সাতক্ষীরায় গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক; রূপান্তরের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরায় গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ নভেম্বর সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সিডো সংস্থার বাস্তবায়নে সাতক্ষীরা ইয়ূথ হাবের আয়োজনে একশনএইড বাংলাদেশ ও গ্রোবাল প্লাটফম বাংলাদেশের সহযোগিতায় তরুণ জলবায়ু কর্মী এবং তাদের সংগঠনসমূহ গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে যোগ দিয়ে সবুজ, ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ বিশ্বের দাবি জানিয়েছে। একযোগে অংশগ্রহন করেন স্বদেশ, বারসিক, ক্লিন ও বাপা সংস্থা সহ এক্টিভিস্টা সাতক্ষীরার যুব জলবায়ূ যোদ্ধারা। জাতিসংঘের বার্ষিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ৩০) যখন ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই এই সমাবেশটি সংঘটিত হলো। সমাজের সর্বস্তরের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা একত্রিত হয়ে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার-কেন্দ্রিক পদক্ষেপের দাবি জানায়।
তরুণরা বিভিন্ন রঙিন ফেস্টুন, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য তাদের কণ্ঠকে জোরালো করে তোলে এবং জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের পাশাপাশি সবার জন্য সবুজ, সমতাপূর্ণ, ন্যায্য ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ স্থানান্তরের দাবি জানায়।
তরুণ জলবায়ু কর্মীরা সম্মিলিতভাবে ন্যায্য রূপান্তরের এজেন্ডাটি পুনঃউল্লেখ করে এবং দাবি জানায় যে এই কপ-৩০ সিদ্ধান্তমূলক কপ হবে, যেখানে গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। তরুণরা জোর দিয়ে বলেছে যে, বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনা এবার ব্যর্থ হওয়া উচিত নয়। তারা সকল প্রতিনিধিদের কাছে সম্মিলিতভাবে কাজ করার, ফাঁকা প্রতিশ্রুতি থেকে বেরিয়ে এসে সুনির্দিষ্ট ন্যায়বিচার-কেন্দ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বৃহত্তর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
তরুণ জলবায়ু কর্মীদের পাশাপাশি খুলনা, নেত্রকোনা, বান্দরবান, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, পটুয়াখালী, ভোলা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, ঢাকা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, কুড়িগ্রাম, টেকনাফ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ ২৪টিরও বেশি জেলা এবং গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম লোকাল ইয়ুথ হাবের হাজারেরও বেশি অ্যাক্টিভিস্ট ও তরুণরা ফ্রাইডেস ফর ফিউচার-এর সাথে সংহতি প্রকাশ করে এই স্ট্রাইকে অংশ নেয়।
দেশজুড়ে এই প্রাণবন্ত ও শান্তিপূর্ণ জলবায়ু পদযাত্রায় তরুণরা জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ রূপান্তরের জন্য তাদের আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করতে #JustTransitionNow, #FundOurFuture, #ClimateFinance, #StopFossilFuel, #ClimateJusticeNow, #PayUpforLossandDamage, #ClimateStrike, #EndtoFossilFuel সহ আরও অনেক হ্যাশট্যাগ প্রদর্শন করে।
বক্তব্য রাখেন তরুণ জলবায়ু অধিকারকর্মী মাসুদ রানা, হৃদয় মন্ডল, সাকিব হাসান, শাহনাজ পারভীন,আরাফাত, ইমতি জামিল, স্বদেশ, বারসিক, ক্লিন ও বাপা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ তারা বলেন, “ন্যায্য রূপান্তর কার্যক্রমে অবশ্যই পরিবেশবান্ধব কাজের সৃষ্টি করতে হবে, মর্যাদাপূর্ণ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে হবে এবং তরুণদের নেতৃত্বাধীন সমাধানগুলিতে সমর্থন দিতে হবে। সবুজ অর্থনীতিকে অবশ্যই তরুণবান্ধব হতে হবে, যেখানে তরুণদের পরিবেশবান্ধব ধারণা বাস্তবায়নে ক্ষমতায়নের জন্য জলবায়ু অর্থায়ন সহজলভ্য থাকবে। টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এই পরিবর্তনে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা উচিত নয়” ।
এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, “কপ৩০-এর আগে জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য যারা সোচ্চার হচ্ছে এবং জলবায়ু ধর্মঘটের মাধ্যমে একত্রিত হচ্ছে, দেশজুড়ে সেই তরুণদের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা তাদের ন্যায্য রূপান্তরের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই, যা তাদের জীবন-জীবিকা, মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণতা থেকে সুরক্ষার অধিকারকে সম্মান ও বাস্তবায়ন করবে। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে যুব-নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী ও ক্ষমতায়নের জন্য নিঃশর্ত আর্থিক সহায়তার দাবিতেও তাদের কণ্ঠের প্রতিধ্বনি করছি” ।
বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রভাগে রয়েছে। প্রতি বছর, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ‘ফান্ড আওয়ার ফিউচার’ প্রচারণার অধীনে, ফ্রাইডেস ফর ফিউচার-এর সাথে সংহতি রেখে, ক্ষতিকারক জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসা বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য, সবুজ ও টেকসই জ্বালানি-কেন্দ্রিক প্রকল্প ও কার্যক্রমে আরও বেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যে দেশজুড়ে হাজারো তরুণ জলবায়ু কর্মীকে একত্রিত করে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, তরুণদের দ্বারা জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য এই ধারাবাহিক দাবি আজ এবং আগামী বছরগুলোর জন্য বিশ্বকে মৌলিকভাবে রূপ দেবে।

