উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট ও বাংলালিংক টাওয়ারে দুর্ধর্ষ চুরি, ধাওয়া দেওয়ায় দু,জন গুলিবিদ্ধ, আটক- ১
মাসুদ পারভেজ/ তাপস কুমার ঘোষ, কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জের উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ও এর পাশে অবস্থিত বাংলালিংক টাওয়ারে দুর্ধর্ষ চুরি সংগঠিত হয়েছে। এলাকাবাসী চোর দলকে ধাওয়া দেওয়ায় মোটরসাইকেল যোগে পালানোর সময় রিগ্যান হোসেন ও আকরাম হোসেন নামে ২ ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। যাওয়ার সময় উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা ১ টি ল্যাপটপ,১টি কম্পিউটার ১টি হার্ডডিস্ক সহ মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে গেলেও বাংলালিংক টাওয়ারের ৩ টি ব্যাটারি ভ্যানে রেখে পালিয়ে যায়। ওই সময় স্থানীয়রা ভ্যান চালক দুর্ধর্ষ চোর মোসলেম আলী নামে ১ ব্যক্তিকে ইঞ্জিন ভ্যান এবং বাংলালিংক টাওয়ারের ৩ টি ব্যাটারিসহ আটক করে পুলিশের সোপর্দ করে। কালিগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শ নাজমুল হোসেন সকালেই ঘটনাস্থল থেকে চোর মোসলেম আলীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তবে স্থানীয়দের সন্দেহের তীর অত্র বিদ্যালয়ের বরখাস্ত কৃত প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুর এবং নৈশ প্রহরী ইয়াসিনের দিকে। তাদের ধারণা প্রমাণ লোপাট করতে পরিকল্পিতভাবে এই চুরির ঘটনা ঘটতে পারে। মোটরসাইকেল যোগে সঙ্ঘবদ্ধ চোর চক্রের ছোড়া গুলিতে আহতরা হলেন- বাংলালিংক টাওয়ারের টেকনিশিয়ান রিগ্যান হোসেন(৩৫) ও অন্যজন টেংরামারি গ্রামের মৃত মুর্শিদ আলী গাজীর পুত্র আকরাম হোসেন (৪৫)। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ আকরাম হোসেনকে স্থানীয ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হলেও গুরুতর আহত গুলিবিদ্ধ রিগ্যানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশের হাতে আটকৃত উজয়মারী গ্রামের কাসেম আলী গাজীর পুত্র দুর্ধর্ষ চোর মোসলেম আলী (৩৮)। তার বিরুদ্ধে চুরি ডাকাতিসহ বহু অভিযোগ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাহেরসহ নিজদেবপুর গ্রামের আব্দুল মাজেদ, আব্দুল জব্বার সহ একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানান, রাতের কোন এক সময় পাঁচিল টপকে প্রথমে উজ্জীবনী ইনস্টিটিউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে গ্রিল বেয়ে দ্বিতীয় তলায় ওঠে চোর চক্রের সদস্যরা। তারা প্রথমে নিচ তলায় এসে প্রধান শিক্ষকের রুমের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে নগদ ২৫ হাজার টাকা মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে আসে। পরে কম্পিউটার রুমে ঢুকে কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক ,ল্যাপটপ নেয়। এরপর দ্বিতীয় তলায় উঠে শিক্ষকদের রুমের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে সমস্ত আলমারির দরজা, ড্রয়ার ভেঙে তছনছ করে কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে পাশে রাস্তার পাশে বাংলালিংক টাওয়ারে প্রবেশ করে সেখান থেকে ৩টি ব্যাটারি বাহির করে ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় ফজরের আযানের আওয়াজে অথবা আকরাম হোসেন দেখতে পেয়ে ধাওয়া করলে তাকে মোটরসাইকেল যোগে ৩ জন দুর্বৃত্ত যাওয়ার পথে গুলি করে।
খবর পেয়ে বাংলালিংক টাওয়ারের গাড়ি নিয়ে পিছনে ধাওয়া করে টেকনিশিয়ান রিগ্যান একজনকে ঝাপটে ধরলে তাকে গুলি করে আহত করে চোর চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ইয়াসিন সাংবাদিকদের জানায় ভোরে আযান দেওয়ার পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি গেটে তালা দেওয়া কিন্তু ভিতরে প্রধান শিক্ষক এবং কম্পিউটার রুমের দরজা খোলা। তখন আমি দ্বিতীয় তলায় শিক্ষকদের রুমে তালা ভাঙা দেখে আমি প্রধান শিক্ষক মাহমুদুন্নবীকে খবর দেই। তবে স্থানীয়দের ধারণা বিদ্যালয়ে কোন নৈশ প্রহরী ডিউটিতে না থাকায় পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে অত্র বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান ফজরের নামাজের সময় নৈশ প্রহরী আমাকে জানালে আমি বিদ্যালয়ে দেখি এসে প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার শিক্ষক, এবং শিক্ষকদের বসার রুমের তালা ভেঙে জিনিসপত্র ছাড়ানো ছিটানো তছনছ করা এবং সমস্ত আলমারির দরজা এবং ড্রয়ার ভাঙ্গা এবং খোলা। বিষয়টি আমি অন্যান্য শিক্ষক এবং অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল এবং থানার অফিসার্স ইনচার্জকে জানাই।
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সন্দেহজনক ভাবে ১ জনকে আটক করা হয়েছে তবে এখনো পর্যন্ত অভিযোগ পায়নি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল এ প্রতিনিধিকে জানান বিষয়টি আমি মামলা করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছি।

