অনলাইনঅপরাধআইন আদালতশিক্ষাঙ্গনসদরসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

সাতক্ষীরায় একটি স্কুলেই অর্ধশতাধিক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এক মুদি দোকনীর কাছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও স্থানীয় সালিশে ওই মুদি দোকনীর দোকান অন্যত্র স্থানান্তরের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা বল্লী ইউনিয়নের বল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির এ অভিযোগ তোলেন।

জানা গেছে, অভিযুক্ত মুদি দোকনদার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আরিজুল ইসলাম আখড়াখোলা বাজারের ব্রীজের মুখে বল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ‘মাহিব এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি মুদি দোকান পরিচালনা করেন। তিনি দীঘদিন ধরে নানা কৌশলে স্কুলের ছাত্রীদের দোকানের ভিতরে নিয়ে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের বিষয়টি জানায়। তারপর একে একে ওই মুদি দোকানীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে অন্যান্য ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরাও।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের থেকে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আরিজুল ইসলামের যৌন লালসার শিকার হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানায়, ‘আরিজুল ইসলাম তার দোকানে এমনভাবে মালপত্র সাজিয়ে রাখতেন যেন- কিছু কিনতে হলে মেয়েদের দোকানের ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।’ তারা আরো জানায়, ‘কোনো মেয়ে একা দোকানে গেলে আরিজুল ইসলাম তাদের গায়ে এবং শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতো। হাত ধরে টানাটানি করত। তাদের জোর করে প্যাড কিনতে বলতো। এছাড়া মেয়েদের অনেক গোপন বিষয়ে আরিজুল ইসলাম কথা বলতো এবং কাউকে কিছু বললে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার ভীতি প্রদর্শন করত।’

ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী জানায়, ‘কয়েকদিন আগে তার এক সহপাঠীর মন খারাপ দেখে কারণ জানতে চাইলে সে জানায়- দোকানদার কাকু আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।’ এরপর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থীর সাথে অভিযুক্ত ব্যক্তি একই ধরনের আচরণ করেছে। শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

বল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসমা খাতুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একজন ছাত্রী স্কুলের সামনে মুদি দোকানী আরিজুল ইসলামের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার পর তারা অভিভাবক সমাবেশ করে অভিভাবকদের বিষয়টি জানান। সেই সমাবেশে জানা যায়, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বহু ছাত্রী অভিযুক্তের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছে। একজন অভিভাবক জানান, তার মেয়ের হাত ধরে টান দেওয়ায় সে হাতে ব্যথা পেয়েছিল। ভয়ে শিক্ষার্থীরা কাউকে কিছু জানাতে পারেনি।

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, তারা শিক্ষার্থীদের ‘ব্যাড টাচ’ এবং ‘গুড টাচ’ সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তাই ছাত্রীরা সাহস করে অভিযোগ করতে পেরেছে।

পরে, বল্লী ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, অভিভাবক এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, যৌন হয়রানিকারী আরিজুলের দোকানটি এখানে আর থাকতে পারবে না।

এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত আরিজুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাকে এবং পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কথা বলতে বল্লী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিতুর রহমানের কাছে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *