সুন্দরবনে কোস্ট গার্ডের অভিযানে রাঙ্গা বাহিনীর দুর্ধর্ষ ডাকাত নজরুল শেখ আটক
স্টাফ রিপোর্টার: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ সুন্দরবন আবারও আলোচনায়- কারণ, এখানেই সক্রিয় ছিল দীর্ঘদিন ধরে ত্রাস সৃষ্টিকারী কুখ্যাত রাঙ্গা বাহিনী। গত কয়েক মাসে একের পর এক ডাকাতি, জেলে অপহরণ, এবং চাঁদাবাজির ঘটনায় এ বাহিনী স্থানীয়দের মাঝে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। তবে কোস্ট গার্ডের ধারাবাহিক অভিযানে অবশেষে ধরা পড়েছে এই বাহিনীর প্রধান নজরুল শেখ (৪৮)।
কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা যায়, ২৬ অক্টোবর রবিবার ভোরে সুন্দরবনের শিবসা নদী সংলগ্ন কালাবগি এলাকায় রাঙ্গা বাহিনীর অবস্থানের খবর পায় কোস্ট গার্ডের বেইস মোংলার একটি বিশেষ টিম। ভোর ৬টার দিকে অভিযান শুরু হলে, কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা বনের ভেতর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে দ্রুত ধাওয়া চালিয়ে বাহিনীর প্রধান নজরুল শেখকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে দুটি একনলা বন্দুক এবং ৬ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, রাঙ্গা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, অপহরণ ও ডাকাতি চালাচ্ছিল। আটক নজরুল শেখ এ বাহিনীর মূল হোতা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রাঙ্গা বাহিনী মূলত বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলে সক্রিয় ছিল। তারা সাধারণ জেলেদের নৌকা ও মাছ ধরার জাল জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত। কেউ চাঁদা না দিলে অপহরণ কিংবা নির্যাতনের শিকার হতো। গত ৩১ জুলাই বাহিনীটি সুন্দরবনের জঙ্গলবাড়ি ও বনবিবি রিসোর্টে চাঁদা দাবি করে লিখিত চিঠি পাঠায়। এ ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর আরও ঘন হয়।
এর আগে, ১২ সেপ্টেম্বর একই বাহিনীর দুই সদস্যকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক করা হয় এবং চারজন জেলেকে উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড।
সুন্দরবন একসময় ছিল দস্যুদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ‘রাঙ্গা’, ‘সাগর’, ‘রবিন’, ‘আলমগীর’, ‘বাহার’- এমন বহু বাহিনী বছরের পর বছর নদীপথে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। ২০১৬ সালে সরকার “সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণা” করলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পুরনো সদস্য নতুন নামে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাসে সুন্দরবনের জলদস্যু দমন অভিযানে নতুন প্রযুক্তি, ড্রোন নজরদারি ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে তথ্যের নির্ভুলতা বেড়েছে এবং গোপন আস্তানা চিহ্নিত করা সহজ হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু অস্ত্র উদ্ধার নয়, বরং সুন্দরবনকে স্থায়ীভাবে দস্যুমুক্ত করা। জনগণের সহযোগিতা ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়েই এটি সম্ভব হবে।”
আটক ডাকাত নজরুল শেখকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর মোংলা থানায় হস্তান্তর করা হবে। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্র, ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। জব্দকৃত অস্ত্র ও কার্তুজ আদালতের মাধ্যমে ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ধারাবাহিক অভিযানে সুন্দরবনে দস্যু কার্যক্রম অনেকটা কমে এসেছে। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শুধু অভিযান নয়, বরং জেলেদের বিকল্প জীবিকা, বন ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন প্রয়োজন।

