অনলাইনঅপরাধআইন আদালতআন্তর্জাতিককালিগঞ্জকৃষিসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

কালিগঞ্জে ভারতীয় নাগরিকসহ একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামে সার ডিলারশীপের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিসিআইসি এবং বিএডিসি সারের ডিলারদের মধ্যে অফিসের কিছু ঘুষখোর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ মদদ ও সহযোগিতায় একটি সিন্ডিকেট ব্যবসা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং ডি এ পি সারের ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক সহ একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামে ডিলারশিপ প্রদান। সার ডিলার নিয়োগ নীতিমালা ২০০৯ উপেক্ষা করে অনিয়মের মাধ্যমে বিসিআইসি ডিলার নিয়োগ।

অননুমোদিত খুচরা সার বিক্রি, তাদের সময়ও প্রয়োজন মত সার প্রদান না করা এবং অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির ঘটনাটি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন চক্রের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে। দীর্ঘ দিনের অনুসন্ধানে জানা যায় ২০০৯ সালে ফ্যাসিস্ট, স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগ শাসনামলে কালিগঞ্জ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলার নিয়োগ দেয় সরকার।

এ ছাড়াও সে সময়ে ১২ টি ইউনিয়নে বিসিআইসি ডিলার এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে ১ জন করে ১০৮ জন প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধার্থে খুচরা ডিলার এবং বিএডিসির ১৩ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে পূর্বের প্রক্রিয়া গত ২৫ নভেম্বর বর্তমান সরকার বাতিল করেছে। অভিযোগ রয়েছে যে ২৫ জন সারের ডিলারশিপ পেয়েছেন তাদের ছাড়া নিয়োগকালীন সময়ে আর কাউকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যারা নিয়োগ পেয়ে ছিলেন তারা তৎকালীন সময়ের সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে। সেই থেকে ভারতে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক হয়ে একই পরিবারের সদস্যরা স্বামী স্ত্রী ,ভাই, ভাইয়ে মিলে একাধিক নামে ডিলারশিপ নিয়ে উপজেলা জুড়ে সারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ঐ ২৫ জন ডিলারের মধ্যে ভারতীয় নাগরিক এবং একই পরিবারের একাধিক ডিলার রয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্য ও ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের ধলবাড়িয়া গ্রামের শেখ গোলাম মোস্তফার অভিযোগের সূত্র থেকে জানা যায় ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের শ্যামাপদ খাঁ ওরফে শ্যামাখার পুত্র পলাশ খাঁ মেসার্স মাতৃ এন্টারপ্রাইজ নামে বিসিআইসির ডিলার এবং তার স্ত্রী সঙ্গীতা খাঁর নামে বিএডিসি ডিলার নিয়ে মেসার্স মাতৃ এন্টারপ্রাইজ পরিচালনা করে আসছে। অন্যদিকে এই চক্করের মূল হোতা ভাই সুকুমার খাঁর নামে বিএডিসির ডিলারশিপ নিয়ে মেসার্স ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ এবং তার স্ত্রী দিপালী খাঁর নামে মেসার্স অনু এন্টারপ্রাইজ বিএডিসির ডিলারশিপ নিয়ে যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এবং তাদের ভাই নিমাই খাঁ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি ভারতে বসবাস ও ভারতীয় নাগরিক হয়েও বিএডিসির ডিলারশিপ নিয়ে মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ নামে সারের ডিলারশিপ নিয়ে বহাল তবিয়াদে ডিলারশিপ পরিচালনা করে আসলেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন কিছুই জানেন না বলে জানান।

গত ৮ আগস্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৬ নভেম্বর জানাজানি হওয়ায় তার ডিলারশিপ বাতিল করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও মৌতলা ইউনিয়নের মৌতলা গ্রামের সাইফুল ইসলামের নামে মেসার্স সাইফুল ট্রেডার্স নামে দু,টি ডিলারশিপ নেওয়া ছাড়াও তার পুত্র মোজাম্মেল হক তার নিজের নামে মেসার্স মোজাম্মেল হক ডিলারশিপ নিয়ে মৌতলা ইউনিয়নে একই নামে বাপ, বেটা সুবিধা ভোগ করলেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিছুই জানেন না বলে জানান এ প্রতিনিধিকে। এই ভাবে বাপ-বেটা ,ভাইয়ে, ভাইয়ে স্বামী- স্ত্রী ,ভারতীয় নাগরিক মিলে কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে সারের রাজত্ব কায়েম করলেও কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন যেন ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খায়নি। এ যেন মিলেমিশে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।

এইভাবে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসটি সিন্টিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে মাসোহারা এবং বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার নগদ নারায়ণে তুষ্ট হয় কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিনের সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ সম্বলিত অভিযোগ না দিলে অভিযোগ গ্রহণ করেন না বলে ভুক্তভোগীরা জানান। যে কারণে অভিযোগকারী গোলাম মোস্তফা জানান আমি অভিযোগ করে এবং চেয়ারম্যানের তদন্ত তদন্ত সনদ নিয়েই অভিযোগ জমা দিতে হয়েছে। এমনি ভাবেই চলছে কালিগঞ্জ কৃষি অফিসের সার সিন্ডিকেট সহ প্রণোদনা ও বীজ সিন্ডিকেটের কার্যক্রম। আর এই সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করেন সুকুমার খাঁ। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কৃষ অফিসার ওয়াসিম উদ্দিনের নিকট জিজ্ঞাসা করতে বলেন।

এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিনের অফিস কক্ষে যেয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। তবে অভিযোগ পেয়ে গত ১৬ নভেম্বর দু,জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে ভারতীয় নাগরিক কিভাবে ডিলারশিপ নিয়ে সার উত্তোলন করেছে এখনো পর্যন্ত তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর মেলেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *