অনলাইনআন্তর্জাতিকইতিহাস ঐতিহ্যকৃষিজাতীয়তালারাজনীতিলিডসদরসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

ভোমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনকে ‘কাস্টমস হাউজ’ এ উন্নীতকরণে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‍্যালি

জিয়াউল ইসলাম জিয়া: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনকে ‘কাস্টমস হাউজ’ হিসেবে উন্নীত করার সরকারি অনুমোদন জারির খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভোমরা বন্দরে বইছে উৎসবের আমেজ। ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ সবাই উচ্ছ্বসিত এই ঐতিহাসিক অর্জনে।

সেই আনন্দের ধারাকে আরো উত্তাল করতে বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ভোমরা কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‍্যালিটি বিকেল ৪টার দিকে অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় চত্বর থেকে শুরু হয়ে ভোমরা বাজার, বন্দর সড়ক ও কাস্টমস গেট প্রদক্ষিণ করে ভোমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এসময় ব্যানার, ফেস্টুন, বেলুন ও স্লোগানে মুখরিত ছিল র‍্যালি। ‘ভোমরা কাস্টমস এখন কাস্টমস হাউজ’, ‘উন্নয়নের রোল মডেল ভোমরা’- এসব স্লোগানে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। স্থানীয় জনগণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানান।

র‍্যালি শেষে স্টেশন প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ভোমরা কাস্টমস সি অ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হাসান। বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান (হাবিব), অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা, আলিপুর ইউনিয়নের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আব্দুর রউফসহ বন্দর এলাকার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র। এটি ইতোমধ্যেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে গড়ে উঠেছে। কাস্টমস হাউজে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে এখানে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক কার্যক্রম ও বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা আরও দ্রুত ও কার্যকর হবে।

তারা আরো বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় সাধারণ মানুষও আজ আনন্দিত। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নতুন গতি সঞ্চার হবে এবং সাতক্ষীরা-খুলনা-যশোরসহ পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর ভোমরা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কাস্টমস হাউজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ০৮.০০.০০০০.০২৭.২৮.০৪৩.১৯.৯৭, তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে এই সরকারি অনুমোদন জারি করা হয়। এর মাধ্যমে ভোমরা বাংলাদেশের কাস্টমস প্রশাসনিক কাঠামোয় একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল। এখন থেকে এখানে পূর্ণাঙ্গ রাজস্ব প্রশাসন, শুল্ক নির্ধারণ, আমদানি-রপ্তানি নথি যাচাই, পরিদর্শন, নিলাম ও রাজস্ব আদায়ের সব কার্যক্রম স্থানীয়ভাবে সম্পন্ন করা যাবে।

এর আগে ভোমরা ছিল কাস্টমস স্টেশন হিসেবে পরিচালিত, যার নিয়ন্ত্রণ ছিল যশোর কাস্টমস হাউজের আওতায়। এখন পৃথক হাউজ ঘোষণার ফলে স্থানীয়ভাবে সব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে- যা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।

প্রতিদিন ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। ভারত থেকে আসে খাদ্যপণ্য, কসমেটিকস, নির্মাণসামগ্রী, মেশিনারিজ ও পোশাকপণ্য; অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় মাছ, কৃষিপণ্য, চিংড়ি, প্লাস্টিক সামগ্রী ও অন্যান্য শিল্পজাত দ্রব্য। ভোমরা কাস্টমস হাউজ চালু হলে এখানে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া আরো সহজ হবে, ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ কমবে এবং পণ্য ছাড়ের গতি বাড়বে। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলছেন, ভোমরা কাস্টমস হাউজ চালুর ফলে এই অঞ্চলে লজিস্টিকস, ব্যাংকিং, গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ ও পরিবহন খাতে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং সাতক্ষীরার অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

ভোমরা সি অ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু মুছা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ভোমরাকে কাস্টমস হাউজ ঘোষণা করা সরকারের এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটাবে। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তারা আরও বলেন, ভোমরা এখন দেশের অন্যতম ব্যস্ততম স্থলবন্দর। প্রতিদিন শত শত ট্রাক পণ্য নিয়ে যাতায়াত করে। কাস্টমস হাউজে উন্নীত হওয়ার ফলে প্রশাসনিক জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটবে- যা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল। প্রতিবছর এখান থেকে শতকোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় উৎস।

কাস্টমস হাউজ ঘোষণার মাধ্যমে ভোমরায় স্বয়ংক্রিয় শুল্ক নির্ধারণ ব্যবস্থা, পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার দ্রুতীকরণ, এবং আন্তর্জাতিক মানের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মতে, এতে সাতক্ষীরা জেলা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল যেমন যশোর, খুলনা, বাগেরহাট ও মাগুরা জেলাও উপকৃত হবে।

সরকারের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভোমরা স্থলবন্দর শুধু একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয় বরং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হতে যাচ্ছে। ভোমরার ব্যবসায়ী সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন- এই ঘোষণা শুধু একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং সাতক্ষীরার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *