সাতক্ষীরার লাবসায় ওয়াকফ এস্টেটের ১ একর ২৮ শতক জমি দখলের পাঁয়তারা
গাজী হাবিব: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা এলাকায় আমির হায়দার ওয়াকফ এস্টেটের ১ একর ২৮ শতক জমি দখলের চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি একদল প্রভাবশালী জমি ব্যবসায়ী ওই সম্পত্তির চারপাশে পাকা পিলারের সঙ্গে লোহার তার টানিয়ে বেড়া দেওয়ার মাধ্যমে দখলের পাঁয়তারা শুরু করে এক ভূমিদস্যু চক্র।
জানা যায়, আমির হায়দার ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী মাহমুদা খাতুন গত ১৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করার পর থেকেই স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু ও জমি ব্যবসায়ী নতুন মোতাওয়াল্লী নিয়োগের আগেই দখল প্রচেষ্টা শুরু করে।
দলিল অনুযায়ী, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা মৌজার জে.এল নং ৮৮, রে. সাঃ নং ৩৫, খতিয়ান নং ১২২৯, দাগ নং ৫৬৪ জমি ভূলবসত আতাউল হকের নামে রেকর্ড হওয়ার আদালতে মামলা চলমান আছে।
স্থানীয়রা জানান, দখলচেষ্টাকারীদের মধ্যে রয়েছেন লাবসা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে মীর মফিজুল ইসলাম, কামালনগর গ্রামের মৃত সাফায়েত করিমের ছেলে আফজালুল করিম বিপু, ইটাগাছা-বাঁকাল এলাকার কাজী রেজাউল করিমের ছেলে কাজী রাসিউল করিম রোশান, লাবসা গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে আবুল খায়ের ও মৃত কালো পুটের ছেলে মো. করিমসহ আরও অনেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, একটি ভূমিদস্য গ্রুপ ওয়াকফ এস্টেটের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। তারা এই জমি তারের কাঁটার বেড়া দিয়ে
ঘিরে ফেলেছে। এই আম বাগানে এলাকায় ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা করে। ধানের সময় স্থানীয়রা ধান উঠিয়ে এখানে ধান ঝাড়ে এবং পরিষ্কার করে শুকাতে দেয়। অনেক মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। ভূমিদস্যু গ্রুপ এগুলো বন্ধ করে মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি তারা এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের পরিচয় দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মানুষের জায়গা জমি দখল করে নিতো। সরকার পতনের পর এলাকায় ফিরে একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে এখন বিভিন্ন জায়গায় জমি দখল করে বেড়াচ্ছে। এতে করে ওই রাজনৈতিক দলের ভোট কমে যাচ্ছে। আমরা এদের বিচার চাই।
জমির ওপরে থাকা একটি গাছে দখলকারীরা দুটি সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে। প্রথম বোর্ডে লেখা- পৈতৃক সূত্রে এই জমির মালিক আশফাকুল হক, শাহিদা আমিন, শাবানা ও শামিমা নাসরিন; সর্ব পিতা মুন্সি আতাউল হক ও স্ত্রী নার্গিস আছর হক; খতিয়ান নং ১২২৯, দাগ নং ৫৬৪, পরিমাণ ১ একর ২৮ শতক।”
অন্য বোর্ডে লেখা আছে- বায়না সূত্রে এই জমির মালিক আফজালুল করিম বিপু ও মীর মফিজুল ইসলাম।
ওয়াকফ এস্টেটের এই জমিটি সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পূর্ব পাশে ফুটবল মাঠ সংলগ্ন।
অভিযুক্ত আফজালুল করিম বিপু মোবাইলে বলেন, আমরা আদালতের ইনজাংশন পেয়েছি, তাই আইনানুগভাবে দখল নিয়েছি।
জানতে চাইলে সদ্যপ্রয়াত মোতাওয়াল্লী মাহমুদা খাতুনের ভাই বাবলুর রহমান বলেন- আমির হায়দার ওয়াকফ স্টেটের এই সম্পত্তি মাহমুদা খাতুন ভোগদখলে থাকাকালীন সময়ে এস.এ রেকর্ড নিয়ে একটি সমস্যা ছিল। এজন্য বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ভূমিদস্যু গ্রুপ আদালতের ইনজাংশন চেয়ে আবেদন করেছিল। পরে মুতায়াল্লি মাহমুদা খাতুন উক্ত নিষেধাজ্ঞার জেলা জজ আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করে। আপিলে উক্ত আদেশটি স্থগিত করে । যা এখনও বিদ্যমান। তার মৃত্যুর পর ওয়াকফ বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে, তবে এখনো নতুন মোতাওয়াল্লী নিয়োগ দেয়া হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই জমি এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধুলা, কৃষকরা ধান শুকানো ও ফসল মাড়াইয়ের কাজে ব্যবহার করে আসছে। এ জমি থেকে প্রাপ্ত আয় স্থানীয় মসজিদ ও মাদরাসার ব্যয়ভার বহনে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয়দের দাবি, ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা রোধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর সরকারি ভূমি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি।

