অনলাইনঅপরাধআইন আদালতইতিহাস ঐতিহ্যকালিগঞ্জতালারাজনীতিশিক্ষাঙ্গনসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

কালিগঞ্জ মুক্ত দিবস ও মুক্তিযোদ্ধা মিলনমেলায় ‘ভুয়া যোদ্ধা’ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি

মাসুদ পারভেজ, কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জ- শ্যামনগর -দেবহাটা অঞ্চল মুক্ত দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) কালিগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মিলনমেলা ও মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা স্মরণ, বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মাঠে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে ক্যাপ্টেন এম. নূরুল হুদার নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে কালিগঞ্জকে হানাদারমুক্ত করেন। সেই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত দিবস উদযাপন ও মুক্তিযোদ্ধা মিলনমেলা। দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন সকাল ১১টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় বিশিষ্টজন ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। দুপুর ২টায় মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে। মুক্ত দিবস ও মুক্তিযোদ্ধা মিলনমালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডা. মোঃ শাহ জাহান। তিনি এক আবেগঘন স্মৃতিচারণে বলেন স্বাধীনতার সময় যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি তাদের অনেকেই আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট গ্রহণ করেননি তারা বলতেন ‘দেশের জন্য লড়াই করেছি, এটাই আমাদের বড় পাওয়া। রাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু নিলে আমরা ছোট হয়ে যেতাম। দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।

তিনি আরও বলেন, ৫৪ বছর পর আপনাদের সঙ্গে দেখা হলো হয়তো আর দেখা নাও হতে পারে। আমার কোনো দাবি নেই, শুধু চাই আপনারা সুস্থ থাকুন, সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বেচে বাঁচুন। এখন দেশ গড়বে তরুণ প্রজন্ম। তাদের সতর্ক থাকতে হবে দেশকে কখনো বিক্রি করা যাবে না। আমরা এখন যুদ্ধ করতে না পারলেও আমরা প্রতিবাদ করার শক্তি রাখি।সভাপতির হুঁশিয়ারি—ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ক্যাপ্টেন এম. নূরুল হুদা (অব.), সহ অধিনায়ক, ৯ নং সেক্টর ও সদস্য, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার করছেন তাদের এখনো সময় আছে আত্মসমর্পণ করার। অন্যথায় তদন্তে ভুয়া প্রমাণ হলে দুটি মামলার মুখোমুখি হতে হবে।

ভুয়া কাগজপত্র তৈরির অভিযোগে, সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে। রাষ্ট্র কাউকে ছাড় দেবে না। অন্যান্য অতিথিদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ আলম বেগ (অব.), কমান্ডার, সেক্টর স্পেশাল ফোর্স, ৯ নং সেক্টর,বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর মোঃ আহসান উল্যাহ (অব.), কোম্পানি কমান্ডার, ৯ নং সেক্টর,বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল এম. এস. এ. কে. আজাদ,বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ হিল সাফি, সদস্য, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ও বিভাগীয় সমন্বয়ক (খুলনা বিভাগ), বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শহিদুল ইসলাম, আহ্বায়ক, সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কমান্ড এছাড়াও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাইনুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালিগঞ্জ সার্কেল) রাজিব, কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমানসহ প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানের সার্বিক সঞ্চালনায় ছিলেন দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সকল অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ এবং সম্মাননা ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আলহাজ্ব শেখ আব্দুর রউফ, কমান্ডার, কালিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *