সাতক্ষীরার কৃষকনেতা সাইফুল্লাহ লস্করের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কৃষকনেতা সাইফুল্লাহ লস্কর-এর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৫) বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া লস্করপাড়ার সমাধিস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়।
এ সময় প্রয়াতের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন ও শপথ পাঠ করা হয়। শপথ পাঠ করান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হক লিকু।
এ সময় সংক্ষিপ্ত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক তাপস বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হক লিকু, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের খুলনা জেলা সভাপতি এমএম আবুল হোসেন, যশোর জেলার সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির খুলনা জেলা সভাপতি খাদিজা বেগম, কৃষক সংগ্রাম সমিতি খুলনা জেলার সহ-সভাপতি প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বিমল কৃষ্ণ বৈরাগী ও যশোর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস প্রমুখ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সাইফুল্লাহ লস্কর সমগ্র জীবন ধরে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি জনগণ ও সাতক্ষীরার ক্ষেত্রে ভূমিহীন গরীব কৃষকদের খাস জমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা নিবেদনে তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামের বিকল্প নাই। দেশের কৃষকসহ শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণের সমস্যা-সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এখানে কৃষক তার রক্তকে ঘামে পরিণত করে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে জীবন বাজি রেখে ধারদেনার মাধ্যমে উৎপাদন করে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সার, বীজ, কীটনাশক এবং কৃষিতে আধুনিকায়নের নামে যন্ত্র ও সেচ কাজে ব্যবহৃত জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত মূল্যের কারণে উৎপাদন খরচ বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। যা আজ সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ একটি নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী দেশ। বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষির সমস্যার মূল কারণ সা¤্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দালাল আমলা মুৎসুদ্দীপুঁজির নির্মম শোষণ-লুণ্ঠণ।
সেই সাথে জোতদার-মহাজনী-সামন্তবাদী শোষণ এবং তাদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকারের স্বৈরাচারী শাসন, অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন। বর্তমানে কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, তাঁতিদের অনেকেই নিজ নিজ পেশা পরিবর্তন করে জীবন ধারণ এবং টিকে থাকার সংগ্রামে বিপর্যস্ত। গরীব ভূমিহীন গৃহহীন কৃষকের বছরব্যাপি কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হয়।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে খাল-বিল, নদী-নালা, হাওড় এলাকা সংকুচিত হয়ে পড়া, সাগরে মৎস্য আহরণে প্রয়োজনীয় নৌকা, ট্রলার, জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও পুঁজির অভাবে পেশায় টিকে থাকতে মহাজনদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। মহাজনদের কারসাজি ও দৌরাত্ম্যে উপকূলীয় জেলেদের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের ভাতা লুটপাট, প্রতিবেশি দেশগুলোর বাংলাদেশের সীমানায় বেপরোয়া মৎস্য আহরণ সমস্যাকে গভীর করছে। উপকূলে পর্যাপ্ত লবণ চাষের সুযোগ থাকলেও লবণ চাষীরা লবণের ন্যায্যমূল্য পায় না।
এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) বাস্তবায়নে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে গ্রামাঞ্চলের সাথে শহরের যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর নামে সা¤্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির গ্রামাঞ্চলে বিনিয়োগের রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। এভাবে সামন্তবাদের সাথে সা¤্রাজ্যবাদের শোষণ আরও পোক্ত করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গ্রামে গ্রামে এনজিও ঋণের ফাঁদে পড়ে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে গ্রাম ছাড়া হচ্ছে। সার-বীজ-কীটনাশক ইত্যাদি কৃষি উপকরণের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা কৃষি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে দারিদ্র্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

