কালিগঞ্জের সন্ত্রাসী ইয়ার আলী গ্রেপ্তার: তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ভাণ্ডার উদ্ধার সময়ের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের বহুল আলোচিত সশস্ত্র ডাকাত দলের সদস্য ইয়ার আলীসহ তিনজনকে তিনটি চোরাই মটর সাইকেলসহ গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের সহযোগী ও অস্ত্রের ভাণ্ডারের সন্ধানের জন্য তাকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ সময়ের দাবি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সোতা, শংকরপুর, রঘুনাথপুর, বালিয়াডাঙা ও কালিকাপুরসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বিষ্ণুপুর, মৌতলার কয়েকটি গ্রামের যুবক থেকে বৃদ্ধরা জানান, ডাকাতদল প্রসিদ্ধ তাদের ইউনিয়ন কৃষ্ণনগর। এ ডাকাত দলের কারণে জেলা ও জেলার বাইরে তাদের ইউনিয়নের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।
গত ৫ আগষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনরা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর শঙ্করপুর গ্রামের আব্দুর জব্বার তরফদারের তিন ছেলে ইয়ার আলী, বাহার আলী ও জহুর আলীসহ ছয়জন সন্ধ্যা থেকেই ওয়ান শুটার গান নিয়ে ইউনিয়ন জুড়ে লুটপাট, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি শুরু করে। তাদের প্রকাশ্য দিবালোকে চাঁদাবাজি ও মারপিটে বিশেষ করে শিক্ষক, ব্যবসায়ি ও সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি বালিয়াডাঙা বাজারের সার্বজনীন দুর্গামন্দিরের সামনে কালিগঞ্জ থানা পুলিশের শান্তি সভায় ডাকাত দলের সদস্যদের উপস্থিতি তাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। ইচ্ছা থাকলেও মুখ খোলার সাহস নেই কারো।
এরই মধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওই ডাকাত দলের প্রধান ইয়ার আলী সাতক্ষীরা শহরতলীর বাইপাস সড়কের লাবসা মোড় থেকে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তারই স্বীকারোক্তি অনুযায়ি ওই দলের সদস্য কালিকাপুরের শাহীন ও মহিবুল্লাহ বাবু তিনটি চোরাই মটর সাইকেলসহ গ্রেপ্তার হলেও তাদের দলের অন্য তিন সদস্য বাহার আলী, জহুর আলীসহ কয়েকজন পালিয়ে আছে।
ইয়ার আলী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাহার আলী ও জহুর আলীসহ একটি টিম দেবহাটার খলিষাখালিতে নলতার আজিজুর রহমান ও আনারুল ইসলামের জবরদখলকৃত ১৩১৮ বিঘা ঘের পাহারা দিচ্ছে। বাহার আলী ও জহুর আলীর সার্বিক দায়িত্ব পালন ক করছেন তালা উপজেলার মাঝিযাড়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে ডাকাতি, অস্ত্র ও হত্যাসহ কমপক্ষে একডজন মামলার পলাতক আসামী পাখরা হালিম।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, কুখ্যাত সন্ত্রাসী ইয়ার আলীর বিরুদ্ধে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানায় ২০২৩ সালের ৬ আগষ্ট মটর সাইকেল চুরির মামলা, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায় ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই ১০ নং চুরি ও ২৮ জুলাই ২০ নং ডাকাতি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর কালিগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে ১৯ নং মামলা, একই থানায় ২০১১ সালের ১২ জুন জিআর-১১১/১১ নং চুরির মামলা, সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জিআর-১৪৪/১০ নং মামলা, চাঁদাবাজি ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৪ নং মামলা, হত্যা চেষ্টা ও চুরির অভিযোগে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ৫ নং মামলা , ২০১৮ সালের পহেলা এপ্রিল ১ নং হত্রা চেষ্টা মামলা, ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন হত্যা মামলা, ওই বছরের ৯ অক্টোবর ৩ নং চুরির মামলা, ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে যথাক্রমে ৮ ও ৯ নং মামলা, ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি শ্যামনগর থানায় অস্ত্র আইনে ৩২ নং মামলা, যশোর কোতোয়ালি থানায় ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল ৪৭ নং জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা, চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানায় ১৭ নং দ্রুত বিচার আইনে কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাফিয়া খাতুনের গাড়ি পোড়ানো , গত ২৪ আগষ্ট কালিগঞ্জ থানায় কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাফিয়া খাতুনের বাড়ি পোড়ানো ১১ নং মামলা রয়েছে।
তবে কয়েক মাস আগে সাতক্ষীরা সদরের যোগরাজপুরের অবসরপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ কালামের বাড়িতে ও তার এক সপ্তাহ পরে একই এলাকার নাসিরউদ্দিনের বাড়িতে ডাকাতি ও দেবহাটার জগন্নাথপুরে মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষসহ জেলার কমপক্ষে ২০টি বাড়িতে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ইয়ার আলীকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার সহযোগী বাহার আলী, জহুর আলীসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করে রিমাণ্ডে নেওয়া সময়ের দাবি।
মঙ্গলবার ইয়ার আলীর বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ থানার জিআর-২৭/১২ যাহা সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতে সেশান-৩০৯/১৭ মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, একই আদালতে কালিগঞ্জ থানার জিআর-১৭১/১৮, সেশন-২৫৯/২০ মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা (মোশাররফ হোসেন হত্যা মামলা,) ও কালিগঞ্জ থানার জিআর-১৪৬/২৪ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য মঙ্গলবার আদালতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।
তবে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে ইয়ার আলীর বিরুদ্ধে যে সব মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তা একে একে বাস্তবায়ন করা হবে।
এ ব্যাপারে গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিনটি চোরাই মটর সাইকেলসহ গ্রেপ্তারকৃত ইয়ার আলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোস্তাক আহম্মেদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে জানান, ইয়ার আলীকে আপাততঃ রিমাণ্ডে নেওয়ার কোন প্রস্তুতি নেই।