য আর শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা হয় সনাতন ধর্মাবলম্বী সকল বয়সের মানুষ। দেবী দূর্গা এবার ‘গজে’ (হাতিতে) চড়ে মর্তালোকে আগমণ করবেন এবং ‘দোলায়’ (পালকি) চড়ে ফিরে যাবেন স্বর্গলোকে।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজ মণ্ডল বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা চলাকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন তৎপর থাকবে বলে জানান। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পুলিশ ও আনসার ভিডিপি মোতায়েন করা হবে। কেউ যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায়, তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা প্রত্যেক মণ্ডপে পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করব এবং প্যাট্রোলিং বাড়িয়ে দেব। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং আপনারা স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সহযোগিতা করুন, তাহলে এ উৎসব নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে। কোনো সমস্যা হলে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করুন।
ওসি আরো বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব, কিন্তু আমরা পুলিশ হিসেবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করব যাতে কালিগঞ্জে দুর্গাপূজা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। আপনারা কোন গুজবে কান দিব না।