জীবনযাপনসদর

সাতক্ষীরায় ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: রিমাণ্ড শেষে জবানবন্দি দিলেন না আরাফাত

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ী জিএম আমীর হামজার ২৩ লক্ষাধিক টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আদালতে আত্মসমর্পণকৃত ইসতিহাক আহম্মেদ ওরফে আরাফাত হোসেনকে দুই দিন রিমাণ্ড শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রবিবার দুপুর সোয়া একটার দিকে তাকে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম মোঃ সালাহ্উদ্দিনের খাস কামরায় নিয়ে গেলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিতে রাজী হননি। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আরাফাত হোসেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের মোতালেব সরদারের ছেলে ।

সাতক্ষীরা আদালত ও পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি এজাহারভুক্ত আসামী ইসতিহাক আহম্মেদ ওরফে আরাফাত হোসেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আহম্মদ কবীর। আমলী প্রথম আদালতের বিচারক নয়ন কুমার বড়াল বৃহষ্পতিবার শুনানী শেষে দুই দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। শুক্রবার তাকে কারাগার থেকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয় । জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আরাফাত তার কাছে ছিনতাইয়ের টাকা তার বাড়ির পাশে হলুদ খেতে আছে বলে স্বীকার করে। সে অনুযায়ি শুক্রবার রাতে ওই হলুদ খেতের মাটি খুঁড়ে একটি ব্যাগ থেকে পাঁচ লাখ চার হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। রবিবার তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য রাজী হলেও বিচারক সালাহউদ্দিনের কাছে নিয়ে গেলে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তণ করেন।

সাতক্ষীরা সদর আদালতের সরকারি রেকর্ড সংরক্ষক (জিআরও) মাহমুদ হোসেন জানান, আরাফাতকে বিচারক সালাউদ্দিনের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য নিয়ে গেলে তিনি রাজী জননি। ফলে তাকে বিকেলে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নিজামউদ্দিন জানান, আরাফাতকে রিমাণ্ড শেষে আদালতের মধ্যে রবিবার বিকেল কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আদালত চত্বরে আরাফাত হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে তার বাড়ির পাশের হলুদ খেত থেকে মাটি খুঁড়ে যে ৫ লাখ চার হাজার টাকা উদ্ধার দেখানো হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। পুলিশ তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করাতে চেয়েছিল। বিষয়টি বিচারকের কাছে বলায় তার জবানবন্দি নেওয়া হয়নি।

তবে মোতালেব সরদার জানান, পুলিশ উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে। তার ছেলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি হলুদ খেত থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার দেখানো হলে তাকে কেন ঘটনাস্থলে আনা হয়নি। যাদেরকে টাকা উদ্ধারের সময় সাক্ষী রাখা হয়েছে সেই আব্দুল আলীম ও মিঠু পুলিশের কথামত একটি কাগজে সাক্ষর দিয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের“ মা ট্রেডার্সের” স্বত্বাধিকারী জিএম আমির হামজার কর্মচারী(ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল চালক) শওকত আলী ও ওবায়দুল্লাহ ব্যবসায়ীক কাজে গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে সাতক্ষীরার দুটি ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত ও তিনজন ব্যবসায়ির কাছ থেকে আদায়কৃত বকেয়াসহ মোট ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে মটর সাইকেলে ভোমরায় ফিরছিলেন। একপর্যাযায়ে বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আলিপুর ঢালীপাড়া বিদ্যুৎ অফিসের সামনে এলাকায় পৌঁছালে দুটি মটর সাইকেলে পাঁচজন ছিনতাইকারি শওকত হোসেনের মটর সাইকেলের গতিরোধ করে। পরে শওকতের মটর সাইকেলের হ্যাণ্ডেলে লোহার রড দিয়ে বাড়ি মেরে ও ওবায়দুল্লাহর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। শওকত এবং ওবায়দুল্লাহ রাস্তার উপর পড়ে যায়। এসময় ছিনতাইকারীরা ওবায়দুল্লার কাছে থাকা টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের আতাউরের ছেলে মেহেদী হাসান মুন্না নামের একজন ছিনতাইকারীকে আটক করে জনতা পুলিশে সোপর্দ করে। বাকি ৪ ছিনতাইকারী টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ২০ জানুয়ারি রফিকুজ্জামানকে কাশেমপুর মালীপাড়ার খোকন মালীর তৃতীয় স্ত্রী সাথী খাতুনের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইয়ের তিন লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ২০ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে ভোমরার লক্ষীদাঁড়ি গ্রাম থেকে ছিনতাইয়ের মাষ্টারমাইন্ড আলিমউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২১ জানুয়ারি রফিকুজ্জামান ও ২৩ জানুয়ারি আলিমউদ্দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তবে ছেলে রফিকুজ্জামানকে বাঁচাতে রসুলপুরের শাহজাহান সরদারের দ্বিতীয় স্ত্রী ময়না বেগম গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর ছিনতাইয়ের ইসলামী ব্যাংক এর সিল মারা চারটি এক হাজার টাকার বাণ্ডিলসহ সাড়ে ১২ লাখ টাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খানের হাতে তুলে দেন বলে জানান। একইভাবে গত ২৪ ডিসেম্বর নলকুড়া গ্রামের ছেলে এজাজুলের ভাগ পাওয়া ছিনতাইযের এক লাখ টাকা বাবা গ্রাম পুলিশ সাঈদুল হক মিষ্টি মেম্বরকে নিয়ে থানায় যেয়ে মামলার প্রথম তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাসানের হাতে তুলে দেন।

এছাড়া, আরো পাঁচ লাখ চার হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আসামী ইসতিহাক আহম্মেদ ওরফে আরাফাত হোসেন বাড়ির পিছনের হলুদ খেত থেকে মুটি খুঁড়ে ওই টাকা উদ্ধার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *