অনলাইনঅপরাধআইন আদালততালাসদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরায় দুর্গন্ধযুক্ত মাংস জব্দ, ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও দুই মাসের কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা শহরের হোটেল-রেস্তরায় নিম্নমানের, দুর্গন্ধযুক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ মাংস বিক্রির অভিযোগে এক মাংস ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির হাতে রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের লাবণী মোড়ে ধরা পড়লো খাবার অনুপযোগী নিম্নমানের দুর্গন্ধযুক্ত খাসি ও ধাড়ী ছাগলের মাংস।

সম্প্রতি জেলা মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি অলিউর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করেন যে, খাবার অনুপযোগী নিম্নমানের মাংস সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে এবং ওই সব মাংস হোটেল রেস্তোরায় বিক্রি করা হয়।

হোটেল রেস্তোরাঁর মালিকরা মাংস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাংস কিনছে না বলে অভিযোগ করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির ওই বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করে। প্রতিবাদ সভায় নেতৃবৃন্দরা জানান, তারা রুচিসম্মত ও উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের জন্য যেসব দোকান থেকে মাংস ক্রয় করে সেসব দোকানের মেমো সংগ্রহ করে থাকেন। সেই সাথে উন্নত রুচিসম্মত খাবার পরিবেশনে আমরা বদ্ধপরিকর।

এরপর থেকে মাংস ব্যবসায়ীরা বাইরে থেকে আগত নিম্নমানের মাংস শহরে যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য তারা গোপনে বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দিতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে এ নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযোগী দুর্গন্ধযুক্ত, মাংসের কালার নষ্ট, খাসি ও ধাড়ী ছাগলের ৩০ কেজি মাংস তারা জব্দ করে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কবির মিট এর প্রোপাইটার মোঃ আব্দুল কাদের জানায়, সে কুলিয়া বাজারে ছাগল জবাই করে সে মাংস শহরের কাচ্চি ডাইনসহ কয়েকটি হোটেলে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিল। কবির মিট নামে তার মাংসের দোকান কামালনগর বউ বাজারে আছে বলে জানিয়েছে সে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌরসভার স্যানেটারী ইন্সপেক্টর মো. রবিউল আলম লাল্টু বলেন, ৩০ কেজি মাংস জব্দ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের ও সেক্রেটারি অলিউর রহমান জানান, অভিযুক্ত মাংস ব্যবসায়ী আমাদের সমিতি ভুক্ত নয়। শহরের বাইরের থেকে কোন মাংস শহরে বিক্রি করা যাবে না। আমরা বেশ কয়েকদিন ধরে শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহারা দিচ্ছিলাম কোন ধরনের যেন নিম্নমানের মাংস শহরে প্রবেশ করতে না পারে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, আমরা চাই এই অভিযুক্ত ব্যক্তি দুর্গন্ধযুক্ত মাংস কোন কোন হোটেলে সাপ্লাই দেয়। সেইসব হোটেল যারা খাওয়ার অনুপযোগী মাংস ক্রয় করার জন্য আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই সকল মাংস ক্রয়কারী হোটেল গুলোকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করব। রুচিসম্মত ও মানসম্মত খাবার পরিবেশন করতে আমরা নিরলকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ ধরনের মাংস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে শাস্তি প্রদান করতে হবে। যেন তারা এ ধরনের খাওয়ার অনুপযোগী মাংস বিক্রয় করতে না পারে।

নিম্নমানের খাওয়ার অনুপোযোগী মাংস জব্দ করার সময় উপস্থিত ছিলেন ভ্রাাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রট মো. তাজুল ইসলাম, ভোক্তা অধিকার সাতক্ষীরার সরকারি পরিচালক মেহেদী হাসান, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর এর কর্মকর্তা দীপঙ্কর দত্ত, সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারি অফিসার ডা. বিপ্লব জিৎ মন্ডল ও সাতক্ষীরা কাটিয়া ফাঁড়ির এসআই শেখ বোরহান প্রমুখ।

প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারি ডা. বিপ্লব জিৎ মন্ডল জব্দকৃত মাংস পরীক্ষা করার পর মোবাইল কোর্টের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাজুল ইসলাম মেয়াদ উত্তীর্ণ, মাংসের রং নষ্ট ও ছড়ানো মাংস সরবরাহের জন্য ৬৭০/২০২৫ নং মামলায় ৪৫ ধারায় দেবহাটা উপজেলার বহেরা গ্রামের রুহুল কুদ্দুসের ছেলে মোঃ আব্দুল কাদেরকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অর্থদণ্ড করেন এবং ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরে জব্দকৃত মাংস উপস্থিত সকলের সামনে বিনষ্ট করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেবহাটা, কুলিয়া, ব্রহ্মরাজপুর ও তালা উপজেলার কিছু অবৈধ জবাইখানা থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ কেজি পুরনো মাংস শহরে প্রবেশ করে। এ মাংস অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্রিজে রাখা পুরনো বা মৃত পশুর মাংস- যা বাজারে বিক্রি করা না গেলে কমমূল্যে হোটেলগুলোতে বিক্রি করা হয়।

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিদিন ভোরে একটি নির্দিষ্ট পিকআপ শহরে ঢোকে। সেটি শহরের লাবণী মোড়, কাটিয়া মোড়, পুরাতন বাসটার্মিনাল ও মুন্সিপাড়ায় মাংস সরবরাহ করে। এতে জড়িত কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীও আছে।

ঘটনার পর সাতক্ষীরা শহরের সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন- কীভাবে নিম্নমানের মাংস নিয়মিত শহরে প্রবেশ করে? সরকারি তদারকিতে দুর্বলতা বের হলেও কেন তাদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হয়না। যদি প্রশাসন ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ সমন্বিতভাবে নজরদারি না বাড়ায়, তবে সাতক্ষীরা শহরজুড়ে এমন ‘নীরব বিষ’ ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *