ফিচার

নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব – ২০২৫: মো. নূর আলম

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম যে অসাধ্য সাধন করতে পারে সেটা বাংলাদেশ সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই প্রত্যক্ষ করেছে। দারুণ সাহসী আর সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে উপেক্ষা করার আর সুযোগ নেই। তাদের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আধুনিক বিশ্বের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজে লাগাতে হবে। তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতি, বৈষম্য এবং দমন-পীড়ন নীতির বিরোধিতা করে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ। দেশের মধ্যমা বয়স ২৭ অর্থাৎ অর্ধেক জনগোষ্ঠীর বয়স ২৭ বা এরচেয়ে কম। এতেই বুঝা যায় আমরা সীমাহীন মানর শক্তি, সৃজনশীলতা ও উদ্যোগে ভরা এক দেশে পরিণত হচ্ছে – প্রযুক্তিকে বরণ করে নেওয়ার মাধ্যমে এ দেশ বিশ্বমঞ্চে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে। এ জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ – ২০২৫ উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব – ২০২৫’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উৎসব হবে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য। এই উৎসব সৃজনশীলতা ও উদ্যমের সম্মিলনে আগামীতে টেকসই জাতীয় ভবিষ্যৎ গড়ার এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

আমাদের তরুণ প্রজন্ম আমাদের ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। তারুণ্যের উৎসব – ২০২৫ তাদের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম যা তাদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং দক্ষতাকে উন্মোচিত করবে। তারুণ্যের উৎসব – ২০২৫ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত, সম্পৃক্ত এবং তাদের সীমাহীন সম্ভাবনাকে উদ্যাপন করার একটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই তরুণ। এই উৎসব তরুণদের প্রতিভা ও উদ্যোগকে কেবল উদ্যাপন করাই নয়, বরং তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করারও সুযোগ দেবে। শিল্পকলা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি এবং উদ্যোগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও দক্ষতাকে তুলে ধরতে তারুণ্যের উৎসব – ২০২৫ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

তারুণ্যের এই উৎসব তরুণদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং স্বপ্নকে তুলে ধরবে। শিল্প, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি এবং উদ্যোগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভার প্রদর্শনী হবে। এটি সরকারের তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝউএ)-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে তরুণদের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে এবং তাদের অবদান স্বীকৃত হবে।

বিপিএল বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মানচিত্রে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের প্রতিভা ও বিসিবির সাংগঠনিক দক্ষতাকে তুলে ধরেছে। তরুণদের অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি বিপিএল ২০২৫ বাংলাদেশের জন্য জাতীয় গর্বের একটি প্রতীক। এটি শুধু একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়; এটি আমাদের ঐক্যের শক্তি এবং সাফল্যের নিদর্শন। ২০২৫ সালের বিপিএল আরও বড়, আরও আকর্ষণীয় এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নততর হবে। আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি নতুন মান তৈরি করবে।

ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের মনস্থির করার ও স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমি বিশেষ করে তরুণদের তাদের মনস্থির করতে, চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করি। স্বপ্ন হলো পরিবর্তনের সূচনা। স্বপ্ন দেখলে পরিবর্তন হবে। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন, তবে এটি কখনোই হবে না। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমি বিশ্বের জন্য কী করতে পারি? একবার আপনি কী করতে চান, তা বুঝতে পারলে আপনি তা করতে পারবেন, কারণ আপনার সেই ক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম এখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। তারা যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার কারণে নয়, বরং তাদের হাতে প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে বলে।দেশের তরুণ-যুবকেরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। তরুণেরা রাজনীতিবিদ নয়। কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাও তারা করছে না। তবে তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন দেশ চায়।’ (সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ০৩ নভেম্বর ২০২৪)

তারুণ্য নির্ভর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে লিড মিনিস্ট্রি হিসাবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বিস্তর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিপিএল-২০২৫ কে সাজানো হয়েছে তরুণদের জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের একটি সোপান হিসাবে। নতুন আঙ্গিকের এই বিপিএল এর লক্ষ্য দেশের যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা, ক্রিকেটের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। এর মাধ্যমে গ্রাম, শহর, পুরো জাতি, সুবিধাপ্রাপ্ত – সুবিধাবঞ্চিত সকল শ্রেণীর তরুণ-যুবদের মাঝে সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত মূল্যবোধ প্রচার করা। এই পৃথিবী এবং তার সন্তানদের রক্ষা করতে তরুণদের যে সুপ্ত ও অজানা সম্ভাবনা আছে, সে সম্পর্কে সচেতন করতে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে এই টুর্নামেন্ট।

এবারের তারুণ্যের উৎসবের প্রতিপাদ্য “এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই”। তারুণ্যের উৎসব – ২০২৫ এর উদ্দেশ্য হলো ক্রিকেটের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা। তরুণদের মাঝে সামাজিক ও পরিবেশগত মূল্যবোধ প্রচার করা। দেশীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলা। দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করা। যুবকদের আত্ম-উন্নয়ন ও চরিত্র গঠনের সুযোগ প্রদান করা এবং নেতৃত্বের গুণমান, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহানুভূতি ধারণ করা।

তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে সরকারি-বেসরকারি সম্মিলনে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ১) বর্জ্য-শুন্য ক্রিকেট ম্যাচ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে দেশীয় খেলাধুলাকে উৎসাহ প্রদান; ২) আত্নকর্মী, যুবসংগঠন, যুব উদ্যোক্তা ও তরুণদের উদ্যোগে যুব সমাবেশ আয়োজন; ৩) যুব উদ্যোক্তাদের স্থানীয় শিল্প ও পণ্য প্রদর্শনী, উদ্যোক্তা সম্মেলনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি; ৪) ণড়ঁঃয ঋবংঃ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, দেশীয় সংস্কৃতিকে উৎসাহ প্রদান; ৫) নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবদের ভাবনা বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালা ও ফেস্টিভ্যাল আয়োজন; ৬) জনসচেতনতামূলক স্টেডিয়াম পরিচ্ছন্নতা এবং স্থানীয় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং বর্জ্য-শূন্যতার প্রচার; ৭) জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের স্মৃতি রক্ষার্থে চিত্র-প্রদর্শন ও ডেটাবেইজ ও ওয়েবসাইট তৈরি; ৮) উদ্ভাবন ও জনমুখী বাংলাদেশ গঠনে প্রতিভা অন্বেষণে কুইজ, রচনা, বিতর্ক ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা; ৯) জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে যুব-জনতার সাহসী, উদ্ভাবনী ও জনমুখী উদ্যোগকে ডেমোক্রেসি অ্যাওয়ার্ড প্রদান।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব – ২০২৫ হতে পারে যুবদের স্বপ্ন জাগিয়ে তোলার অন্যতম প্রয়াস। উজ্জীবিত যুব হবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। স্বপ্নপূরণের এ যাত্রায় রূপকার হবে যুবরাই। আর তা বাস্তবায়নে সার্বিক সহায়তা দেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

লেখকঃ জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *