সাতক্ষীরার বৈকারী ভূমি অফিসের পাসওয়ার্ড বহিরাগত শাহিনের দখলে
গাজী হাবিব: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ভূমি অফিসে দায়িত্বে থাকা নায়েব আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে বহিরাগত শাহিনকে দিয়ে সরকারি কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় যুবক শাহিন দীর্ঘদিন ধরে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ- যেমন খাজনা আদায়, মিউটেশন ও নথি প্রক্রিয়াকরণ নিজে পরিচালনা করছেন।
সূত্র জানায়, অফিসের সরকারি আইডি ও পাসওয়ার্ড শাহিনের দখলে থাকে সবসময়। নায়েব আব্দুল বারী ছুটিতে থাকলেও তার আইডি ব্যবহার করে শাহিন খাজনা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ করে বলেন, নায়েব অফিসে উপস্থিত থাকলেও শাহিন যতক্ষণ অফিসে না আসে, ততোক্ষণ খাজনা আদায়, মিউটেশন, ২৩/৩ ও ১৫০ ধারাসহ অফিসের অন্যান্য কাজ বন্ধ থাকে। ফলে, সেবা গ্রহীতাদের ব্যপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে নায়েব অফিসে না আসলেও শাহিনের কেরামতিতে সকল কাজ সমাধান হয়ে যায়। যদিও বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা নেন শাহিন। এতে করে বৈকারী ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও কার্যক্রম বহিরাগত শাহিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
সেবাগ্রহীতারা আরোও বলেন- শাহিন তো একজন বহিরাগত সে নায়েব এর আইডি ও পাসওয়ার্ড কিভাবে পায়?
কয়েকজন সেবাগ্রহীতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অফিসে গেলেই বোঝা যাবে- শাহিন ছাড়া কোনো কাজই হয় না। সরকারি কর্মচারী না হয়েও সে পুরো অফিস থাকে তার নিয়ন্ত্রণে। আর্থিক সুবিধা না দিতে চাইলে কোনো কাজ এগোয় না। তাদের দাবি, শাহিনের মাধ্যমে অফিসের আর্থিক লেনদেনসহ নানান অনিয়ম চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
নামজারির প্রতিটি কেসের তদন্ত প্রতিবেদনের নামে সেবা প্রার্থীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে সর্বনিন্মে ১ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন এই শাহিনের দ্বারায় নেয়া হচ্ছে । তবে এক্ষেত্রে নায়েব মহাশয় থাকছেন অধরা। শুধু নামজারি কেস নয়, জমির দাখিলা ও সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিতে আসা মানুষদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের অতিরিক্ত টাকা। প্রতিদিন শাহিন পকেটে করে মোটা অংকের অবৈধ অর্থ পকেটস্থ করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া, এই ভূমি অফিসের চৌকাঠ পেরুলেই ভূমি কর্মকর্তাদের নিজের করা আইন মানতে হয় সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে।
স্থানীয় একাধিক ভূমি মালিকদের মধ্যে অনেকেই জানান, শাহিনের দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকার করলে নানান টালবাহানা করে জমির মালিকদের হয়রানি করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভূমি অফিসে নামজারি, জমিভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তোলা সহ সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। চুক্তির টাকা ছাড়া কোনো ফাইলই নড়ে না। নায়েব ও শাহিনের দুর্নীতিতো অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভুমি মালিকেরা। বহিরাগত শাহিন দিনের পর দিন দুর্নীতি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ জনগণ ও নিরীহ মানুষের নিকট থেকে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন- নায়েবের কাছের লোকের চাহিদা মত ঘুষের টাকা না দিলে কোনো কাজ হবেনা। দিনের পর দিন ঘুরতে হবে। কাগজ পত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে টাকার পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েও যায় অদৃশ্য ইশারায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তি বলেন, তিনি সরাসরি জমির নামজারি করতে গিয়ে তিনি বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন বলেন, আমি ভূমি সেবা কেন্দ্র নিয়েছি। নায়েব স্যারকে শুধু সহযোগিতা করি, কিন্তু অফিসে থাকি না।
এদিকে সরজমিনে বৈকারী ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নায়েব আব্দুল বারীর চেয়ারে বসেই সরকারি কাজ করছেন শাহিন। আর নায়েব আছেন অন্যত্র। ঘটনার আকস্মিকতায় সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে নায়েব আব্দুল বারী তাকে ‘শটকে’ যেতে বলেন। তৎক্ষনাত ‘শটকে’ পড়ে শাহিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নায়েব আব্দুল বারী বলেন, শাহিনকে সরকারি নাগরিক সেবা কেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশ্ন করা হলে- শাহিন আপনার অফিসে এসে কম্পিউটারে বসে কী কাজ করেন? তার তো নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকার কথা, তখন তিনি এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি নায়েব আব্দুল বারী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সদরের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ বদরুদ্দোজা জানান- বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে। তার তো ভূমি অফিসে কাজ করার কথা না।

