সাতক্ষীরায় এতিমখানার বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ জেলা সমাজসেবা কর্তার বিরুদ্ধে
স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক রোকনুজ্জামান বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। আগামীকাল ১৯ নভেম্বর বুধবার এসব অভিযোগের তদন্তে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় থেকে আসছে বিশেষ একটি টিম। অন্যদিকে তদন্তে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে রোকনুজ্জামান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, “সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের শাল্যে গ্রামে অবস্থিত আবু জাফর সিদ্দিকীয়া এতিমখানা নামে একটি বেসরকারি ক্যাপিটেশন প্রাপ্ত এতিমখানা ছিল। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-২৮০/৯৯। উক্ত এতিমখানার কার্যক্রম ২০০৮ সালের পর থেকেই সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তিতে মোঃ রোকনুজ্জামান উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হিসাবে ১৩-১০- ২০১১ খ্রিঃ তারিখে যোগদান করার পর থেকে শাল্যে আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী কবির হোসেন ও তার সহযোগিদের জোগসাজশে ভুয়া রেজুলেশনের দ্বারা মোঃ রোকনুজ্জামানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সোনালী ব্যাংক, সাতক্ষীরা শাখার চেকের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করেন।
মো. রোকনুজ্জামানের সীমাহীন দূর্নীতির বিষয়ে তৎসময়ে একাধিক স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বিতরন রেজিষ্টারের তথ্যমতে ২০১৭ সালের পূর্বের বিতরনকৃত টাকার কোন রেকর্ড সেখানে নেই। উক্ত রেকর্ড রোকনুজ্জামান গায়েব করে দিয়েছে। তবে ২০১৭- ২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ২,৪০,০০০/- (দুই লাখ চল্লিশ হাজার) টাকা ভুয়া বিল ভাউচার এর দাখিল করে কবির হোসেন ও তার সহযোগিদের মাধ্যমে উত্তোলনের প্রমান পাওয়া যায়। অস্তিত্বহীন শাল্যে আবু জাফর সিদ্দিকীয়া এতিমখানার নামে মো. রোকনুজ্জামান ২০১১ সালে সদর উপজেলায় যোগদান করার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কয়েক লক্ষ টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। অপরদিকে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসা শত শত গরু বাবদ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে প্রদানের নামে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করতো। এসব টাকার একটি অংশ পাঠানো হতো তৎকালিন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের এপিএস তৌহিদুজ্জামানের কাছে। এপিএস তৌহিদুজ্জামান ছিল রোকনুজ্জামানের আপন মামা। আর এর বিনিময়ে রোকনের সব অপকর্ম জায়েজ করতো তার মামা। এসব বিষয়ে ওই সময়ে বিভিন্ন দৈনিক স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও মো. রোকনুজ্জামানকে কখনও জেলার বাইরে বদলী করা হয়নি। কখনও বদলীর আদেশ দিলেও এক সপ্তাহের মধ্যে তা বাতিল হয়ে যেতো। এসব অবৈধভাবে আয়কৃত ৭০ লক্ষাধিক টাকা সে সময় রোকনুজ্জামান নিজ ও তার স্ত্রী তামান্না খাতুনসহ বিভিন্ন আত্বীয় স্বজনের নামে ঢাকা আহছানিয়া মিশন, সাতক্ষীরা অফিসে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখেন।
এত অভিযোগের পরও তাকে ২০১৯ সালে সহকারি পরিচালক পদে পদোন্নতি দিয়ে সাতক্ষীরা জেলাতেই রাখা হয়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সমাজসেবা অফিসার হিসেবে চাকরী করছেন সাতক্ষীরাতেই। পরিবর্তীত প্রেক্ষপটের পর সকলের ধারনা ছিল আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে রোকনুজ্জমানকে শাস্তিমূলক বদলী করা হবে। কিন্তু তাকে বদলী না করে সাতক্ষীরায় স্বপদে বহাল রাখা হয়। এখন তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় অব্যাহতভাবে নানান অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালককেও তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপে রাখতেন।
কিছুদিন আগে তার অনুগত ব্যাচমেটকে আশাশুনি থেকে সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক হিসেবে সদ্য বদলী করে এনেছেন। যাতে তার পূর্বের সকল অপকর্ম চাপা পড়ে যায়। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় চাকরী করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে মোঃ রোকনুজ্জামান এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজ মোড় সংলগ্ন যশোর-কালিগঞ্জ প্রধান সড়কের সাথে ৮ কাঠা জমির ওপর নির্মিত প্রাসাদসম সাততলা ভবন নির্মান করেছে। বিপুল পরিমান এই টাকা ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দিতে সেখানে তার দুই ভাইয়ের নাম দেয়া হয়েছে। এছাড়া এই বাড়ির পাশে সম্প্রতি প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যে আরও ৫ শতক জায়গা রোকনুজ্জামান নিজ নামে কিনেছেন বলে জানা যায়। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলা রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ২০১৭ সালের রেজিঃ দলিল নম্বর ৩৫৪৮, ২০২০ সালে ৪৫৫৬, ৫৯৩৮, ৫৯৩৯, ২০২২ সালে ৩৬৬০ ও ১১৫৫২ নং রেজিষ্ট্রি দলিল মূলে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে কয়েকটি মূল্যবান সম্পত্তি কিনেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া স্বনামে বেনামে তার বিপুল পরিমান সম্পত্তি ও নগদ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে বলে জানা যায়। তার এ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির সঠিক ভাবে তদন্ত হলে সকল প্রমান পাওয়া যাবে। সরকারের ৬ষ্ট গ্রেডের একজন কর্মকর্তা হয়ে মো. রোকনুজ্জামানের সম্পত্তির পরিমান দেখে সাতক্ষীরাবাসী বিস্মিত হয়েছেন।
আওয়ামী সুবিধাভোগী একজন দূনীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা এখনও কিভাবে বহাল তবিয়তে সাতক্ষীরাতে চাকরী করেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি বিধি মোতাবেক নিজ জেলাতে এবং একই কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক চাকরী করার বিধান না থাকলেও তিনি ১৮ বছর যাবৎ বহাল তবিয়তে সাতক্ষীরা জেলাতে কর্মরত আছেন।” এরকম শত শত অভিযোগ রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে উঠলেও আলোর মুখ দেখেনি একটিও।
এসব বিষয়ে কথা বলতে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক রোকনুজ্জামানের মোবাইলে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সায়েদুর রহমান মৃধা জানান যথা নিয়মে তদন্ত সম্পন্ন হবে।

