ধর্মশ্যামনগরসাতক্ষীরা জেলা

শ্যামনগরে ৭০টি পূজা মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহুর্তের কাজ

মোঃ ইসমাইল হোসেন, শ্যামনগর:; সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। দেবী দুর্গার সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রতিমা নির্মাণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পীরা। এ বছর উপজেলায় ৭০টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় পূজা দুর্গাপূজা। গত বছর ৬৪টি পূজা মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নভিত্তিক পূজামণ্ডপের মধ্যে রয়েছে- শ্যামনগর পৌরসভায় ১৫টি, কাশিমাড়ি ইউনিয়নে ২টি, নূরনগর ইউনিয়নে ৩টি, কৈখালী ইউনিয়নে ৫টি, রমজাননগর ইউনিয়নে ৭টি, মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নে ১০টি, ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে ৪টি, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে ৯টি, আটুলিয়া ইউনিয়নে ১১টি, পদ্মপুকুর ইউনিয়নে ২টি ও গাবুরা ইউনিয়নে ২টি।

মৃৎশিল্পী বাবু পাল জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও বেশ কিছু অর্ডার পেয়েছি। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা চাপ রয়েছে। তবুও এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষদের যে ঐতিহ্য জড়িত, সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

আরেক মৃৎশিল্পী মণোরঞ্জন পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ অনেক ধৈর্য ও নিপুণতার। বিশেষ করে মুখ তৈরি করা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। সময় মতো কাজ শেষ করতে অনেক সময় রাতেও কাজ করতে হয়। প্রতিমা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। পূজার শুরুর আগেই প্রতিমার গায়ে রং-তুলির কাজ শেষ করা হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, হিন্দু পরিষদ, হিন্দু মহাজোট সহ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের শ্যামনগর উপজেলা শাখার নেতারা বলেন, এ বছর উপজেলায় মোট ৭০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়াও প্রতিটি মন্দিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন সহ সার্বক্ষণিক সেচ্ছাসেবকরা নিয়োজিত থাকবেন।

শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় এবারে ৭০টি পূজা মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মন্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, আনসার, ভলেন্টিয়ার বাহিনী মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা, মাইকিং ও নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা রাখা হবে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, এবারে শারদীয় দুর্গা পূজায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের অপতৎপরতা ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এবং পূজা চলাকালীন বিদ্যুৎ ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়াও অপ্রতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসবের আমেজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। মণ্ডপ সাজানো, আলোকসজ্জা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়েও চলছে জোর প্রস্তুতি। উপজেলা জুড়ে উৎসবের আবহে ব্যস্ততা যেমন বেড়েছে, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকা মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্যও নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে এই দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে।

পঞ্জিকা মতে, ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মর্তলোকে বেজে উঠবে দেবীর আগমনি বার্তা। ২৭শে সেপ্টেম্বর দেবী দুর্গার মর্তে আগমনী বার্তায় দেবীর বোধন পূজা। ২৮শে সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দেবীর দুর্গার নবপত্র কল্পারম্ভ। ওইদিন মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসরের শব্দ। ২৯শে মহাসপ্তমী পূজা। ৩০শে সেপ্টেম্বর দেবীর মহাঅষ্টমী পূজা। মহানবমী পূজা ১লা অক্টোবর। ২রা অক্টোবর দশমী বিহিত পূজা সমাপনান্তে দেবী বিসর্জন ও দশ হরার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *