শ্যামনগরে ভূয়া প্রকল্পে দেখিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষানাবেক্ষণ কর্মসূচির অর্ধ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ
সুলতান শাহাজান, শ্যামনগর: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অসংখ্য ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্ধ্ব কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণ ও সংস্কারের নামে টিআর-নগদঅর্থ, কাবিটা-নগদঅর্থ, কাবিখা-খাদ্যশষ্য-চাল এবং কাবিখা-খাদ্যশষ্য-গম কর্মসুচির আওতায় তিনি এমন হরিলুট চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের টানা দুই বারের চেয়ারম্যান শোকর আলী নামের ঐ ব্যক্তি উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবকায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ(টিআর-নগদঅর্থ) কর্মসূচির আওতায় শ্রীফলকাটি নতুনপাড়া মসজিদের সংস্কার কাজে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
একইভাবে খাগড়াঘাট গাইনবাড়ী জামে মসজিদ ও ধুমঘাট হাটখোলা গাইনবাড়ী জামে মসজিদ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয় আরও দুই লাখ টাকা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এমন অনন্ত নয়টি মসজিদ ও মন্দিরের অনুকুলে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠমো রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও কোথাও একটি টাকার সংস্কার কাজ হয়নি। এমনকি মসজিদ মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্যরা এমন বরাদ্দের বিষয়ে অবগত না। বরং অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান নিজেস্ব লোকজন দিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ‘ভূয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে সমুদয় টাকা উত্তালনপূর্বক আত্মসাত করেছে।
বরাদ্দের তালিকায় থাকা ধুমঘাট হাটখোলা গাইনবাড়ী জামে মসজিদের সভাপতি মুজিবুল খাঁ’র অভিযোগ চেয়ারম্যান শোকর আলী তাদের না জানিয়ে ফরিদা খাতুন নামে এক নারীকে কমিটির সভাপতি বানিয়ে প্রকল্প জমা দেয়। নিজেদের মসজিদের অনুকুলে বরাদ্দ হলেও তারা ঘুর্নাক্ষরে এসব বিষয়ে আগে জানতে পারেনি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর চেয়ারম্যান এখন তাদের টাকা নিয়ে প্রত্যায়পত্র নেয়ার জন্য ডাকাডাকি করছেন।
একই ধরনের অভিযোগ করেন খাগড়াঘাট গাইনবাড়ী ও শ্রীফলকাঠি নুতন পাড়া মসজিদের দুই সভাপতি আব্দুল গফুর আব্দুর রশিদ। তাদের অভিযোগ ফরিদা ও শহিদুল নামের নিজস্ব দু’জনকে সভাপতি দেখিয়ে ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা উত্তোলনপূর্বক চেয়ারম্যান আত্মসাত করেছেন।
এছাড়া ধুমঘাট মদিনা মসজিদ, ধুমঘাট রপ্তানবাড়ি মন্দির, বংশীপুর পাঞ্জেগানা মসজিদ, শ্রীফলকাটি বিদ্যালয় থেকে ধুমঘাট ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের নামে ‘ভূয়া’ প্রকল্পের আশ্রয় নিয়ে তিনি সরকারি বরাদ্দ তসরুফ করেছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
তবে শুধু টিআর-নগদ অর্থ না বরং কাবিটা-নগদ অর্থসহ কাবিখা-খাদ্যশষ্য-চাল ও গমের ক্ষেত্রেও তিনি বেশুমার লুটপাট চালিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় ধুমঘাট এলাকায় একই সড়কের জন্য ভিন্ন দুটি প্রকল্পের আওতায় ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা লোপাট করেছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা মেলে ধুমঘাটের মহিবুল্লাহর বাড়ি থেকে তাজেল মোড়লের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে বরাদ্দ নেয়া হয় ছয় লাখ ৫০ হাজার। আবার কৌশল করে একই সড়কের মধ্যভাগে অবস্থিত আব্দুর রবের বাড়ি থেকে তাজেল মোড়লের বাড়ি পর্যন্ত দ্বিতীয় আরও একটি প্রকল্পের মধ্যমে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ নেয়া হয়েছে।
একইভাবে কাবিখা-খাদ্যশষ্য-চাল ও কাবিখা খাদ্যশষ্য-গম কর্মসুচির আওতায় বেশুমার লুটপাট চালিয়েছেন শাকর আলী। স্থানীয়দের তথ্য মতে শ্রীফলকাঠি ঈদগাহ হতে শাহিনুরের বাড়ি অভিমুখের রাস্তা, ঈশ্বরীপুর গোলাবাড়ি ঘাট থেকে গুমানতলী হাট অভিমুখের রাস্তা, খাগড়াঘাটের নুর ইসলামের বাড়ি থেকে খ্যাগড়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা সংস্কারের নামে দু’দফায় ১৭ মেঃ টন চাল বরাদ্দ হলেও সেসব অংশে ন্যুনতম কাজের প্রমান নেই।
এদিকে আরও অভিযোগ উঠেছে শ্রীফলকাঠি আইজদ্দি গাইনের বাড়ি থেকে গোজালমারী খাল সংলগ্ন রাস্তা, খাগড়াঘাট বিরা মোল্যার বাড়ি থেকে আইয়ুব আলীর মোড় এবং খাগড়াঘাট নুর ইসলামের বাড়ি থেকে খাগড়াঘাট সরকারি বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ১৭.১০ মেঃ টন গম বরাদ্দ হয়। অথচ সেসব প্রকল্পে নামকাওয়াস্তে কাজ করা হলেও চেয়ারম্যানের লোকজন উক্ত প্রকল্পের সমুদয় অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার শিকার হওয়া এসব এলাকাবাসী দুর্নীতিবাঁজ চেয়ারম্যান শোকর আলীর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত দাবি করেন।
এমনকি বংশীপুরের ঐতিহ্যবাহী রুপ রায়ের দিঘী পুনঃখনন কাজের জন্য পাঁচ লাখ ৬০ হাজার প্রকল্প বরাদ্দ নেয়া হয়। অথচ তিনদিনে মাত্র ৬৩ জন শ্রমিক দিয়ে এতবড় একটি প্রকল্পের সমুদয় টাকা আত্মসাত করা হয়ে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান শোকর আলী জানান, হাটখোলা ও গাইনবাড়ী এলাকায় একটু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। তবে অন্যান্য জায়গায় বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন সামান্য ভুলত্রুটি হলে সেটা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুল ইসলাম বলেন, বরাদ্দের টাকা কেউ না পেয়ে থাকলে নির্দিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করলে তাকে বরাদ্দ বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে আত্মসাতের কোন অভিযোগ উঠলে যে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।