অনলাইনঅপরাধআইন আদালতকালিগঞ্জসাতক্ষীরা জেলা

কালিগঞ্জে যৌতুকের ১৫ লাখ টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে পাঠালেন তালাকনামা

স্টাফ রিপোর্টার: কালিগঞ্জে যৌতুকের দাবীকৃত ১৫ লাখ টাকা না পেয়ে নড়াইলের গ্রামীণ ব্যাংকের এক ব্রাঞ্চ মানেজার তার স্ত্রীকে তালাকনামা পাঠিয়েছেন। এতে কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের আশিকুড়া গ্রামে ঘটেছে।

অভিযুক্ত (স্বামী) গ্রামীণ ব্যাংকের নড়াইল জেলার নলদী ব্রাঞ্চ মানেজার ও সাতক্ষীরার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের আশিকুড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মাহমুদুল হাসান।

জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার আমিয়ান গ্রামের নুর ইসলাম ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পারিবারিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে জামাতার চাকরি বাবদ নগদ ৪ লাখ টাকা দিয়ে তার কন্যাকে ২ লাখ টাকার কাবিনমূলে বিয়ে দেন মাহমুদুল হাসানের সাথে। এছাড়াও মেয়ের সুখের জন্য বিয়ের পর জামাতাকে মোটর সাইকেল বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা এবং ২ লাখ টাকার বিভিন্ন আসবাবপত্র ও ফার্নিচার দেন।

বিয়ের চার বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থ্যাৎ চলতি বছরের ১৬ আগস্ট মাহমুদুল হাসান কোন ঝামেলা ছাড়াই তার স্ত্রীকে টাকা আনার জন্য নড়াইল থেকে বাপের বাড়ি কালিগঞ্জে রেখে যান। এরপর মাহমুদুল হাসান বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে টাকা চাওয়া শুরু করে।

এ নিয়ে ঝামেলা শুরু হলে মেয়ের সংসারের দিকে তাকিয়ে পিতা নুর ইসলাম সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের পিপি এড. আব্দুস সাত্তারের শরণাপন্ন হন। একপর্যায়ে পিপির বাসভবনে গত ২৪ অক্টোবর বসাবসির কথা থাকলেও মাহমুদুল হাসান ও তার স্বজনেরা সেদিন উপস্থিত হয়নি। এতো কিছুর পরেও ওই গৃহবধু তার শ্বশুরবাড়ীতে নিয়মিত যাতায়াত করতো।

একপর্যায়ে যৌতুকের ১৫ লাখ টাকা না পেয়ে গত ২৭ অক্টোবর উক্ত গৃহবধুকে তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম, শ্বাশুড়ি মাহফুজা খাতুন ও মামা শ্বশুর মাহমুদের সহযোগীতায় স্বামী মাহমুদুল হাসান এলোপাতাড়ি ভাবে চড়, কিল, ঘুষি মেরে রক্ত জমানো জখম করে। এতে ওই গৃহবধু কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে ২৯ অক্টোবর ছাড়পত্র নেয়। এরপর উক্ত ৪ জনকে আসামী করে আদালতে যৌতুকের মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৫৬৯। তারিখ: ০৩/১১/২০২৪।

পরবর্তীতে উপায়ন্তর না পেয়ে যৌতুক লোভী মাহমুদুল হাসান তার মামা (পুলিশ সদস্য) মাহমুদের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসা করে নেওয়ার কথা বলেন। ভাগ্নের সরকারী চাকরীতে লাগবে বলে ওই টাকা চান তিনি। যার অডিও ইতোমধ্যে এ প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। অডিওতে মাহমুদুল হাসানের মামা মাহমুদকে স্পষ্ট ভাবে ১৫ লাখ টাকা চাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে গৃহবধুর মামা শ্বশুর মাহমুদের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি টাকা চাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তারা (বোন, বোনজামাই ও ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান) টাকা চাইতে বলেছে বলে চেয়েছি। এখন মামলা হয়েছে। আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা মেনে নেবো।

তবে, গৃহবধুর স্বামী মাহমুদুল হাসান তালাকনামা পাঠানোর কথা স্বীকার করলেও আর কোন কথা না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

গৃহবধু বলেন, আমরা দুই বোন। কোন ভাই নেই। আমার বাবার টাকা বা সম্পত্তি আছে বলে তাকে দিতে হবে কেন? তাকে এর আগেও ৮ লাখ দেয়া হয়েছে। এমনকি বিয়ের দিন নগদে ৪ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। আমার বাবা যৌতুকের ১৫ লাখ টাকা দিচ্ছে না বলে আমাকে তালাক দিবে? দেশে কি আইন-কানুন নেই? সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমি বিজ্ঞ আদালতে ন্যায় বিচার প্রার্থণা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *