অনলাইনজীবনযাপনবিনোদনসদরসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

ঘটিগরম চানাচুর বিক্রি করে পরিবারের ৭ সদস্যের সংসার চালান হাফিজুল

মেহেদী হাসান শিমুল: সাতক্ষীরায় জেলা শহর ও আশেপাশে হাটবাজার বিভিন্ন রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক পরে নেচে গেয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে মানুষকে মাতিয়ে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে হাফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে। ঘটি গরম চানাচুর মুখরোচক খাবারটি অনেক ঐতিহ্যবাহি দিন দিন ঘটি গরম চানাচুর এখন বিলুপ্তির পথে।

তবে ইদানিং সাতক্ষীরা শহরে দুই একজনের দেখা মেলে। তাদের মধ্যে হাফিজুল ইসলাম বেশভূষা অঙ্গভঙ্গি অন্যতম।

ঘটি গরম চানাচুর বিক্রির বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুর গ্রামের আলোচিত ঘটিগরম চানাচুর বিক্রেতা হাফিজুল ইসলাম জানান।

আমি ইটের ভাটায় কাজ করে ও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। আমি লেখাপড়া জানি না এজন্য কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারিনা।আমি গত কয়েক বছর পূর্বে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যাই ।সেখানে পরিচিত একজনকে ঘটিগরম বিক্রি করতে দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হই এবং তার কাজে আমি সাহায্য করতাম। সেখান থেকে আমি এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমি গত একমাস ধরে ঘটিগরম চানাচুর বিক্রি করে আসছি।

চোখে সানগ্লাস, মাথায় বিভিন্ন রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি লম্বা টুপি,পরনে হরেক রঙের সিট কাপড় দিয়ে তৈরি জামা ও পায়জামা, পায়ে সু পরে বাম কাঁধে ঝুলানো টিনের গোলাকার পাত্রে চানাচুর আর ডান হাতে ঝুমুর আর পেছনে রয়েছে ব্যাগে ছোট সাউন্ড বক্সের গানের তালে তালে নেচে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমন বেশভূষা ও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে উপস্থিত মানুষদের বিনোদন দিয়ে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করে নিজ সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটান ৪০ বছর বয়সী হাফিজুল ইসলাম।

তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুর গ্রামের গ্রামের কফিল উদ্দিন সরদারের ছেলে হাফিজুল ইসলাম। বিগত কয়েকদিন ধরে সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে মানুষের মন আকৃষ্ট করে ঘটি গরম বিক্রয় করে চলেছেন তিনি।

ঘটি গরম চানাচুর বিক্রেতা হাফিজুল ইসলাম বলেন , আমার মনে দুঃখ কষ্ট থাকলেও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে বিনোদন দিয়ে মানুষের মন আকৃষ্ট করে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁধের পেছনে ব্যাগ এবং ঘটিতে করে কয়লা জ্বালিয়ে ভাজা বিক্রি করতে বের হয়। তারপর জেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে বিক্রি করি ঘটি চানাচুর।

তিনি আরো বলেন ইতি পূর্বে ইটের ভাটায় ও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম নতুন করে এই ব্যবসায় নেমেছি , সাতক্ষীরা জেলা শহরের ও বিভিন্ন হাটবাজার সহ বিভিন্ন প্রান্তে যেয়ে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালান জানিয়ে তিনি বলেন, আবাদি জমিজমা নেই বললেই চলে। স্বামী-স্ত্রী পিতা মাতা ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার সংসার। ২ টা ছেলে মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বর্তমানে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করে তাদের পড়াশোনাসহ সংসার চালাতে হচ্ছে।

ঘটি গরম চানাচুর ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকায় প্রতি পাত্রে বিক্রি করি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, স্ত্রীকে সাথে নিয়ে চিড়া, চানাচুর, জিরা, মটরশুটি, বুটের ডাল,তেঁতুল, গোটা, হলুদ, রসুন মরিচ, তেজপাতা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে তৈরি করেন ঘটি গরম। দিন শেষে এগুলো বিক্রি হয় প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে এক হাজার থেকে ১২শত টাকা। বর্তমানে ভিন্ন আঙ্গিকে ঘটিগরম চানাচুর বিক্রি করে ভালোই সাড়া পেয়েছি। তিনি ঐতিহ্যবাহী ঘটিগরম জনপ্রিয় মুখরোচক চানাচুরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আজীবন কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *