অনলাইনঅপরাধআইন আদালতকালিগঞ্জশিক্ষাঙ্গনসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

কালিগঞ্জে জাল সনদে ৪২ বছর যাবৎ চাকরি করার অভিযোগ প্রধান শিক্ষক হাবিবের বিরুদ্ধে

তাপস কুমার ঘোষ, কালিগঞ্জ: এসএসসি সনদ জালিয়াতি করে চাকরিতে যোগদানের পর এসএসসি পাস করার অভিযোগ প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। এমনই চঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে সনদ জালিয়াতি করে নিয়োগ লাভ ,আত্মীকরণের আগে প্রধান শিক্ষক হওয়াসহ একাধিক আত্তীকরণে ৪২ বছর চাকুরীর শেষে ডিসেম্বরে অবসরে যাওয়ার আগেই উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের নজরে আসে বিষয়টি। ফাঁস হওয়ার পর দৌড়ঝাপ শুরু করেছে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান।

বিষয়টির সত্যতা পেয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার নাজিমুদ্দিন ঐ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে খুলনা বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার নিকট তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর পাঠানো অভিযোগের সূত্র থেকে জানা যায় কালিগঞ্জ উপজেলার সরাবদি পুর গ্রামের ইসমাইল সরদারের পুত্র হাবিবুর রহমান বড়শিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালের ২৫ শে জুন এসএসসি পাস করে। ওই সময় সরাবদিপুর রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের সময় মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ম্যানেজ করে ১৯৮২ সালে এসএসসি পাস দেখিয়ে গত ১৫/৫/১৯৮৩ তারিখে চাকরিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সময়ে ১৯৮৬ সালে স্কুলটি রেজিস্টার্ড থেকে জাতীয়করণ করা হলে হাবিবুর রহমান এইচ এস সি পাশ দেখিয়ে আত্তীকরণ করেন। পরবর্তীতে আবারো ১৯৯২ সালে আত্মীকরণ হয়।

এরপর ২০০১ সালে হাবিবুর রহমান প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতি পান। সেখান থেকে ২০০৭ সালে আবারো আত্মীকরণ লাভ করে। তাহলে আত্তীকরণের আগেই কিভাবে সে প্রধান শিক্ষক হলো এ প্রশ্ন হিসাব রক্ষণ অফিসের। পরবর্তীতে গত ১৭/১০/২০১৭ ইং তারিখে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষাঅফিস থেকে প্রধান শিক্ষকের চাকুরি স্থায়ী করণ করা হয়। এ বিষয়ে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জানান জানান ১০/৫/১৯৮৩ তারিখে বিদ্যালয়ে এসএসসি পাশ সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিতে যোগদান করা এবং জমা দেওয়া সার্টিফিকেট অনুযায়ী সে ২৫ জুন ১৯৮৩ ইং তারিখের সার্টিফিকেট সহ এইচএসসি সার্টিফিকেট কিভাবে জমা এবং কিভাবে নিয়োগ সম্পন্ন হল সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। নিয়োগ লাভের পরে একবার আত্তীকরণ হয়ে গেলে পরবর্তীতে আর কোন সুযোগ না থাকার পরও প্রধান শিক্ষক হাবিবুরের ১৯৯২ সালের এবং ২০০৭ সালের আত্তীকরণ এবং প্রধান শিক্ষক হওয়া নিয়ে রয়েছে নানান অসংগতি ও প্রশ্নবিদ্ধ।

যে কারণে তিনি চাকরিতে যোগদান করার পর হইতে সার্টিফিকেট জালিয়াতি ,বেতন উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে নানান জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় তদন্ত করে সার্টিফিকেট এবং তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ অধিদপ্তর বরাবর অভিযোগ আকারে পাঠানো হয়েছে। এবং বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়েও তার কাছ থেকে কোন সদুত্তর বা সহযোগিতা পায়নি উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস। অথচ আগামী ডিসেম্বরে অর্থাৎ একমাস পরে সে পেনশনের জন্য এলপিআরে চলে যাবে। তার দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে নানান অসঙ্গতি এবং অনিয়ম দুর্নীতি প্রলক্ষিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুলনা বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ অফিসে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। এবং সব দায় দায়িত্ব অপরাধ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বলে দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *