ড্রয়িংরুমে দেড় ঘণ্টা বসে থাকার পরেও কাজী আলাউদ্দিনকে দেখা দিলেন না ডা. শহিদুল আলম
স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা-৩ আসনের রাজনীতি আবারও তোলপাড় তুলেছে বিএনপির মনোনয়ন-পরবর্তী অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা। ধানের শীষ প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মো. আলাউদ্দিন ঘোষণার পর থেকেই দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে ও সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। মনোনয়নপ্রাপ্তির পরপরই তিনি দলীয় সকল নেতাকে পাশে পাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও বাস্তবে সেই পথ যে সহজ নয়, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিন দিন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতার মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে কাজী আলাউদ্দিনের পাশে এসে দাঁড়ালেও দলের আলোচিত ব্যাক্তিত্ব, ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ডা. মো. শহিদুল আলম এখনো মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
মনোনয়ন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কাজী আলাউদ্দিন কয়েক দফা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ডা. শহিদুল আলমের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখানো ও আসন্ন নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে তিনি সরাসরি সাক্ষাৎ করতে সিদ্ধান্ত নেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দিনের শুরুতেই সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে কাজী মো. আলাউদ্দিন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র কাজী সাজেদুর রহমান ও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকাস্থ গুলশানের ডা. শহিদুল আলমের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হন। উদ্দেশ্য ছিল শুধু একটিই—দলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভুল বোঝাবুঝি দূর করা এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামা।
তবে বাসায় গিয়েই শুরু হয় অপেক্ষার পালা। ড্রয়িংরুমে বসে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। দলের শীর্ষ দায়িত্বশীল একজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে- এ প্রত্যাশায় তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন।
কিন্তু সময় যতই গড়াতে থাকে, ততই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ডা. শহিদুল আলম দেখা করতে আসছেন না। অবশেষে বাসার কেয়ারটেকার এসে জানান- স্যার দেখা করবেন না।
এই কথাটি শুধু কাজী আলাউদ্দিনকেই নয়, তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদেরও হতবাক করে। দলীয় শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক সৌজন্যের জায়গা থেকেও এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
ঘটনার পর কাজী আলাউদ্দিন নিরুৎসাহিত না হয়ে শান্তভাবে সঙ্গীদের নিয়ে ডাঃ শহীদুল আলমের বাসা ত্যাগ করেন। তবে এ ঘটনার পর সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, মনোনয়ন বঞ্চনার ক্ষোভ থেকেই এই কঠোর অবস্থান নিতে পারেন ডা. শহিদুল আলম। আবার কেউ কেউ এটিকে দলের ভেতরের অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন।
সচেতন মহল মনে করে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি যদি শক্ত অবস্থান নিতে চায়, তবে দলীয় বিবাদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি। আর সেই কারণেই কাজী আলাউদ্দিনের পক্ষ থেকে প্রথমে উদ্যোগ নেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার পর কাজী আলাউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতেই আমি তার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানানো হলো- তিনি দেখা করবেন না। বিষয়টি কষ্টদায়ক।
তিনি আরও বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আইউব হোসেন মুকুলসহ সবাই যদি দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারেন, তবে কেন তিনি পারবেন না- তা আমি বুঝতে পারছি না। তবুও আমি তার জন্য শুভকামনা জানাই। দল এগিয়ে যাক- এটাই আমাদের লক্ষ্য।
এ ঘটনার পর সাতক্ষীরা-৩ আসনের রাজনীতি আরও উষ্ণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জনগণ, বিশেষ করে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন একটাই প্রশ্ন-দল কি শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে?

