কালিগঞ্জবিনোদনসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলাসাহিত্য

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সকল কার্যক্রম স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সকল কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা জেলা কালচারাল অফিসার ফাইজা হোসেন অন্বেষা।

তিনি বলেন, কালিগঞ্জের শিশুরা সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে একটি প্রজন্ম পিছিয়ে পড়েছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাতক্ষীরায় আমি প্রথমবার স্থায়ীভাবে কালচারাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছাড়া নতুন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব নয়। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কালিগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রায় দুই যুগ ধরে স্থবির অবস্থায় রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক অবহেলা, জবাবদিহিতার অভাব ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে জেলা কালচারাল অফিসার বলেন, “যারা স্থানীয় পর্যায়ে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যনির্বাহী/অ্যাডহক কমিটি বাতিলের বিষয়ে এবং স্বারক নম্বর ৪৩.২০.০০০০.০১২.৩৬.০০১.২৪.৬৭ বহাল থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, “নতুন কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত একই নির্দেশনা বহাল থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মণ্ডল বলেন, আমি এখনো কোনো পরিপত্র পাইনি। জেলা কালচারাল অফিসারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা জানাবো।

এদিকে কালিগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও আইনজীবী এ্যাডভোকেট জাফর উল্যাহ ইব্রাহিম বলেন, আমরা দুই যুগ আগে মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সদস্য হয়েছিলাম। এখন এটি শুধু কাগজে-কলমে আছে, বাস্তবে নেই।

একাডেমির সাবেক সদস্য ও উদিচি শিল্পগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক শান্তি চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের মধ্যে কেউ নিয়মিত সদস্য ফি বা বাৎসরিক চাঁদা দেয়নি। কেউ আজীবন সদস্য হয়েছেন কিনা জানি না। কেউ বাৎসরিক চাঁদা না দিলে আজীবন সদস্য হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রতি বছর জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বাজেট বরাদ্দ এলেও সেই অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাবেক সঙ্গীত শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কোন টাকা কোন খাতে ব্যয় হয় আমি জানি না।

দুই যুগ ধরে অচল এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে একাডেমির নাম ব্যবহার করে স্থানীয় ইটভাটা, ক্লিনিক ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে অনুষ্ঠানের নামে চাঁদা আদায় করা হয়। এমনকি প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে ভয় দেখানোও নাকি নিয়মিত ঘটনা।

কালিগঞ্জের কৃতি সন্তান ও সাহিত্যিক অধ্যাপক গাজী আজিজুর রহমান বলেন, কে কী বললো তা মুখ্য নয়, আসল বিষয় হলো কালিগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। কমিটি থাকলেও যদি সাংস্কৃতিক চর্চা না হয়, সেটি বিস্ময়কর। একটি প্রজন্ম সাংস্কৃতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। মোমেন, আব্দুল্লাহ, জুলুর মতো শিল্পী আজ আর তৈরি হচ্ছে না। একাডেমি সচল হলে শিশুরা আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *