কালিগঞ্জের বিএনপি নেতা ফারুক হোসেনের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী
গাজী হাবিব: আজ ১৭ নভেম্বর। ২০১৭ সালের এদিন কালিগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ঝরে যায় একটি নক্ষত্র। আকাশ-বাতাস সেদিন ভারি হয়ে উঠেছিল নিরব অশ্রু সংবরণে। বিশেষ করে উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে সেদিন ঘোর অমাবস্যার আঁধার ভর করেছিল। যার জন্য কেঁদেছিল অবুঝ শিশুও সেই নক্ষত্র মানুষটি হলেন ফারুক হোসেন। গুণী রাজনৈতিক নেতা, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের এদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই তরুণ নেতার আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবার, রাজনৈতিক সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং সামাজিক সংগঠনগুলো দোয়া মাহফিল, মিলাদ, কুরআনখানি ও স্মরণসভাসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
ফারুক হোসেন জন্মগ্রহণ করেন কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বন্দকাটি গ্রামের এক শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর পিতা প্রয়াত আব্দুল গণি ছিলেন এলাকার সুপরিচিত সমাজসেবক। এলাকায় মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ- যেখানেই উন্নয়নের উদ্যোগ, সেখানেই তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। পিতার এই মানবিক মূল্যবোধ ও সমাজসেবার চর্চা খুব ছোটবেলা থেকেই ফারুক হোসেনকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
তাঁর মুখ থেকে শোনা কথা- শিক্ষাই মানুষকে আলোকিত করে, আর আলোকিত মানুষই সমাজে পরিবর্তন আনে। ঠিক এমনই এ মনোভাব নিয়ে তিনি ১৯৯৫ সালে এসএসসি, ১৯৯৭ সালে এইচএসসি এবং খুলনা বিএল কলেজ থেকে ২০০১ সালে স্নাতক ও ২০০৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। শিক্ষাজীবনেই তাঁর দৃঢ় চিন্তা, সংগঠক মনোভাব এবং নেতৃত্বের গুণাবলি প্রকাশ পেতে শুরু করে।
ছাত্রজীবনেই তিনি যুক্ত হন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতিতে। খুলনা বিএল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসেন আহবায়ক কমিটির সদস্য পদে। পরবর্তীতে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করে তিনি হয়ে ওঠেন তরুণ নেতৃত্বের অন্যতম পরিচিত নাম।
রাজনীতির পাঁচপাকে ২০০৪ সালে বিস্তৃত সম্মেলনের মাধ্যমে ফারুক হোসেন নির্বাচিত হন কালিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নেতৃত্বে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নতুনভাবে সংগঠিত ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে নিয়মিত মতবিনিময়, প্রশিক্ষণ, সাংগঠনিক সফর ও গণসংযোগ চালিয়ে সংগঠনকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান।
পরবর্তীতে তিনি কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। সমাজের কল্যাণমূলক কাজগুলোতে তিনি ছিলেন সর্বাগ্রে।রাজনীতি ছাড়াও তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে ছিলেন সমান দক্ষ। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী বণিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দায়িত্বকালে বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, উন্নয়ন হয় অবকাঠামোর। ব্যবসায়ীরা তাঁকে আজও স্মরণ করেন শ্রদ্ধার সাথে।
ফারুক হোসেন ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, হাস্যোজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন চরিত্রের মানুষ। তিনি কারও ক্ষতির চিন্তা করতেন না। সহজ-সরল জীবন, পরিষ্কার মন- এটাই ছিল তাঁর পরিচয়। অল্প সময়ের জীবনে তিনি আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত রাখেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা, সামাজিক সমস্যায় দ্রুত এগিয়ে আসা- এসব কাজ তাঁকে মানুষের কাছে করে তোলে প্রিয় একজন।
তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে কালিগঞ্জবাসী হারিয়েছিল এক উদীয়মান নেতা, সমাজ হারিয়েছিল একজন মানবিক মানুষ। তাঁর মৃত্যুর আট বছর পরেও এলাকায় তাঁকে স্মরণ করা হয় ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায়। মরহুম ফারুক হোসেনের পরিবার তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

