অনলাইনইতিহাস ঐতিহ্যকালিগঞ্জতালারাজনীতিসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

কালিগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ

তাপস কুমার ঘোষ, কালিগঞ্জ: আজ ২০ নভেম্বর, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের কবল থেকে মুক্ত হয় কালিগঞ্জ উপজেলা এলাকা। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালিগঞ্জ উপজেলা কমান্ডের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কালিগঞ্জ ইউনিটের নেতৃবৃন্দ জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ চলতে থাকে। ৯নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাগণ অদম্য সাহসের মধ্য দিয়ে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৪ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর গ্রামে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি আক্রমণ করতে আসা পাকবাহিনীর সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে বহু পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। অবশেষে আসে সেই কাঙ্খিত দিন ২০ নভেম্বর।

তারা জানান, এদিন ভোরে কালিগঞ্জ ওয়াপদা কলোনীতে অবস্থানরত পাক বাহিনী পশ্চিমী রেঞ্জার ও কিছু রাজাকারের উপর মুক্তিযোদ্ধার বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভোর ৫টায় শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ৭টায় শেষ হয়। মাত্র দু’ঘণ্টার যুদ্ধে পাক বাহিনী পিছু হটে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও পাক সেনাদের প্রচুর জানমালের ক্ষতি হয়। ৪০ জন পাকসেনা বন্দী হয়। অবশিষ্ট পাক সেনারা সাতক্ষীরার আলীপুর ও পুষ্পকাটি নামক স্থানে যেয়ে ঘাঁটি তৈরি করে।

এদিকে কালিগঞ্জ পাকা হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে মিছিল করে জয়বাংলা শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে। স্বাধীনতার যুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্ত অঞ্চল ছিল কালিগঞ্জ। এর একদিন আগে ১৯ নভেম্বর পাক হানাদারমুক্ত হয় শ্যামনগর উপজেলা।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টরের সহ-অধিনায়ক এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ডা. মো. শাহ জাহান, ৯নং সেক্টরের স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাহফুজ আলম বেগ, ৯নং সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আহসান উল্যাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল এম এস এ কে আজাদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য এবং খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ হিল সাফি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদুল ইসলাম, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কালীগঞ্জ সার্কেল মো. রাজীব ও কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

মিলনমেলায় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের ত্যাগের গল্প, অভিজ্ঞতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে এলাকার নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার মর্যাদা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, স্থানীয় প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। দিনটি স্মরণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, স্মরণসভা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

প্রসঙ্গত : ১৯৭১ সালে ৯নং সেক্টরের সহ-অধিনায়ক হিসেবে ক্যাপ্টেন এম নূরুল হুদা কালীগঞ্জ ও দেবহাটা অঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বসন্তপুর, নাজিমগঞ্জ, কালীগঞ্জ ও পারুলিয়া এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বাধ্যতামূলক পশ্চাৎপদ নিশ্চিত করেন। কালীগঞ্জে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশের সাফল্যও তার নেতৃত্বে সম্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *