অনলাইনঅপরাধআইন আদালতআন্তর্জাতিকজাতীয়জীবনযাপনসদরসাতক্ষীরা জেলা

নারী পাচারকারী সিয়াম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রফিকুল র‍্যাব ও পুলিশ হাতে আটক

গাজী হাবিব: মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ এর দুই মামলায় অবশেষে ধরা পড়েছে এই কুখ্যাত নারী পাচারকারীর সাথে জড়িত সিয়াম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম।

রবিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়া পল্টনের চায়না টাউন এলাকা থেকে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশের একটি টিম র‍্যাবের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম গ্রামের সহজ-সরল নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে পাঠাতো। তবে এ চক্রের মূল হোতা সাতক্ষীরা শহরের রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ার অবৈধ প্রতিষ্ঠান লামিম ভিসা কেয়ার-এর মালিক মনিরুল ইসলাম।

লোভনীয় অফার দিয়ে মনিরুল ও রফিকুলের যোগসাজশে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা এলাকার সিদ্দিক সরদারের মেয়ে খুকুমণিকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। মোটা অংকের বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখালেও সেখানে পৌঁছে খুকুমণি অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন। দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস পর সৌদি পুলিশের সহায়তায় জীবন নিয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন তিনি।

দুই সন্তানের জননী খুকুমণি দেশে ফিরে মানব পাচারকারী মনিরুল ও রফিকুল গংদেরকে আসামি করে জেলা লিগ্যাল এইড সহায়তায সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।

তদন্তে জানা যায়, মামলার ১ নং আসামি মনিরুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বালিথা এল্লারচর গ্রামের সিদ্দিক মোড়লের ছেলে। সে এই মামলায় আগেই গ্রেফতার হয়ে জেল খাটলেও পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।। তবে রফিকুল ইসলাম ঢাকায় থেকে বাদী খুকুমণিকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। অবশেষে পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা ও র‍্যাবের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনিরুল ও রফিকুলের নেতৃত্বে শত শত নারী সৌদি আরবে পাচার হয়েছে। যাদের অনেকেই এখনো হয়তো সৌদিতে আটকা পড়ে আছে।

ভুক্তভোগী খুকুমণি বলেন, “আমি একজন নারী হয়েও শুরু থেকে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। তারা আমাকে মাদ্রাসায় চাকরির ভিসার কথা বলে সৌদি আরবে পাঠায়। সেখানে গিয়ে আমি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হই। আজ তাদের একজন গ্রেফতার হয়েছে, আমি চাই আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”

এই মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ থাকলেও সাহস করে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না! যদি কেউ প্রতিবাদ করে তাহলে সেই ভুক্তভোগীর বাড়ির এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি গোপনে ভয় ভীতি দেখিয়ে মিটমাট করা হয়। হলে মানব পাচারকারী চক্রের মূল হো তারা থেকে যায় ধরাছোয়ার বাইরে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, আটক রফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পাচার চক্রের আরও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সাতক্ষীরা সচেতন মহলসহ ভুক্তভোগী পরিবারের দাবী- পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল ও শাস্তি এবং ভুক্তভোগী নারীদের জীবন রক্ষা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *