শ্যামনগরে চেতনানাশক স্প্রে করে দুই পরিবারের সর্বস্ব লুট
শ্যামনগর প্রতিনিধি: শ্যামনগরে রাতের আঁধারে চেতনানাশক স্প্রে করে দুইটি বাড়িতে দুঃসাহসিক চুরি সংঘটিত করেছে দূর্বৃত্তরা।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দিনগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে জেলার শ্যামনগর উপজেলার বাদঘাটা গ্রামের দেবীরঞ্জন মন্ডল ও চিত্তরঞ্জন মন্ডলের বাড়িতে এ চুরির ঘটনা ঘটে।
এসময় শুধু একটি বাড়ি থেকেই চোরেরা ১২ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে গেছে। তবে অপর বাড়ির মালিক চিত্তরঞ্জন মন্ডলের জ্ঞান না ফেরায় সেখান থেকে কি ধরনের মালামাল নিয়ে গেছে তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাতের খাবার শেষে দেবীরঞ্জন মন্ডলের পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় দেবীরঞ্জনের মেয়ে শিউলী মন্ডল (২৫) তার স্বামী পলাশ মজুমদার (৩৫) এর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন। হঠাৎ তিনি গোঙাতে শুরু করেন এবং বলেন তার মাথা ঘুরাচ্ছে। এসময় তার হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায়। ফোনকলে থাকা অবস্থায় শিউলীর প্রান্ত থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে পলাশ মজুমদার তাৎক্ষণিক তার শ্বশুর দেবীরঞ্জনের মোবাইলে কল করেন। এসময় তিনিও ফোন রিসিভ না করায় বিষয়টি রহস্যজনক মনে করে পলাশ শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এসময় তার শ্যালক ঢাকা থেকে তাকে ফোন করে জানায় এইমাত্র বাবা দেবীরঞ্জন মন্ডলের সাথে তার কথা হয়েছে। তারও নাকি মাথা ঘোরাচ্ছে, তিনি চোখে ঝাপসা দেখছেন।
জানতে চাইলে পলাশ মজুমদার বলেন, আমি শ্বশুর বাড়িতে এসে দেখি বাড়ির গেটে তালা মারা, কিন্তু রুমের দরজা ভাঙা। তার শ্বশুর দেবীরঞ্জন মন্ডল, শ্বাশুড়ি শিখা রানী, স্ত্রী শিউলী মন্ডল ও শ্যালিকা সুমিত্রা রাণী অচেতন অবস্থায় রুমের মেঝেতে ও খাটের উপরে পড়ে আছেন। বাড়ির দোতলায় গিয়ে কিছু আলামত দেখা গেছে। মনে করা হচ্ছে চোরেরা ভবনের পিছনের গাছ বেয়ে উপরে ওঠে ঘরের ভেতরে ঢোকে।
তিনি আরো বলেন, বাড়ির টোটাল চাবি দুই সেট। একটা আমার কাছে আরেকটা আমার বউ শিউলীর কাছে থাকে। তবে শিউলীর কাছে চাবি পাওয়া যায়নি। পরে পার্শ্ববর্তী চিত্তরঞ্জন কাকার বাসায় যেয়ে দেখা যায় তাদের মেঝেতে চাবিগুলো পড়ে আছে। আর সেখানে কাকা চিত্তরঞ্জন মন্ডল ও কাকী নিলীমা রানীও মেঝেতে পড়ে আছেন। পরে তাদের গ্রাম্য ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা করানো হয়েছে। সকালে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পলাশ মজুমদার বলেন, চোরেরা ২ ভরি ওজনের দুই জোড়া কানের দুল, ২ ভরি ওজনের একটি সোনার পাতি হার, ৪ ভরি ওজনের ৩টি সোনার চেইন, দেড় ভরি ওজনের ৪টি সোনার আংটি এবং নগদ এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। তবে, পার্শ্ববর্তী চিত্ত রঞ্জনের পরিবারের দুইজন সদস্যের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের বাসা থেকে কি কি চুরি হয়েছে তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবীর মোল্লা জানান, ঘটনা শোনামাত্রই ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়ে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওসি জানান, চেতনানাশক স্প্রে’র ঘটনা বেডে যাওয়ায় টহল জোরদার করা হয়েছে।