অনলাইনকৃষিলিডসদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরার জলাবদ্ধ এলাকায় খাবার পানির সংকট প্রকট: চারপাশে দূষিত ও দুর্গন্ধ পানি

মেহেদী হাসান শিমুল: দীর্ঘ দিন ধরে বন্যায় ভাসছে সাতক্ষীরায় সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা আংশিক এলাকা । যত দিন যাচ্ছে ততই বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। সরজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা, বড়দল, বাগডাঙ্গা, জিয়ালা, গোবিন্দপুর,নাথ পাড়া, তালতলা, কাজিরবাশা, বালুইগাছা, ধুলিহর সানাপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকা প্রায় দুই মাস অতি বৃষ্টির কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় ভুগছে।

সাতক্ষীরার ধুলিহর ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষ বন্যার পানিতে প্লাবিত ইতিমধ্যে ঘর বাড়ি ছাড়ছে অনেকেই। দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার কারণে পানি দূষিত হয়ে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ।

দীর্ঘদিন ধরে বন্যায় প্লাবিত হওয়াই হাঁস, মুরগি, ছাগল মরে দূগন্ধ হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এ সমস্ত এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় মল-মূত্র পানিতে ভেসে একাকার, ধুলিহর ইউনিয়নে বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত এলাকায় গভীর নলকূপ সব পানিতে তলিয়ে গেছে। খাবার পানির সংকটে ভুগছে এলাকাবাসি, ধুলিহর গোবিন্দপুর গ্রামের গ্রামের জরিনা বেগম নামে ৬০ উর্দ্ধে মহিলা তিনি জানান ১ দিন ভাত না খেয়ে বেঁচে থাকা যায় কিন্তু পানি না খেয়ে থাকা যায় না, আর সেই পানিটা যদি ময়লা দূষিত থাকে তাহলে কিভাবে আমরা বেঁচে থাকবো। পানি খাওয়ার মত বিশুদ্ধ পানি এই এলাকায় নেই । ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হয়। তবে সেই পানি আনতে লাগবে নৌকা বা ভেলায়।

আব্দুল মান্নান নামে ব্যাক্তি জানান আমাদের এলাকায় খাবার পানির সংকট প্রকট আকারে ধারণ করেছে।সেই সাথে রান্না খাওয়ার জন্য কোন ভালো পানি আমাদের এলাকায় নেই। ধুলিহর বালুইগাছা গ্রামে সাংবাদিক সাহাদাত হোসেন বাবু বলেন আমাদের এলাকায় গত ৫/৬ বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছি তবে এবারের জলাবদ্ধতা ভয়াবহ বন্যায় আকার ধারণ করেছে। আমাদের এলাকায় অনেক দিন ধরে পানিতে প্লাবিত হওয়াই অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। খাবার সংকট দেখা দিয়েছে সেই সাথে খাবার পানির সংকটে ভুগছে এলাকাবাসি। তবে জলবদ্ধতা কবলিত এলাকায় সরকারি এবং বেসরকারিভাবে তেমন সাহায্য সহযোগিতা কেউ পায়নি। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোন মেডিকেল ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থা করিনি। তিনি আরো বলেন ধুলিহর ইউনিয়নের এমন দূর অবস্থা দেখার মত কোন জন প্রতিনিধির দেখা চোখে মেলিনি।

বড়দল গ্রামের ইউপি সদস্য এনামুল হক খোকন জানান আমাদের এলাকায় কোন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলে তার দাফন করার মতো জায়গা নেই সব পানিতে প্লাবিত।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নে বিগত ৬-৭ বছর ধরে ভারী বর্ষণে প্রতিবছর ৬ মাস ধরে উপজেলার ধুলিহর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থায়ী জলবদ্ধতা থাকে। তবে এবারের অতি বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। খাল, বিল, রাস্তা ঘাট, পুকুর বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদ মন্দির পানিতে প্লাবিত। ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা,বাগডাঙ্গা,বড়দল, জিয়ালা, গোবিন্দপুর,নাথপাড়া, তালতলা, বালুইগাছা, ধুলিহর সানা পাড়া, গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। প্রতিটি গ্রামের ভিতরে রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। যত দিন যাচ্ছে তত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান আমার ঘরের ভিতরে পানি, রান্না ঘরে পানি পায়খানা ঘর পানিতে ভেসে গেছে। তবে জলবদ্ধতা নিরশনে বেতনা নদীর বিকল্প নেই। অপরিকল্পিত মাছের ঘের আর পাওবোর অপরিকল্পিত স্লুইস গেট সর্বনাশ ডেকে এনেছে এ অঞ্চলে । বেদনা নদী পূর্ণ খননের কাজ শুরু হলেও তিন বছর ধরে এখনো নদী খননের কাজ শেষ হয়নি। সে কারণে বিগত কয়েক দিনের চলতি বছরেও বেতনা নদীর দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বেতনা নদীর তীরবর্তী ২৫-৩০ গ্রামে ফসলি জমি, মৎস্য ঘের পুকুর পানিতে ডুবে গেছে।

জলাবদ্ধতায় নাকাল বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী ৬ ইউনিয়নের মানুষ। ইউনিয়নগুলো হল বল্লী ঝাউডাঙ্গা, লাবসা, ব্রহ্মরাজপুর ,ধুলিহর, ও ফিংড়ী। এছাড়াও সাতক্ষীরা পৌরসভার পূর্বাংশের মানুষের জলাবদ্ধতায় নাকানি- চুবানি খাচ্ছেন। জলবদ্ধতা এখন এখন এ অঞ্চলের মানুষের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গণমাধ্যমকর্মী জি,এম আমিনুল হক বলেন, জলবদ্ধতা নিরসনে সরকার টাকা বারাদ্ধ দেয়, সেই টাকা যায় জলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। বেতনা নদী খননের নামে খাল খনন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেই খালে পানি সরে না। জলবদ্ধতা কবলিত বিলগুলো হলো-বুড়ামারা, পালিচাঁদ, ঢেপুরবিল, চেলারবিল, হাতিশালার (হাচ্চালার) বিল, কচুয়ার বিল, হাজিখালি বিল, ডাইয়ের বিল, রামচন্দ্রপুরবিল ও ঘুড্ডিরবিল। এসব বিলে বছরের পর বছর বর্ষাকালে পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। অপরিকল্পিতভাবে বেড়িবাঁধ দিয়ে করা হয়েছে মাছের ঘের। স্থানীয়রা বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরা সদরের কয়েকটি ইউনিয়নের ২৫-৩০টি গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়াও ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুর, বালিথা, শিমুল বাড়ীয়া, এল্লারচর, ফিংড়ী, গাভা, ব্যাংদহ, জোড়দিয়া, গোবরদাড়ী, সুলতানপুর, মজলিসপুর, হাবাসপুর ও কুলতিয়াসহ ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা, নুনগোলা, রামচন্দ্রপুর, চেলারডাঙ্গা, বড়খামার, মেল্লেকপাড়া, উমরাপাড়া বাঁধন ডাঙ্গাসহ সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫টা গ্রাম স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়। গত কয়েক বছর যাবত বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত এই এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী।

প্রতি বছর জুলাই মাস আসতে না আসতেই সামান্য বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরার বেতনা পাড়ে অবস্থিত এসব গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়।এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ বালাই। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।

এছাড়া পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় এলাকায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এলাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জলাবদ্ধতার কারণে এলাকায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় ধুলিহর গ্রামের গবাদিপশু চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান বন্যার গোয়াল ঘরে পানিতে প্লাবিত বিচালী ও খড়গাদার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, এসব গবাদিপশু নিয়ে চাষীরা বিপাকে পড়েছে।

সচেতন এলাকাবাসী এলাকার স্থায়ী জলবদ্ধতা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *