অনলাইনজাতীয়তালারাজনীতিসদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরা-২ আসনে আব্দুল আলিমের মনোনয়নের দাবিতে উত্তাল শহর, সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের দীর্ঘ ৩৭ বছরের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমকে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে আলীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রউফকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠে সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ। সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে এসব বিক্ষুব্ধ কর্মী- সমার্থকরা সাতক্ষীরা- খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও রোদের তীব্র্রতায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের মিলবাজার মোড়ে জমায়েত হতে শুরু করে সাতক্ষীরা-২ (সদর-দেবহাটা) আসনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমের শত শত নেতাকর্মী ও সমার্থকরা। হাতে তাদের প্ল্যাকার্ড, মুখে না পাওয়ার স্পষ্ট ছাপ, দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত নেতাকে ঘিরে বিএনপির দলীয় মনোনয়নের দাবি ও প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় গোটা শহর।

এরপর শুরু হয় বিক্ষোভ সমাবেশ। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব উঠে আসে কন্ঠ থেকে কন্ঠে। চুলচেরা বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের নানান কথা। জোরালো দাবী জানানো হয়- চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমকে দিতে হবে দলীয় মনোনয়ন।

এর কিছু পরেই শুরু হয় মিছিল। চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবী জানিয়ে মিছিলটি শহরের আমতলা মোড়ে পৌঁছে হঠাৎই সড়কে বসে পড়েন তার সমার্থকরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা আমতলা মোড় দিয়ে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকে।

বিক্ষোভকারী বলেন- চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম শুধু একজন রাজনীতিক নন, দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের ‘ভরসার জায়গা’। এই অঞ্চলের রাজনীতির সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে আছে প্রায় দেড় দশক। ২০০৯ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক এড. নুরুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় আলিম ভাইয়ের মতো ত্যাগী নেতা নেই বললেই চলে। আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই মানুষটিই আজ মনোনয়ন বঞ্চিত এটি আমাদের জন্য অপমান।

সাতক্ষীরা জেলা জাসাসের আহবায়ক জিল্লুর রহমান বলেন, নেতাকর্মীরা যখন দলে নিরুৎসাহিত হয়ে যাচ্ছিলেন, আলিম চেয়ারম্যান তখনই সংগঠনকে ধরে রাখার কাজ করেছেন। তাকে বাদ দিয়ে একজন বহিষ্কৃত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া অযৌক্তিক। আমরা আব্দুল আলীম ভাইয়ের মনোনয়ন দাবী করছি।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত যে নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি জনসম্পৃক্ততা বা মাঠের রাজনীতিতে নেতৃত্বের প্রভাব নেই। এ কারণে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন।

সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা এমএ রাজ্জাক বলেন, একজন ত্যাগী নেতার জায়গায় বহিষ্কৃত কাউকে মনোনয়ন দিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হবে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক। চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হোক।

এসময় বিক্ষোভকারীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বলেন, সাতক্ষীরা- ২ আসনের দলীয় মনোনয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমকেই দেয়া হোক। প্রয়োজন হলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেবো।

এর আগে শহরের মিলবাজার মোড়ে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রভাষক আনারুল ইসলাম, জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক কাজী আহসান হাবিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃৃবৃন্দ। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সাতক্ষীরা জেলা মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবলু, সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক শফিকুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আতিয়ার রহমান, সাবেক সদস্য সচিব আবু হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ছোট, আগরদাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ইসমাইল হোসেন, লাবসা ইউনিয়নের মেম্বার আলী হোসেন, লাবসা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ফাহমিদা জামান মিতু, ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ফেরদৌসি ইসলাম মিস্টি, ইউনিয়ন মহিলা দলনেত্রী সেলিনা বেগমসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত শত শত কর্মী, সমার্থক ও শুভাকাঙ্খীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *