কালিগঞ্জসাতক্ষীরা জেলা

কালিগঞ্জে আজিজুল বাহিনীর বিরুদ্ধে শত বিঘা খাস জমি দখলের অভিযোগ

কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: শত বিঘা সরকারি খাস জমিতে ৩৫ বছর বসবাসকারী ১৮৪ টি ভূমিহীন পরিবারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে জবর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান আজিজুল বাহিনীর বিরুদ্ধে।

কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ভূমিহীন জনপদ ভাঙ্গান মারি এলাকায় গত শনিবার (১ মার্চ) সকাল ৮ টার দিকে এ দখল ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

ঐ এলাকায় বসবাসকারী ভূমিহীনদের উপর হামলা ও দখলের হুমকির প্রেক্ষিতে ভাঙ্গান মারি, ঝায়া মারি, বাবুরাবাদ এলাকায় বসবাসকারী শত, শত ভূমিহীন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি ) নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত হয়ে কখনো আ’ লীগ নেতা আবার কখনো বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান আজিজুল বাহিনীর সদস্য কথিত ভূমিহীন নামধারী ভাঙ্গানমারী, গ্রামের মৃত কোরবান আলী পাড়, মৃত রহমতুল্লাহ গাজীর পুত্র আব্দুল ওয়াহেদ গাজী, শহিদুল গাজী, বাবুরাবাদ গ্রামের জেহের আলী গাজীর ছেলে সবুর গাজী একই গ্রামের মৃত মনির সরদারের পুত্র সিরাজুল সরদার, মৃত সোবহান পাড়ের পুত্র রফিকুল পাড়, মৃত বাবুর আলীর ছেলে পিয়ার আলী বিশ্বাস এবং ভাঙ্গান মারি গ্রামের মেছের আলী গাজীর পুত্র বাবুর আলী গাজীর নেতৃত্বে ৪০/৫০ জনের একটি সশস্ত্র কথিত ভূমিহীন নামধারী ব্যক্তিরা জমি মাপের নাম করে জবরদখল করে নেয়।

লিখিত অভিযোগ এবং ভূমিহীন জনপদে বসবাসকারী ভূমিহীন শামসুদ্দিন সরদার ,আজিজ, মনিরুল ইসলাম, ইমরান সরদার সহ শত শত নারী-পুরুষ ভূমিহীনরা সাংবাদিকদের জানায় বাংলাদেশ ল্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেশন অর্ডার ১৯৭২ বা পি,ও ৯৮/৭২ এর বলে বাংলাদেশ সরকার সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ঢেপু খালিপূর্ব ,ঢেপুখালী পশ্চিম, কাঠমহল ,কামিনী বসু ,কালাবাড়িয়া ১ , কালাবাড়িয়া ২, নোড়ার চারকোনি, ঝায়া মারি, ভাঙ্গানমারি ও বাবুরাবাদ এলাকার ১০ টি গ্রামের৩১৭৮ একর জমি সরকার খাস ঘোষণা করে।

উক্ত ঘোষণার বিরুদ্ধে সরকারের বিপক্ষে স্থানীয় কথিত ভূমিহীনরা ভুয়া জাল-জালিয়াতি কাগজ সৃষ্টি করে রেকর্ডীয় মালিক দাবি করে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে।

উক্ত মামলায় নিম্ন আদালত থেকে উচ্চতর আদালত মহামান্য হাইকোর্ট ১৯৮২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে উক্ত ভূমিকে কৃষি ভূমি হিসেবে ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত করে ভূমিহীনদের স্থায়ী বন্দোব্যবস্থা দেওয়ার আদেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে উক্ত জমি হতে ৪৯২ একর খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে স্থায়ী বন্দোব্যবস্থা প্রদান করেন। ঐ চক্রটি ১৯৮৫ সালে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে ব্যক্তি স্বার্থে খাস জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে বিশেষ জল মহল হিসেবে ঘোষণা করায় ভূমিহীনদের স্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ১৯৯২ সালে বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ওই খাস জমিকে পুনরায় শ্রেণী পরিবর্তন করে বিশেষ জল মহল ঘোষণা করে। যার প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ১০ মে ওই ভূমিহীন জনপদে প্রথম এবং ২৭ জুলাই দ্বিতীয়বার রক্তক্ষয়ী হামলায় ভূমিহীন নেত্রী জায়েদা নিহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেবীশহর ফুটবল মাঠে ভূমিহীনদের সঙ্গে একাত্মা ঘোষণা করে বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন।

এরপরই দেবহাটা, কালিগঞ্জ এলাকায় ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ১২,শ ভূমি হীন পরিবারকে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে বিল কাজলা মৌজার ভাঙ্গনমারী এলাকায় ৯৭,১৫ একর জমিতে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা সহ ১৩৬ টি ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে আসলেও মামলা জটিলতায় তাদেরকে বন্দোবস্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। উক্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ লিভ -টু আপিল ৪৭২/ ২০১৬ নং মামলাটি আপিল মঞ্জুর হয় ।উক্ত মামলার সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বিল কাজলা মৌজার এস, এ, ১ নং খতিয়ানের ২৯০দাগের বি,আর,এস ১ খতিয়ানের ১০১১ দাগের ৯৭ ,১৫ একর জমি ১ নং খাস খতিয়ান ভুক্ত হিসেবে গণ্য করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কথিত ভূমির নামধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ চেয়ারম্যানের নাম ভাঙিয়ে উক্ত জমিতে বসবাসকারী ভূমিহীনদের নিকট থেকে জোরপূর্বক দখল করেছে।

এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনারের (ভূমি) নির্দেশে গতকাল সংশ্লিষ্ট নলতা ইউনিয়নের চালতে বাড়ি ভূমি অফিসের তহশিলদার জালাল হোসেন সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য নলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম পাড়ের নিকট তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি ) নিকট জানতে চাইলে তিনি উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট তহশিলদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য উপস্থিত উপস্থিত ভূমিহীনদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে গেলে তিনি জরুরী কাজে বাহিরে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে এখন ভূমিহীনদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে আবারো ভূমিহীন জনপদ উত্তপ্ত হতে পারে বলে জনমনে শঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *