কলারোয়াশিক্ষাঙ্গনসাতক্ষীরা জেলা

কলারোয়ার চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজের সভাপতি হয়েছেন শিক্ষাবিদ মোঃ আবু নছর

এস এম ফারুক হোসেন, কলারোয়া: নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান কলারোয়ার চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজের সভাপতি হয়েছেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো. আবু নসর। ১৯৯৭ সালে নিজের জন্মভূমিতে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করলেও সময়ের বিবর্তনে ও নানান প্রেক্ষাপটে যোগ্যতা থাকা সত্বেও সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব কখনো তাকে করা হয়নি। অবশেষে বর্তমানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পেলেন বর্ষিয়ান ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আবু নসর। এর আগে তিনি ওই কলেজের গভর্নিং বডির একাধিকবার সদস্য ছিলেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত ৬ অক্টোবরের এক পত্রে চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজের এডহক কমিটি গঠনের চিঠি অধ্যক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। চিঠিতে- কলেজ পরিচালনা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে অব্যাহত রাখার স্বার্থে ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত সভাপতি মো. আবু নসর, বিদ্যুৎসাহী সদস্য রইছ উদ্দীনের নাম উল্লেখ করে ৫সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ পদাধিকারবলে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এডহক কমিটির মেয়াদ ৬ মাস। এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত গভর্নিং বডি গঠনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রফেসর মো. আবু নসর শিক্ষাবিদের পাশাপাশি কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক ও লেখক। তিনি ‘কলারোয়া উপজেলার ইতিহাস’ ও ‘বাঙালি বাবু’ নামে দুটি বইয়ের লেখক। তার লেখা প্রবন্ধ ও কলাম নিয়মিত জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজের নবঘোষিত গভর্নিং বডির নতুন সভাপতি প্রফেসর আবু নসর কলারোয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বপালন শেষে ২০০৫ সালে অবসরগ্রহন করেন। এর আগে ১৯৭০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি একই কলেজের প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক ও পরবর্তীতে ২০০১ সালে উপাধ্যক্ষের পদে ছিলেন। চাকরি জীবনের শুরুতে ১৯৬৯ সালে তিনি তালা কলেজ, সরকারি চাকরি জীবনে মাগুরা সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে সহযোগী অধ্যাপক, যশোর সরকারি সিটি কলেজে উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বছর দুয়েক যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক পদে দায়িত্বে ছিলেন। তার সময়কালে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড স্থাপিত হয়, তিনি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডেরও প্রতিষ্ঠাকালীন কলেজ পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি চুক্তিভিত্তিক খুলনা হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজের (পরবর্তীতে সরকারি) অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ডেপুটি রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এছাড়া তিনি ট্রেইনড ইন কিউসো (কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি সার্ভিস ওভারসিস) ট্রেনিং, ঢাকার নায়েমের ট্রেনিং-এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন, সেকায়েপের ট্রেনিংপ্রাপ্ত, বরিশালে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কর্মশালায় ট্রেনিংপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন কর্মশালায় উজ্জল সাক্ষর রেখেছেন।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকাকালীন খুলনা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের ১৬টি জেলার ১০২টি উপজেলার দেড় শতাধিক নতুন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ অনুমোদন দেন। এছাড়াও স্বীকৃতি দেন বহু কলেজ। সেসময় কলেজ পরিদর্শক হিসেবে প্রফেসর আবু নসরের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে কলারোয়ার কাজিরহাট কলেজ, ছলিমপুর হাজী নাছির উদ্দীন কলেজ, চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজ, সাতক্ষীরা ঝাউডাঙ্গা কলেজ, আশাশুনির প্রতাপনগর কলেজ, কালিগঞ্জের রতনপুর ডিআরএম কলেজ, দেবহাটা কলেজ, শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ কলেজ, শার্শার বেনাপোল কলেজ, গোগা কলেজসহ সাতক্ষীরাঞ্চলের বহু কলেজের অনুমতি, অনুমোদন, স্বীকৃতি, শাখা অনুমোদন ইত্যাদি প্রদান করেন।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আগে তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত একটানা ১২ বছর কলারোয়ার চন্দনপুর ইউনিয়নের পরিষদের বারবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৫ সালে দেশের প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সামান্য ভোটে পরাজিত হন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের শেষের দিকে কিছু দিনের জন্য জাগদল গঠন করলে কলারোয়ায় সেই দলকে সংগঠিত করতে অন্যতম ছিলেন অধ্যাপক আবু নসর। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সরাসরি তত্ববধায়নে জাগদল থেকে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করলে ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপিকে সংগঠিত করতে দায়িত্বপালন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালের ৯ মে বুধবার কলারোয়া ফুটবল মাঠে জনসভা করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ওই জনসভায় ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক আবু নসর সরাসরি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাছে চন্দনপুর ইউনিয়নের চান্দুড়িয়া থেকে সুলতানপুর অভিমুখি সেচ প্রকল্পের প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ কাচা ড্রেনটি পাকা করণের জন্য দাবি জানালে তাৎক্ষনিক প্রেসিডেন্ট জিয়া ২লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। ১৯৭৯ সালেই সরকার থেকে প্রথমবার সাদাকালো টেলিভিশন উপহার পান তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নসর।

পুরোদস্তুর শিক্ষাবিদ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত আবু নসর ১৯৮০ সালে কলারোয়া প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সেসময় তিনি জাতীয় পর্যায়ে দৈনিক আজাদ, দৈনিক বাংলা, দৈনিক ইত্তেফাক, দি ডেইলি ট্রিবিউনসহ কয়েকটি পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।

তিনি বর্তমানে কলারোয়া উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন’র সভাপতি ও জেলার সদস্য, কলারোয়া উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ও জেলার উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালনের পাশাপাশি তিনি বহুবার ভারত ও নেপাল সফর করেছেন।

১৯৪৭ সালের ১৫ জুলাই জন্ম নেয়া প্রতিভাবান মো. আবু নসর ১৯৬৩ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে ১৯৬৮ সালে বি.কম অনার্স ও ১৯৬৯ সালে মাস্টার্স (এম কম) সম্পন্ন করেন।

প্রফেসর আবু নসর কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের গয়ড়া গ্রামের প্রয়াত শামছুল হক ও প্রয়াত সায়রা খাতুনের জ্যেষ্ঠ পুত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *