কালিগঞ্জের চম্পাফুলে অবরুদ্ধ একটি পরিবার, টাঙানো হয়েছে জমি দখলের সাইনবোর্ড
স্টাফ রিপোর্টার: কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল কালীবাড়ি বাজারে সুনীল মন্ডলের জমি তৃতীয় দিনেও জবরদখল প্রক্রিয়া অব্যহত রাখা হয়েছে। জবরদখলের একপর্যায়ে জমিতে একটি সাইন বোর্ড টানিয়ে তাতে জমির মালিক আলমগীর কবীর বলে লেখা হয়েছে। নির্যাতিত পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে শান্তি রক্ষার্থে যাওয়া কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলামকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
সুনীল মন্ডল জানান, রবিবার সকাল থেকে সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন সশস্ত্র ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী তার দখলীয় ৮৮ ও ৯১ দাগের চার বিঘা জমির শতাধিক গাছ গাছালি কেটে, ফল ও সবজি লুটপাট শুরু করে। বিষয়টি তিনি কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। রবিবার কোন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। সোমবার সকালে ওই সব সন্ত্রাসীরা তাদের যাতায়াতের প্রধান রাস্তা বাঁশের চটা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। চটা দিয়ে চারিপাশে বেড়া দেয়। সিমেন্টের পিলার ও টিনের চাল দিয়ে ঘর বানানোর চেষ্টা করলে উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে শান্তি রক্ষার্থে উভয়পক্ষকে সংঘাত এড়াতে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। রাত সাতটার দিকে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উভয়পক্ষকে নিয়ে থানায় বসাবসির সিদ্ধান্ত নেন। নিরাপত্তা জনিত কারণে তারা রাতে যেতে পারবেনর না বলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জজ কোর্টের সাবেক জিপি সুনীল মন্ডলের আইনজীবী অ্যাড. জামিনী কান্ত সরকার জানান, বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. তরুন বন্দোপাধ্যায় কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে উপস্থাপন করেন যে, চম্পাফুল মৌজার এসএ ২৫২ নং খতিয়ানে এসএ ৮৮ দাগ ও আর এস ৪৩০ নং খতিয়ানে আর এস ১২৯ দাগের ৬৬ শতক জমি অত্র আদালতে বিচারাধীন। এ ছাড়া কমল ম-ল ও তার ছেলে তাপস মন্ডলের কাছ থেকে দুটি দলিল মূলে ৬৬ শতক জমি কিনে মোট চার বিঘা জমি ক্রয় করে বিবাদীপক্ষ শান্তিপূর্ণ ভোগদখলীকার আছেন। এখানে দখলসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বিবাদীপক্ষের আইনজীবী। একপর্যায়ে মোকদ্দমা বিচারাধীন থাকাকালে আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলাম হস্তক্ষেপ করেছেন। চলমান মোকদ্দমার বিষয়ে আদালতের অনুমতি ব্যতীত কোন প্রকার পুলিশি হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।
বাদি পক্ষের আইনজীবী ছাড়াই বিবাদী পক্ষের একতরফা শুনানী করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতে উপস্থাপন করার একপর্যায়ে বিচারক মোঃ তরিকুল ইসলাম আদালতে মোকদ্দমা বিচারাধীন থাকাকালে আদালতের বিনা অনুমতিতে নালিশী জমিতে অবৈধ হস্তক্ষেপের জন্য কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তৎ মর্মে অত্র আদেশ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থঅধৈলকৈ স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। এতে উৎসাহিত হয় জবরদখলকারিরা।
সোমবার রাতে থানায় না যাওয়ায় পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারো জবরদখল প্রক্রিয়া শুরু হয়। জবরদখলকারি সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরের ভাড়াটিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মঙ্গলবার সকাল থেকে সুনীল ম-লের জমিতে সিমেন্টের পিলারের খুটির উপর টিনের চাল দিয়ে ঘর বানিয়েছে। সুনীল মন্ডলের বাড়ি থেকে উঠানে টিউবওয়েল ও তুলসী বেদীতে যাওয়ার রাস্তা বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। উঠানে বসানো কল ও তুলসী বেদী ঘিরে দেওয়া হয়। ঘরে ঢুকে রান্না করা ভাতে, ভাতের হাড়ি, থালা ও বাসন ফেলে দেওয়া হয়। এসব কাজ করার সময় তা বারান্দার সিঁড়িতে (সুনীল) কয়েকজন সন্ত্রাসী রাম দা নিয়ে পাহারা দেয়। একপর্যায়ে উঠানে বেড়া দিয়ে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে জবরদখল করা জমিতে ওই জমির মালিক আলমগীর কবীর বলে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। সামাদ গাজী তিন ভাইপোকে হত্যা মামলা ও এক হিন্দু গৃহবধুকে ধর্ষণ মামলার আসামী হলেও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় গত তিন দিন ধরে জবরদখলকারি সন্ত্রাসীদের ভয়ে শত শত প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ মুখ খুলতে সাহস পারেনি।
এ্যাড. জামিনীকান্ত সরকার ও অ্যাড. প্রবীর কাজী জানান, মঙ্গলবার আদালতের কাঠগড়ায় হাজির হয়ে উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলাম কালীবাড়ি বাজারের সুনীল মন্ডল ও তাদের প্রতিপক্ষ সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরের জমি দখল সংক্রান্ত বিষয়ে সুনীল মন্ডলের থানায় অভিযোগ সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করেন। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে অব্যহতি দেন। তবে আগামিতে বিচারাধীন মামলা চলাকালে এ ধরণের ভুল করেলে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার ব্যাপারে সতর্ক করেন। জমি জবরদখল সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন থাকা একটি পত্রিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাংবাদিকদের লেখা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারক।
ওলামাদলের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির আহবায়ক মাওলানা আনিছুর রহমান আজাদী বলেন, দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে তিনি মঙ্গলবার সকালে চম্পাফুল কালীবাড়ি বাজারে যান। তিন দিন ধরে যেভাবে সুনীল ম-লের দখলীয় চার বিঘা জমির গাছ গাছালি কেটে , ফল ও সবজি লুট করে, রাস্তা, টিউবওয়েল ও তুলসী মন্দিরের যাওয়ার পথ বন্ধ করে ফিল্পি স্টাইলে জবরদখল করে ওই হিন্দু পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে তাতে তিনি ও তার সংগঠণ উদ্বিগ্ন। পুলিশ সুপার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে কথা বলেছেন তিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা বসবাস করতে পারবে না বলে ওই সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে সুনীল ম-লের জমি জবরদখল করে লুটপাট ও যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়ে অবরুদ্ধ রাখার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশান (এমএসএফ)। বিষয়টি নিয়ে তারা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার , কালিগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা টিপু সুলতান।
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে উপপরিদর্শক সাব্বীর ও সিপাহী কামরুল আদালতে জবাব দিয়েছেন।
মঙ্গলবারও জবরদখল প্রক্রিয়া চলেছে মর্মে তিনি জেনেছেন উল্লেখ করে বলেন, এ ঘটনায় সুনীল মন্ডলের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।