অনলাইনসদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরায় জলবায়ু দুর্যোগ ঝুঁকি ক্ষতিপূরণে অবস্থান কর্মসূচি ও মতবিনিময় সভা

বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে জলবায়ু ক্ষতিপূরণে গঠিত দাবি আদায়ের সামাজিক সংগঠন ম্যাপ সাতক্ষীরা জেলা কমিটির আয়োজনে জেলা পর্যায়ের ‘জলবায়ু দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন ও বীমা সংক্রান্ত পরামর্শ-মতবিনিময় সভা ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপকূলীয় অঞ্চলের তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের অভিজ্ঞতা ও সুপারিশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা ম্যাপের যুগ্ম আহবায়ক মাধব চন্দ্র দত্ত।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ম্যাপ সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. দিলারা বেগম। অ্যাওসেড ও কেয়ার বাংলাদেশে যৌথভাবে বিএমজেড অর্থায়িত ম্যাপ-সিডিআরএফআই প্রকল্পের অধীনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এডিশনাল ডেপুটি ডাইরেক্টর মো: জামাল উদ্দিন। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা ম্যাপের সদস্য সচিব শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন।

অ্যাওসেডের লার্নিং ও অ্যাডভোকেসি অফিসার বাহলুল আলম উপকূলীয় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বহুমাত্রিক সংকট, প্রভাব ও প্রাসঙ্গিক বিশে¬ষণ বিষয়ক পেপার উপস্থাপন করেন।

ড. দিলারা বেগম বলেন, জার্মানওয়াচ জিআই গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে ৭ম। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার বিস্তার, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, নদীভাঙন ও ঘনঘন দুর্যোগে জীবন, জীবিকা ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিগত বছরে সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, কেয়ার ও অ্যাওসেড এর সমীক্ষা অনুসারে উপকূলীয় জনগণের ৭০.২% ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু ও পানির উৎসে ক্ষতি ভোগ করছে। অ্যাওসেড-এর হেড অব প্রোগ্রাম ও অপারেশন্স শংকর রঞ্জন সরকার কর্মসূচি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা উত্থাপন করেন।

শংকর রঞ্জন সরকার বলেন, সাতক্ষীরায় ৪১,৭৮৮ হেক্টর জমি প¬াবিত, যার মধ্যে ১৮,৩৪০ হেক্টর ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রায় ৫০,০০০ মানুষ পানিবন্দি। বাগেরহাটে চিংড়ি ঘের, ধানক্ষেত ও শাকসবজি চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। বাঁধভাঙন ও ড্রেন অবরোধের কারণে পৌর ও গ্রামীণ এলাকা জলমগ্ন। আইপিসিসি ৬ষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চরম বৃষ্টিপাত ও সামুদ্রিক ঝড় আগামী দশকে আরও বৃদ্ধি পাবে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১.৫২ কোটি মানুষ ২০৫০ সালের মধ্যে বসতবাড়ি হারাতে পারে, যাদের একটি বড় অংশ শহরমুখী হয়ে দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকিতে পড়বে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এডিশনাল ডেপুটি ডাইরেক্টর মো: জামাল উদ্দিন বলেন, সাতক্ষীরার উপকূলীয় দুই উপজেলায় মিঠা পানির সংকট এবং লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে নারী ও শিশুরা দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য। দুর্যোগ ও খাদ্যসংকট নারীদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। দারিদ্র্য ও জীবিকার সংকট বৃদ্ধি পেয়ে খুলনা বিভাগের দারিদ্র্য হার ২৪.৬% এ পৌঁছেছে। সুন্দরবন বন এলাকা হুমকির মুখে; লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম ও স্থানীয় মৎস্যনির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবিকাকে বিপন্ন করছে।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না, অধ্যাপক শেখ হেদায়েতুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নাজমুন নাহার ঝুমুর, অধ্যাপক ভারতেশ্বরী বিশ্বাস, খুলনা বিভাগীয় জলবায়ু বিষয়ক সামাজিক ফোরাম ম্যাপ-এর যুগ্ম আহবায়ক শিরিনা বেগম, প্রভাষক শরীফুল ইসলাম, শ্যামল কুমার বিশ্বাস. এ কে এম আবু জাফর সিদ্দিকী, উন্নয়নকর্মী ফারুক রহমান, সাংবাদিক জুলফিকার রায়হান, আবুল কালাম আজাদ, আফজাল হোসেন, বিশ্বজিৎ মুন্ডা, শেখ আবুল কালাম, দুলাল চন্দ্র দাস, নাসরিন সুলতানা, মীর্জা সুলতানা, শাম্মি আক্তার কুমকুম, জহুরা খাতুন, আব্দুস সালাম, জান্নাতি মৌ, রবিউল ইসলাম, মির্জা সুলতানা, শরিফুল ইসলাম, মোঃ আসাদুজ্জামান, শ্যামল কুমার বিশ্বাস, সুদীপা বসু, ইমরান হোসেন সরদার, রায়হান পারভেজ, মরিয়ম খাতুন, মো: বায়েজীদ হাসান, ওমর ফারুক, আনিসুর রহমান, শংকরী পাল, চায়না রাণী দাস প্রমুখ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *