জাতীয়ধর্ম

শারদীয় দুর্গোৎসব: সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মণ্ডপে পূজা শুরু

ডেস্ক রিপোর্ট: দেবীর বোধন ও ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী আজ বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মন্দির ও মণ্ডপে বোধনের ঘট স্থাপন করা হবে। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে।

এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর জানান, গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আজ সকাল ৮টা ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এবারের আয়োজনের মধ্য রয়েছে দেবীর বোধন (পঞ্জিকার লগ্ন অনুযায়ী প্রতিমা স্থাপনে বেদী প্রতিষ্ঠা), আমন্ত্রণ ও অধিবাস, সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশনসহ নানা অনুষ্ঠান।

তিনি আরো জানান, মহাষষ্ঠীর পর আগামীকাল ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ১২ অক্টোবর মহানবমী ও দশমী পূজা এবং ১৩ অক্টোবর বিসর্জন। বিসর্জনের আগে রাজধানীসহ সারা দেশে বিজয়া শোভাযাত্রা হবে।

এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি এবং ঢাকা মহানগরে ২৪৮টি মণ্ডপে পূজা হয়। সারা দেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমলেও ঢাকায় চারটি পূজামণ্ডপ বেড়েছে।

গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা কমিটির সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জয়ন্ত কুমার দেব জানান, যেখানে খোলা জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেলে দুর্গাপূজা করা হবে, সেখানে সরকার নির্দেশিত বিধি-বিধান মেনে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে পূজা আয়োজন করতে হবে। প্রতিমা নির্ধারিত দিনেই বিসর্জন দিতে হবে। বিসর্জনের দিন শোভাযাত্রায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।

সারা দেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা জানান, প্রস্তুতি নিয়ে অপারগ হওয়ায় এবং বন্যার কারণেও দুর্গত এলাকায় কোথাও কোথাও এবার পূজার আয়োজন করা হয়নি। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সেনাপ্রধান। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় আসন্ন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এবার পূজামণ্ডপকে কেন্দ্র করে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। ফলে এবারের পূজা খুব ভালোভাবে হবে। কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না।

গতকাল সকালে গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন ও মতবিনিময়ের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাব্যবস্থায় প্রতিবার তো পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকে, এবার বাড়তি হিসেবে বিজিবি ও সেনাবাহিনী যুক্ত হয়েছে।

এদিকে আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় কোনো থ্রেট নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান। তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় মণ্ডপ এলাকা, বিসর্জন শোভাযাত্রা ও বিসর্জনের সময় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। তবে এ সময় সব ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে সব ধরনের পটকা ও আতশবাজি ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *