সাতক্ষীরার ট্যাংরায় আদালতের আদেশ না মেনে জায়গা দখল ও দেবত্ব সম্পত্তি দখল করে কাটা হচ্ছে গাছ
স্টাফ রিপোর্টার: আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি জবরদখল করে বাড়ি বানানো ও সদর সহকারি কমিশানার (ভূমি) এর নির্দেশ উপেক্ষা করে গায়ের জোরে দেবত্ব সম্পত্তির জায়গা দখল করে চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ট্যাংরা গ্রামের ঘটনা এটি। এ নিয়ে এলাকায় অশান্তি বিরাজ করছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের তারাপদ মিত্রের ছেলে বৃদ্ধ বলঅই মিত্র জানান, পৈতৃক সূত্রে বাঁশদহা মৌজার এসএ ২৩১ দাগের এক একর ২১ শতক সম্পত্তি মালিক হন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিতে তিনি শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে রয়েছেন। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর একই গ্রামের ইসলাম মোল্লার ছেলে আব্দুল গফুর মোল্লা তাদের কাছে টাকা পাব দাবি করে ওই জমি দখল করার চেষ্টা শুরু করে। একপর্যায়ে তার মেয়ে স্বপ্না রানী বাদি হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে গত ৫ সেপ্টেম্বর পিটিশন ১৭১২/২৪ মামলা করেন। বিচারক বিষ্ণুপদ পাল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ও জমির মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদর সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেন। কোন পক্ষই ওই জমিতে স্থাপনা গাড়তে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়।
উভয়পক্ষকে এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করা হয়। এরপরও আইন অমান্য করে আব্দুল গফুর টিন ও বেড়া দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করলে স্থানীয় ভাবে শালিসি হয়। শালিসে উপপরিদর্শক রাশেদ ও অভীক বড়াল উপস্থিত থেকে আদালতের রায় মেনে চলার পরামর্শ দেন।
সরেজমিনে বৃহষ্পতিবার দুপুরে ট্যাংরা গ্রামে যেয়ে দেখা গেছে আব্দুল গফুর তার স্বজনদের নিয়ে নির্মাণাধীন ঘরের মধ্যে চৌকিতে বসিয়ে স্বপরিবারে ছবি তুলছেন। স্থানীয় রাবেয়া খাতুন, মরিয়ম খাতুন, রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন জানান , নির্মাণ কাজ থেমে নেই। বলাই মিত্র পরিবারের কেউ দেখার নেই। শেখ হাসিনা সরকার চলে যাওয়ার পর থেকে বলাই মিত্রের জমি দখল চলছে।
ট্যাংরা গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় কালী ঠাকুরের বেদীতে যেয়ে দেখা গেছে সুরত আলী ও তার ছেলেসহ কয়েকজন কালী বেদীর জন্য দেবত্ব সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডকৃত ১২ শতক জমির কিছু অংশ জবরদখল করে ওই জমিতে থাকা বিশাল আকৃতির শিশুফুল গাছ কেটে নিচ্ছেন। কয়েকটি বড়মাপের ডাল কেটে নিয়ে গেছে সুরত আলীর ছেলে শহীদুল ইসলামও তার সহযোগীরা। গত শুক্রবার ওই গাছ কাটার চেষ্টা করলে বাধা দেন বলঅই মিত্র ও তার পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ করা হয় সদর সহকারি কমিশনারকে (ভূমি)। ওই দিন বাঁশদহা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার মোঃ বাশারত হোসেন মাপযোগ করে সীমানা নির্ধারণ করার পর গাছ কাটার পরামর্শ দেন। একইভারে বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে ওই গাছের ডাল কাটা শুরু হলে সহকারি কমিশনারকে জানান বলাই মিত্র। সকাল সড়ে ১০টার দিকে আসেন তহশীলদার বাসারত হোসেন। তার কথা না শুনে বড় বড় ডাল কেটে নিয়ে পরে গছে কেটে নেওয়ার চেষ্টা করেন সুরত আলীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জমি মেপে গাছ কাটছে বলায় এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোন মাপ জরিপের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তারা। বলাই মিত্র অভিযোগ করে বলেন, ইচ্ছামত জায়গা ঘিরে গাছ কেটে নিচ্ছে সুরত আলী। শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর থেকে সুরত আলী ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
এ ব্যাপারে ট্যাংরা কালীপুজা উদযাপন কমিরি সভাপতি বাপ্পী চ্যাটার্জী জানান, মাপ জরিপ সঠিক না হলেও ওই গাছ কাটলে তিনভাগের এক ভাগ সুরত আলী ও দুই ভাগ কালিপুজা পরিচালনা কমিটি পাবে বলে মৌখিত সিদ্ধান্ত হয়। এখন সুরত আলী মানছেন না। তহশীলদার বৃহষ্পতিবার নিষেধ করলেও তারা মানেননি। একই ভাবে বলাই মিত্রের জমি জবরদখল অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
ট্যাংরা গ্রামের মোশাররফ হোসেন বলেন, কালিবেদীর নামে রেকর্ড হওয়া ১২ শতক জমি কয়েকবার মাপ জরিপ হলেও কোন নকশা ও আপোষ নামা তৈরি হয়নি। পুরাতন পিলার থেকে দক্ষিণে চার ফুট কালীবেদীর দিকে সরিয়ে ইট বসিয়ে ঘেরা দিয়ে দখলে নিয়ে জোর করে শিশু গাছ কাটা হয়েছে।
বাঁশদহা ইউপি সদস্য মোর্শেদুল হক জানান, এ নিয়ে শালিস হয়েছে। জমি মাপ হয়েছে। লিখিতভাবে নকশা হয়নি। উভয়পক্ষের লোকজন বিষয়টি নিয়ে যথাযথ সিদ্ধান্তে না আসায় এভাবেই বলাই মিত্রের দখলে থাকা গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। তহশীলদার বাশারত হোসেন নিষেধ করার পরও তবে বড় বড় ডাল কেটে নিয়ে গেছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তারা গাছের গুড়ি কেটেছে। ওই গাছটির দাম এক সময় ২৫ হাজার ৫০০ টাকা ধার্য করা হয়। তবে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে গফুর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করেন।
ট্যাংরা গ্রামের সুরত আলীর ছেলে শহীদুল ইসলাম জানান, কয়েকবার মাপ হয়েছে। লিখিত সিদ্ধান্ত না হলেও তারা উভয়পক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা সীমানা নিধারন করে বেড়া দিয়ে দখলে নেওয়া শিশু গাছ কাটছেন। তবে গাছ কেটে তারা বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, মেপে বলাই মিত্র পেলে তাকে ওই গাছের মূল্য ফেরৎ দেওয়া হবে।
বাঁশদহা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার বাসারত হোসেন জানান, শুধু বৃহষ্পতিবার নয়, কয়েকদিন আগেও তিনি সহকারি কমিশনারের (ভূমি) নির্দেশে সুরত আলীকে মাপ জরিপ সঠিক না হওয়া পর্যন্ত গাছ কাটতে মানা করেছিলেন। তারা তা শোনেনি। বিষয়টি তিনি তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর সহকারি কমিশনার (ভূমি) অতীশ সরকারের সঙ্গে তার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি তাহা রিসিভ করেননি।