অনলাইনলিডসদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরা জেলা শহরের কয়েক হাজার পরিবার জলবন্দি; বিপর্যস্ত জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার: ভাদ্রের শেষে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরাবাসি। অঝোর ধারার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হচ্ছে সাতক্ষীরার নতুন নতুন এলাকা।

এদিকে,জেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য ঘের ও ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টা সাতক্ষীরায় ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে স্বাভাবিক হতে পারে আবহাওয়া, এমনটি জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা।

গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছেন জলাবদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে, জেলা শহরের রসুলপুর, কাটিয়া, আমতলা, কাটিয়া, মাঠপাড়া, কামালনগর, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি, পলাশপোল, ইটাগাছা,কুখরালী, মধুমোল্লার ডাঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকের ঘরের ভেতরেও পানি উঠে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব পরিবার।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শত শত হেক্টর জমির মৎস্য ঘের, ফসলের ক্ষেতসহ বিভিন্ন জলাভূমি ডুবে গেছে ।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ এলাকার রিপন বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টিতে কলেজ মাঠসহ অনেক সড়ক তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। এমন অবস্থা যে, চলাচল করতে গিয়ে মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ছেন। নর্দমার পানি এত নোংরা যে, পানি মাড়িয়ে রাস্তা পার হলে সঙ্গে সঙ্গে পায়ে চুলকানি শুরু হয়।

বিনেরপোতা এলাকার মামুন হোসেন বলেন, বিনেরপোতা, গোপীনাথপুর, মাগুরা, খেজুরডাঙ্গা ও তালতলা এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এলাকার কবরস্থান পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে রয়েছে। রাস্তাও পানির নিচে ডুবে রয়েছে। যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মানুষ। ফসলের মাঠ ও পুকুর পানিতে একাকার হয়ে গেছে।

রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ইমরান বলেন, এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। রাস্তার ওপর পানি জমেছে। প্রতিবছরই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। অথছ দেখার কেউ নেই।
কাটিয়ায় বসবাসরত সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ঘরের ভেতরে পানি উঠেছে। ঘরের খাটের উপরে বসে সময় পার করা ছাড়া উপায় নেই। গত তিনদিন এভাবেই আছি।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টা ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি বছরে এ জেলায় সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত। মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টিপাত কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সচিব আলী নূর খান বাবুল বলেন, সাতক্ষীরা শহর ও তার আশেপাশের প্রায় প্রায় অর্ধেক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে কামালনগর, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি, রসুলপুর, পলাশপোল, ইটাগাছা,কুখরালিসহ শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই মাসের পর মাস এসব এলাকা পানিতে ডুবে ছিল। তারপর ভাদ্র মাসের বৃষ্টি এসব এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। রোজগার করতে না পারায় অনেকের চুলো পরযন্ত জ্বলছে না।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে যেসব এলাকায় জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা নেই, সেসব এলাকায় দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বাঁধ বৃষ্টিপাতের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *