অনলাইনঅপরাধসাতক্ষীরা জেলা

শ্যামনগরে প্রতারণার ফাঁদে ৩৬ লক্ষ টাকা খুইয়ে প্রবাসী মোস্তফা সর্বস্বান্ত

শ্যামনগর প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে জমি বিক্রয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি প্রবাসী গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণার শিকার হয়ে এখন তিনি সর্বস্বান্ত হয়ে পথে পথে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কৈখালী ইউনিয়নের মেন্দিনগর গ্রামের মৃত জামাত আলী সরদারের পুত্র সৌদি প্রবাসী গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠান জমি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে। এ সুযোগে নুরনগর ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামের আক্তার সরদারের পুত্র আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের এবং তার ভাই আবুল হোসেন জমি বিক্রয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে দফায় দফায় ৩৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।

প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা যায় উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে। সৌদি প্রবাসী মোস্তফা ২০২২ সাল থেকে ওই দুই ভাইয়ের হাতে ৩২ লক্ষ ও ৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ করলেও জমি রেজিস্ট্রি হয়নি এবং টাকা ফেরতও পাননি। এতে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আব্দুল কাদের তার পুত্র এস. এম. সামুন (ডাক নাম বিদ্যুৎ)-এর পুলিশে চাকরি ও নিজ বাড়ির নির্মাণে ঐ টাকা ব্যয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মানবেতর জীবনযাপনকারী গোলাম মোস্তফা এখন স্ত্রী, দুই বিবাহযোগ্য কন্যা, এক শিশু কন্যা এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে পলিথিন ঢাকা মাটির ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি দারিদ্র্য ও দুশ্চিন্তায় প্রায় ভিক্ষাবৃত্তির পর্যায়ে নেমে এসেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় গোলাম মোস্তফা শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম ও নয়জন ইউপি সদস্য তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান।

ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আব্দুল কাদের ও তার ভাই আবুল হোসেন কৌশলে সৌদি প্রবাসীর কাছ থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যা অত্যন্ত ধৃষ্ট প্রতারণামূলক কাজ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন তদন্ত প্রতিবেদনে লেখেন, “অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও ছেলের চাকরির পেছনে অর্থ ব্যয় করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এদিকে, প্রতারিত প্রবাসী গোলাম মোস্তফা প্রশাসনের নিকট তাঁর কষ্টার্জিত ৩৬ লক্ষ টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *