বিনোদন

ঢাকাই সিনেমায়: শুটিং, প্রপোজ এবং অতঃপর বিয়ে

বিনোদন ডেস্ক: প্রেম শাশ্বত এবং চিরন্তন। প্রেম মানেনা কোনো বাধা, জাত-পাত-বয়সের সীমারেখা সেখানে তুচ্ছ। প্রেমের চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে বিয়ে। ঢাকাই চলচ্চিত্রজগতেও এরকম প্রেমকাহিনী রয়েছে। পরিচালক স্বামী ক্যামেরার পেছনে আর অভিনেত্রী স্ত্রী ক্যামেরার সামনে। পরিচালক ও অভিনেত্রীর মধ্যেকার বোঝাপড়া কখনো শুটিং ইউনিট ছাড়িয়ে একই ছাদের নিচে এসে থামে। আউটডোরের প্রেম থেকে সংসারের দৈনন্দিন সুখ- এরকম সফর করেছেন অনেকেই। ষাটের দশক থেকে চলতি দশক পর্যন্ত দৃষ্টান্ত প্রচুর। সিনেমার এমন কয়েকজন পরিচালক-অভিনেত্রী দম্পতির প্রেমকাহিনী নিয়ে এই আয়োজন।

জহির রায়হান ও সুচন্দা
জহির রায়হান প্রিয় শিল্পী সুচন্দাকে বিয়ে করার আগে প্রেমে পড়েছিলেন সুমিতা দেবীরও। তিনিও ছিলেন জহির রায়হানের অনেকগুলো ছবির অভিনেত্রী এবং বাস্তবজীবনে ঘরণী। স্ত্রী সুমিতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর জহিরের ঘনিষ্ঠ হন অভিনেত্রী সুচন্দা। নিখোঁজ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক ছিল অটুট। সুচন্দা তার ক্যারিয়ারে জহিরের মতো আস্থা আর কোনো পরিচালকের কাছ থেকে আদায় করতে পারেননি। জহিরের পরিচালনায় সুচন্দা ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘দুই ভাই’, ‘জীবন থেকে নেয়া’ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করেন। সুচন্দা জাতশিল্পী না হলেও জহির তাকে ভালোভাবেই তার প্রতিভাকে নিজের ছবিতে বের করে এনেছেন।

আলমগীর কবির ও জয়শ্রী কবির
আলমগীর কবিরের সঙ্গে জয়শ্রী কবিরের জুটির জন্ম সত্তর দশকে। জয়শ্রী ছিলেন মিস ক্যালকাটা। তিনি ঢাকায় আসেন সিনেমায় অভিনয় করার জন্য। পরিচালকের নামটি আলমগীর কবির। কিন্তু নির্মাতার নির্দেশনা শুনতে শুনতে এক সময় তাকে মন দিয়ে ফেলেন জয়শ্রী। দুজনে বসে যান বিয়ের পিঁড়িতে। আলমগীর কবিরের বেশির ভাগ ছবিতে অভিনয় করেছেন ভারতীয় শিল্পীটি। আলমগীর কবিরের প্রিয় শিল্পী ছিলেন জয়শ্রী। তার পরিচালনায় অভিনেত্রী ‘সূর্যকন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘মোহনা’ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করেছেন। অধিকাংশ ছবিতেই নায়িকা-নির্মাতার সমঝোতা বোঝা গেছে পুরোপুরি।

হুমায়ূন আহমেদ ও শাওন
২০০৫ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সাহিত্যিক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ থেকে সিনেমায় হুমায়ূন আহমেদের নিয়মিত শিল্পী শাওন। এরপর যতগুলো ছবি বানিয়েছেন প্রয়াত সাহিত্যিক, একটি ছবি ছাড়া প্রত্যেকটিতেই অভিনয় করেছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামলছায়া’ ও ‘আমার আছে জল’-এ শাওন কাজ করেছেন হুমায়ূন আহমেদের নির্দেশনায়। সিনেমায় আসারও আগে থেকে লেখকের প্রিয় শিল্পী ছিলেন শাওন। হুমায়ূন আহমেদ শাওনের সঙ্গে কাজ শুরুর পর থেকে কিছু প্রডাকশন ছাড়া সব টিভি প্রডাকশনেই তাকে নিয়েছেন।

মালেক আফসারী ও রোজী আফসারী
চিত্রগ্রাহক আব্দুস সামাদের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বয়সে ছোট, তরুণ নির্মাতা মালেক আফসারীকে বিয়ে করেন রোজী আফসারী। আশির দশকে রোজীর সঙ্গে আফসারীর পরিচয় ঘটে যখন তখন তিনি ছিলেন সহকারী পরিচালক। এই নির্মাতার সঙ্গে অনেক ছবিতে কাজ করেছেন রোজী আফসারী। ‘গীত’, ‘ক্ষতিপূরণ’, ‘মরণকামড়’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘ঠেকাও মাস্তান’, ‘হীরাচুনিপান্না’ ইত্যাদি ছবিতে স্বামীর নির্দেশনায় কাজ করেছেন রোজী। স্ত্রীকে নিয়ে আফসারী একটি প্রোডাকশন হাউজও গড়েছিলেন। নিজেদের ব্যানার থেকেও দুজনে অনেক ছবি করেছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর কয়েক বছর বিরতিতে ছিলেন আফসারী।

মুরাদ পারভেজ ও সোহানা সাবা
সোহানা সাবার অনেক আগে শোবিজে আসেন মুরাদ পারভেজ। মুরাদ নাটক পরিচালনা করতেন। সাবা ২০০৫ সালে কবরীর পরিচালনায় ‘আয়না’ ছবির মধ্য দিয়ে সিনেমায় পা রাখেন। মুরাদ ও সাবা কাজ করতে গিয়ে প্রেমে পড়েন। এ সময় মুরাদ পারভেজের প্রথম ছবি ‘চন্দ্রগ্রহণে’ অভিনয় করেন সাবা। ছবিটি অনেকগুলো শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। একই পরিচালকের ‘বৃহন্নলা’তেও অভিনয় করেন সাবা। মুরাদ ও সাবা বিয়ের পিঁড়িতেও বসেন। কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। বিয়ের পরও সাবা মুরাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। যা পেশাদারিত্বের লক্ষণ।

অনন্ত হিরা ও নূনা আফরোজ
অনন্ত হিরা ও নূনা আফরোজ মূলত মঞ্চ নাটকের জুটি। অনন্ত ও নূনা একই দলের সদস্য। ‘প্রাঙ্গণেমোর’ দলের প্রধান হিরা। এই দলের অসংখ্য নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন হিরা। আর সেগুলোর বেশির ভাগেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নূনা। মঞ্চ নাটকের অভিজ্ঞতা থেকে হিরা আসেন সিনেমায়। ২০১২ সালে হিরা পরিচালনা করেন তার প্রথম চলচ্চিত্র। ‘ও আমার দেশের মাটি’ নামের ছবিটিতে অন্যতম প্রধান অভিনেত্রী ছিলেন নূনা। ছবির অপর দুটি চরিত্রে ছিলেন আমিন খান ও তমা মির্জা। নূনার সিনেমায় অভিনয়ের প্রথম অভিজ্ঞতা ১৯৯৫ সালে।

বদরুল আনাম সৌদ ও সুবর্ণা মুস্তাফা
হুমায়ুন ফরীদিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। এই জুটির দাম্পত্য ছিল শোবিজে চর্চার বিষয়। ফরীদি-সুবর্ণার বিয়ে ভেঙে গেলে নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদকে বিয়ে করেন গুণী অভিনেত্রী। সৌদ বয়সে সুবর্ণার ছোট হওয়ায় এই বিয়ে নিয়েও কম আলোচনা হয়নি। একসঙ্গে টিভি প্রডাকশনে কাজ করতে গিয়ে সৌদ-সুবর্ণার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। এই অন্তরঙ্গতা গড়ায় বিয়ে অবধি। কিছুদিন আগে সৌদ সিনেমায় নেমেছেন। পরিচালনা করেছেন ‘গহীনে বালুচর’ নামে একটি ছবি। এ ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্ত্রী সুবর্ণা।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও তিশা
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও তিশা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন ২০১০ সালের ২৬ জুলাই। ফারুকীর প্রথম ছবি ‘ব্যাচলর’-এর নায়িকা ছিলেন অপি করিম। এরপর ফারুকীর বেশির ভাগ ছবিরই নায়িকা ছিলেন তিশা। ফারুকীর পরিচালনায় ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’ এবং ‘ডুব’ ছবিতে তিশা ছিলেন মুখ্য চরিত্রে। ফারুকীর মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমা ‘শনিবারের বিকেল’-এও তিশা অভিনয় করছেন। ফারুকী তার ছবিতেই শুধু তিশাকে নেন না, তার নির্মিত বিজ্ঞাপনচিত্রেও তিশা নিয়মিত কাজ করেন। বিয়ের আগে ফারুকীর নাটক-টেলিফিল্মে নিয়মিত অভিনয় করেছেন তিশা। কাজ করতে করতেই দুজনের প্রেম ও পরিণয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *