পাঁচ বছর আগে স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হওয়া সাতক্ষীরার নবম শ্রেণীর ছাত্রী উদ্ধার, এক নারী গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার: অপরাধ, তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা পাঁচ বছর আগে স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হওয়া এক ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আসামী মুক্ত বেগমকে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার গুলিস্তানের কালাচাঁদপুর মধ্যপাড়ার ৪২ নং বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে এ উদ্ধার ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।
উদ্ধার হওয়া ভিকটিম সাতক্ষীরা সদরের কুশখালি ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে ও স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।
গ্রেপ্তারকৃতের নাম মুক্তা বেগম। তিনি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মোফাজ্জেল মোল্লার মেয়ে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ আগষ্ট সকাল সাতটার দিকে স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় সাতক্ষীরার এই মেয়ে। সেই থেকে মেয়েটির বাবা ও স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করতে থাকে। একপর্যায়ে নড়াইল জেলার কালিয়া থানার রাজাপুর গ্রামের মুক্তা খাতুনকে তার মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে ফেরৎ দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে।
পরে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মেয়েকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেয়। বিকাশে নেয় টাকা।
বাধ্য হয়ে ওই মেয়ের বাবা বাদি হয়ে ওই বছরের ২৪ অক্টোবর সাতক্ষীরার মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মুক্তা বেগম, তার বোন জয়গুন বেগম ও ভগ্নিপতি ইসারত শেখকে আসামী করা হয়।
মামলায় ভিকটিমকে সাতানী শিশুতলা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে আসামীরা তুলে নিয়ে আটকে রেখেছে বলে উল্লেখ করা হয় মামলায় বাদি তার মেয়েকে ভারতে বা অন্য কোন দেশে পাচার বা দেশের ভিতর কোন পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করা হয়।
ওই বছরের ৬ নভেম্বর সদর থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলার আসামী ইসারত শেখকে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক শরিফ এনামুল হক আসামীকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ইসারত পালিয়ে যায়।
মামলাটি পরবর্তীতে সাতক্ষীরার অপরাধ তদন্ত ও গোয়েন্দা শাখায় স্থানান্তর হয়। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পান অপরাধ তদন্ত ও গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহাবুবর রহমান। তদন্তে নেমে তিনি জানতে পারেন যে মুক্তা বেগম ও বাদির চাচাত বোন কাকলীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিলো। মুক্তা বেগম ও তার স্বজনরা বাদির বাড়িতে ও কাকলির বাগিতে যাতায়াত করতো। একপর্যায়ে মুক্ত ও কাকলি অবৈধপথে ভারতে যেয়ে গ্রেপ্তার হয়। পরে কারাভোগ শেষে তাদেরকে দেশে পুশব্যাক করা হয়।
একপর্যায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় মোবাইল ফোন ট্রাকিং এর মাধ্যমে সোমবার গুলশান থানাধীন কালাচাঁদপুর মধ্যপাড়া ৪২-ক এর বিল্ডিং এর তিনতলা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার ও আসামী মুক্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাতক্ষীরার অপরাধ তদন্ত ও গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহাবুবর রহমান জানান, তিনিসহ পুলিশ পরিদর্শক তাজুল ইসলাম, সহকারি উপপরিদর্শক রিয়াজুল ইসলাম সোমবার ভিকটিম উদ্ধার ও আসামী গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামী মুক্তা বেগমকে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিচারিক হাকিম বণ্যা খাতুনের কাছে ভিকটিমের ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান শেষে বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
তবে ২২ ধারার জবানবন্দিতে ভিকটিম জানায় যে, তাকে কেউ আটকে রাখেনি। তবে দীর্ঘ ৫ বছরে সে কেন বাড়িতে যোগাযোগ করেনি সে ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ভিকটিম।