কালিগঞ্জে প্রেরণার নির্বাহী প্রধানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান
স্টাফ রিপোর্টার: কালিগঞ্জে বহুল বিতর্কিত এনজিও প্রেরণার নির্বাহী প্রধান শম্পা গোস্বামী ও তার ভাই গোবিন্দ গোস্বামীর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকালে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
কালিগঞ্জ সোহরাওয়ার্দী পার্ক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট জাফরুল্লাহ ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন, কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাহিত্যিক গাজী আজিজুর রহমান, উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক আক্তারুজ্জামান বাপ্পি, সাতক্ষীরা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা ব্যবসায়ী আজিজ আহমেদ পুটু, বিএনপি নেতা জিন্নাত খান ও ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোজাহার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান প্রেরণার নির্বাহী প্রধান শম্পা গোস্বামী ও তার ভাই গোবিন্দ গোস্বামী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী। শম্পা ৭/৮ বছর আগে প্রেরণা নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান খুলে তার নির্বাহী প্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও তিনি বিদ্যালয়ে ক্রমাগত অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনানুগ প্রতিকারের ব্যবস্থা নিলে তিনি তৎকালিন কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মামলা দেওয়া সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করতো। শম্পা প্রায় একাধারে ৩ বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।
শম্পার এনজিও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের অব্যবহৃত হোস্টেল মাসিক ভাড়া চুক্তিতে নিলেও ৭ বছর কোন প্রকার ভাড়া প্রদান করেনি। বিগত সরকারের পতনের পর শম্পা তার এনজিও প্রতিষ্ঠান উপজেলা ভূমি অফিসের পাশে একটি বাড়িতে স্থানান্তর করে। ওই অফিসের পাশে নারায়নপুর মৌজায় জেলা পরিষদের সাবেক সহকারী প্রকৌশলীর অফিস এবং বাসভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় ওই অফিসের জায়গা অকৃষি এবং জনগুরুত্ব হওয়া শম্পা গোস্বামী জেলা পরিষদের দু’একজন কর্মচারির সাথে পরস্পর যোগসাজসে অকৃষি জমিকে কৃষি জমি ঘোষণা দিয়ে ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য আংশিক জমি ইজারা গ্রহণ করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করে এনজিও’র সাইনবোর্ড স্থাপন করে।
গত ১০ অক্টোবর জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এবং শম্পা গোস্বামী কর্তৃক নির্মিত প্রাচীরের মধ্যে থাকা কিছু গাছ শম্পা কর্তৃক কর্তনের খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শর্মিষ্ঠা সরকার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভ্রাম্যামাণ আদালত পরিচালনা করে শম্পা গোস্বামীকে দুই দিনের কারাদন্ড ও ১০০ টাকা জরিমানা করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন (মামলা নং-১৪/২০২৪)। একই দিন শম্পা কারামুক্ত হয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে শম্পার ভাই গোবিন্দ গোস্বামী কালিগঞ্জের মানুষদের উদ্দ্যেশ্যে করে ‘‘অসভ্য , ইতর, খারাপ, বেদাদপ, জানোয়ার, বলে উক্তি করে এবং জানান তার দিদির বিরুদ্ধে ২০১২ সাল থেকে কালিগঞ্জবাসী লেগেছে। কেউ কেউ তার দুর্গা মাতা দিদির পায়ে ধরে বসেছিলো ইত্যাদি উক্তি করে কালিগঞ্জবাসীকে অপমানিত করে। শম্পা গোস্বামী মোবাইল কোর্টের আদেশকে ‘‘মব জাস্টিস’’ বলেও ফেসবুকে প্রচার করে। এছাড়াও শম্পা দীর্ঘদিন যাবত তার ফেসবুকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোষ্ট করে যাচ্ছে বলে বক্তারা জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, শম্পা ইতিপূর্বে কালিগঞ্জের নলতা ও মহৎপুরে সরকারের মালিকানাধীন ও জনসাধারণের ব্যবহৃত জমি জবর দখলের চেষ্টা করে জনগণের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়। শম্পা একজন শিক্ষক হয়েও প্রকাশ্য ধুমপান ও মাদকের সাথে যুক্ত বলে বক্তারা মানববন্ধরে জানান। তারা শম্পা ও তার ভাই গোবিন্দ গোস্বামীর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এদিকে অভিযুক্ত শম্পা গোস্বামীর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি।