অপরাধআইন আদালতসদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরায় মাদক সম্রাজ্ঞী আনজুয়ারা ইয়াবা-অস্ত্র-নগদ টাকা ও দুই সহযোগীসহ আটক

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে আটক হলো সাতক্ষীরার কুখ্যাত মাদক সম্রাজ্ঞী আনজুয়ারা বেগম। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানে সাতক্ষীরা পৌরসভার গড়েরকান্দা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে দুই সহযোগিসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দুই ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে আটক করা হয় আনজুয়ারা বেগম (৪৬), তার সহযোগি আসিফ (১৪) এবং আব্দুর রহিম (৩৫)-কে। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২৬ পিস ইয়াবা, নগদ এক লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ টাকা, তিনটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, পাঁচটি বাটন ফোন, তিনটি চাপাতি, দুটি কুড়াল, একটি ছুরি, সাতটি চাকু ও একটি লাঠি।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাতক্ষীরা সদর সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন নাহিদ। পরে আটককৃতদের উদ্ধারকৃত মালামালসহ সাতক্ষীরা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

স্থানীয়দের ভাষ্য, আনজুয়ারা বহু বছর ধরে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। তার হাত থেকে রেহাই পেত না কেউ। ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, হেরোইন—সব ধরনের মাদক তার বাড়ি থেকেই প্রকাশ্যে বিক্রি হতো। ফলে এলাকাটি পরিণত হয়েছিল মাদকের আখড়ায়।

তাকে ঘিরে গড়ে ওঠে এক ভয়ংকর সিন্ডিকেট। এলাকার তরুণরা সহজেই মাদকের নেশায় ডুবে যায়। অনেক পরিবার ভেঙে যায় মাদকের কারণে, বেড়ে যায় চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। কিন্তু আনজুয়ারার দাপটে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেত না।

এলাকাবাসীর দাবি, আনজুয়ারার পরিবার সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িত। কেউ বাধা দিতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হতো। কখনো আবার শারীরিকভাবে হামলা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হতো। ফলে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ নীরব ছিল।

এছাড়া তার স্বামী সাবেক পুলিশ কনস্টেবল শামছুল আলম এবং ভাই আশরাফুল ইসলামও একই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। গ্রেপ্তার অভিযানের পর স্থানীয়রা তাদেরকেও দ্রুত আটক করার দাবি জানিয়েছেন।

ক্যাপ্টেন নাহিদ বলেন- আনজুয়ারা দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরায় মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ অভিযানে তার দীর্ঘদিনের অবৈধ সাম্রাজ্যের পতন ঘটল।

সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামিনুল হক বলেন- আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।

আনজুয়ারার গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, বহুদিন ধরে এলাকার মানুষ দুঃস্বপ্নের মতো দিন কাটাচ্ছিল। স্থানীয় পরিবেশ নষ্টের মূলে আনজুয়ারার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে বাইরে থেকে অচেনা মহিলা এনে দেহ ব্যবসা করাতো। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে শান্তি ফিরেছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন- ওর কারণে এলাকার যুবকরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। আমরা কথা বলার সাহস পেতাম না। আজ মনে হচ্ছে এলাকার অভিশাপ ঘুচে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *