অনলাইনইতিহাস ঐতিহ্যকলারোয়াকৃষিজীবনযাপনতালাসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

কলারোয়ায় ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসবে মেতেছে হাজারো মানুষ

মেহেদী হাসান শিমুল: পলো বাওয়া উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। কালের বিবর্তনে পলো বাওয়া ঐতিহ্যটি প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সাতক্ষীরার কলারোয়ার সীমান্তবর্তী চন্দনপুর ইউনিয়নের কয়েক জন যুবককের উদ্দ্যোগে প্রতিবছর শীতের মৌসুমে কয়েক মাস জুড়ে পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

সাতক্ষীরা জেলা থেকে পোলো বাওয়া উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে।পলো দিয়ে মাছ ধরতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

পলো বাওয়া’ বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব ‘পলো বাওয়া’ (পলো দিয়ে মাছ ধরা)। একসময় গ্রামে বর্ষা মৌসুম শেষ হলে বাঁশ দিয়ে তৈরি পলো দিয়ে নদী-নালা ও খাল-বিলে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকার করতে দেখা যেতো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ‘পলো বাওয়া’।

তবে বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে কলারোয়া চন্দনপুর গ্রামের রিপন , আলমগীর হোসেন, সাব্বির হোসেন সহ অনেকে নেতৃত্বে মাইকিং ও ঢ্যাড়াপিটিয়ে স্থানীয় বাজারে মাছধরার জন্য বা পলো বাওয়ার জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়।

গত এক মাস ধরে কলারোয়ার ভাড়কীর বিল, নোয়াকাটি বিল,কাজিরহাটবিল, কায়বা কোলনী বিলে পলোবাওয়া আয়োজন করা হয় । এতে কয়েক হাজার শৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেন।

এলাকাবাসী জানান, কলারোয়া উপজেলার কয়েকটি বড় বড় বিলে পানিতে ডুবে থাকে। ভারতীয় সীমান্তে ইছামতি নদীর পানি ঢোকে এই সমস্ত বিলে আমন ধানের ফসল না হওয়াই মৎস্য শিকারিরা বিভিন্ন ভাবে মৎস্য শিকার করতে ব্যস্ত থাকে। তবে বিলের পানি নিষ্কাশনের নির্দিষ্ট সময়ে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করে।

কয়েকটি গ্রাম থেকে শৌখিন মাছ শিকারিরা ভোর থেকে জড়ো হন বিলপাড়ে। পূর্ব থেকেই নির্ধারিত দিনে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত সময় ধরে প্রায় এক দুই হাজার মানুষ মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত বিলে বিনামূল্যে পলো বাওয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মাছ শিকারি ও উৎসুক একাধিক জনতা বলেন, যান্ত্রিক যুগে আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম পলো দিয়ে মাছ ধরার গল্পকে। আজ এ উৎসবের মধ্য দিয়ে শৈশবকে ফিরে পেলাম।

আয়োজকদের একজন রিপন হোসেন বলেন, ‘পলো বাওয়া’ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। অনেক পুরোনো এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং চায়না জাল, কারেন্ট জালে মাছ শিকার বন্ধে সচেতনতা তৈরি করতেই আজকের এ আয়োজন।

আলমগীর হোসেন জানান আমরা আশানুরূপ মাছ পাচ্ছি , তবে উন্মুক্ত জলাশয়ে কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি দিয়ে অনেকে মাছ ধরার কারণে বিলে মাছের সংকট দেখা যাচ্ছে।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সাব্বির হোসেন বলেন আমার ধারনা মতে সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে কলারোয়ায় এই ঐতিহ্যটা এখনো বিদ্যমান আছে ১- ২ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে ।এটা অনেক ভালো লাগার বিষয়।

ভবানীপুর গ্রামের কাশেম জানান আমেরিকান বা ট্যাবলেট মাছ বেশি পাওয়া যায়। চন্দনপুর গ্রামের শাহিন জানান আমি ৪ কেজি ওজনের ব্লাড কাপ মাছ পেয়েছি। এছাড়াও বড় বড় রুই মাছ ধরা পড়ে।

আয়োজক কমিটির রিপন হোসেন আরো জানান আমরা গত কয়েক মাস ধরে কয়েকটা পলোবাওয়া হয়েছে। এখনো অনেক বিল বাকি আছে যার মধ্যে ঠেইয়ামারীর বিল, মহিষার বিল, কায়বার বিল, বায়ারডাঙ্গার বিল, রুদ্রপুর বিল,বাইকোলার বিল। তিনি আরো জানান গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া পলো বাওয়া উৎসবের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের এই আয়োজন। এ ধরনের উৎসব দেখতে মানুষের ডল নেমেছে। সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফীত ভাবে আমাদেরকে স্বাগত জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *