অনলাইনআইন আদালতশ্যামনগরসাতক্ষীরা জেলা

স্বীয় গোত্রের প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য প্রিয়াংকা ভাঙির’

জি এম আব্দুল কাদের, শ্যামনগর: আগুন লাগিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা মামলায় নয় দিন কারাভোগের পর বুধবার জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরেছে জঙ্গল ভাঙি ও তার ছেলে সাগরসহ গোপাল এবং নিত্যানন্দ। তবে স্বত্ত¡ দখলীয় জমি থেকে সরে না গেলে হয়রানীমুলক আরও মামলায় জড়িয়ে দেশ ছাড়া করার হুমকি পেয়েছেন দিনমজুর জঙ্গল ও তার পরিবার। বাধ্য হয়ে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিত্তশালী ও ক্ষমতাধর প্রতিবেশী দিলীপ গাইন ও তার সহযোগী রঘুনাথ খাঁ’র রোশানল থেকে মুক্তির আকুতি জানিয়েছে অসহায় পরিবারটি। সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গল ভাঙির সাথে পুত্র সাগর ভাঙি, পত্রবধু প্রিয়াংকা এবং গোপাল মন্ডল উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যে জঙ্গলভাঙি দাবি করেন ১৯৯৪ সালে তার মা পাচি বালা ভাঙির নামে ৩ বিঘা সরকারি জমি বন্দোবস্ত নেয়া হয়। তবে এলাকার সবচেয়ে ধর্নাঢ্য পরিবার হওয়ার সুযোগে তপন গাইন, দিলীপ গাইন ও কমলেশ উক্ত জমি জবর দখলে রেখে অপর একটি প্লট থেকে তাদের প্রাপ্য অংশ বুঝে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। তবে দীর্ঘদিনেও জমির দখল বুঝে না পেয়ে বাধ্য হয়ে গত ১ আগষ্ট তিনি শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানান। পরবর্তীতে কাগজপত্র পর্যারোচনা শেষে ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডের নির্দেশে ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা মাপজরিপ করে বন্দোবস্তকৃত জমিতে লাল পতাকা লাগিয়ে তাকে দখল বুঝিয়ে দেন। তবে দীর্ঘদিন জবরদখলে রাখা দিলীপ ও তার পরিবারটি এসময় জমি হস্তান্তরের জন্য কিছু সময় প্রার্থনা করেন। এসময় তারা বন্দোবস্তকৃত জমিতে পাকা ভবন নির্মানের কাজ শুরু করলে গত ১৯ অক্টোবর জঙ্গল ও তার পরিবার নেট দিয়ে বন্দোবস্তকৃত জমি দখলে নেন। সে ঘটনায় ক্ষুব্ধ দিলীপ ও প্রধান সহযোগী রঘুনাথ ষসড়যন্ত্র করে রাত দেড়টার দিকে রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে জঙ্গল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

জঙ্গল অভিযোগ করে জানান বুধবার জামিন নিয়ে বাড়িতে ফিরলেও বৃহস্পতিবার থেকে তাকেসহ পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়া হচ্ছে নুতন নুতন মালা জড়ানোর। সাতক্ষীরায় বসবাসকারী জনৈক রঘুনাথ খাঁ বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে দিলীপের পক্ষ নিয়ে তাদেরকে ঘায়েল করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রিয়াংকা লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন রঘুনাথ খাঁ পিছনে থেকে সব কলকাঠি নাড়ছেন। বিস্ফোরক এক মন্তব্যে তিনি দাবি করেন দিলীপ-রঘু ষড়যন্ত্র করে তাদের বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এসময় তিনি আরও জানান দিলীপের থেকে মোটা অংকের টাকা গ্রহন করে রঘুনাথ সনাতন ধর্মীয় নেতাদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে তার স্বামী-শ^শুরসহ পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। ‘একদিন বনে না গেলি সংসার চলে না-দাবি করে এ গৃহবধু আরও জানান দিলীপ-রঘুনাথ চক্রের ষড়যন্ত্র সফল হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদেরকে ভারতে যেয়ে পালাতে হবে।

তিনি দাবি করেন রঘুর বাড়ি সাতক্ষীরা হলেও আগুন দিয়ে রান্নাঘর পোড়ানোর সময় (১৩ অক্টোবর রাত দেড়টা) রঘুনাথ দিলীপের বাড়িতে অবস্থান করছিল। জঙ্গলরা নিজেদের জায়গা ঘিরে নেয়ায় রঘুর পরামর্শে দিলীপ নিজের রান্না ঘর পুড়িয়ে তাদেরকে হয়রানী করতে মিথ্যা মামলা করে আর্থিক ক্ষতি করেছে। ইতিপুর্বে রঘুনাথ পানখালীর প্রমথ মহালদারের পরিবারকে একইভাবে সর্বশান্ত করেছে বলেও দাবি করেন এ গৃহবধু।

সংবাদ সংম্মেলনে নিজের বক্তব্যে সাগর ভাঙি জানান বন্দোবস্তকৃত জমির বাইরে তাদের কোন জমি নেই। দিলীপ-রঘু তাদের শেষ সম্বল জমি থেকে উচ্ছেদে উঠেপড়ে লেগেছে। জামনি নিয়ে বাড়িতে ফেরার পর জমির দাবি ছেড়ে না দিলে নানাভাবে হয়রানীসহ জীবনে মেরে ফেলারও ভয় দেখাচ্ছে। দিলীপ ও রঘুনাথের কবল থেকে নিজের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসকসহ পুলিশ সুপারের আশিু হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রঘুনাথের সাথে বার বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে দিলীপ গাইন জানান নিজের ঘরে তিনি আগুন দেননি। বরং জঙ্গলরা আগুন লাগায়। নিকটাত্বীয় হওয়ায় রঘু সেদিন তার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল বলেও তিনি দাবি করেন। একই সাথে হুমকি ধমকী কিংবা দেশ ছাড়া করার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ জানান দিলীপ ও জঙ্গলের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে উভয় পক্ষ মামলা করেছেন। তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *